২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
নারী সংহতি সমাবেশে নেতৃবৃন্দ

‘বর্তমানে নিজের ইচ্ছায় ভোট দিলে ধর্ষিত হতে হয়’

প্রতীকী ছবি - সংগৃহীত

নারী সংহতি সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেছেন, আমরা এমন একটা সমাজে আছি যেখানে নিজের ইচ্ছায় ভোট দিলে ধর্ষিত হতে হয়। যেখানে শ্রমিক তার মজুরি দাবি করলে তাকে সুমনের মতো গুলি খেয়ে মরতে হয়। যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে দাঁড়ালে আগুনে ঝলসে প্রাণ দিতে হয়। এই সমাজে চাটুকার, দাস মনোবৃত্তির না হলে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে গেছে। এমন সমাজ ও রাজনীতির মধ্যেও আমরা নুসরাতসহ সারাদেশের নারীর নিরাপত্তা, মানুষ হিসেবে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য দাঁড়িয়েছি।

ফেনীর সোনাগাজীর মাদরাসা শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের পর পুড়িয়ে হত্যার প্রতিবাদে শুক্রবার বিকেলে প্রতিবাদ ও সংহতি সমাবেশে নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন। শাহবাগে নুসরাতের ছবি হাতে ‘আমরা সবাই নুসরাত, নুসরাত হত্যার বিচার চাই’ এই স্লোগানে নারী সংহতি এই সংহতি সমাবেশের আয়োজন করে।

প্রতিবাদ ও সংহতি সমাবেশে বক্তব্য দেন নারীপক্ষের শিরিন হক, গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী, শিল্পী কফিল আহমেদ, অরূপ রাহী, আলোকচিত্রী সাদিয়া রূপা। সমাবেশে নারী সংহতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অপরাজিতা চন্দ, নারায়ণগঞ্জ জেলার সংগঠক পপি রানী সরকার, নারী সংহতির সদস্য রেক্সোনা পারভীন, মান্দাইল জেলার সংগঠক লিপি বেগম, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি গোলাম মোস্তফা বক্তব্য দেন।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন নারী সংহতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তাসলিমা আখতার। সঞ্চালনা করেন নারী সংহতির সাংগঠনিক সম্পাদক জান্নাতুল মরিয়ম।

সংহতিতে বক্তারা বলেন, নুসরাতকে হারানোর বেদনা যেমন বোধ করছি একইসঙ্গে তার ওপর যে বর্বর অত্যাচার হয়েছে তার প্রতিবাদ জানাই। নুসরাত হত্যায় যুক্ত সোনাগাজী মাদরাসার ছাত্রলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন, কর্মী নুরুদ্দিন, নূর হোসেন এবং মাদরাসার গভর্নিংবডির সদস্য রুহুল আমিন এবং সেখানকার কাউন্সিলর মকসুদ আলমসহ আরো অনেকে।

এরা সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত। এখানে যারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং আশ্রয়ে এই নির্যাতকরা টিকে আছে। মুখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে ক্ষমতাসীনরা ধর্ষক, খুনি-নির্যাতক, সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে।

এখন মানুষ বেডরুম থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্রে, গণপরিবহনে নির্যাতনের শিকার হন। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তার দাবি তুলেছে, নিরাপদ সড়কের দাবি তুলেছে একইসঙ্গে নিরাপদ বাংলাদেশের দাবি তুলেছে।

বক্তারা বলেন, নুসরাত মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লড়াই করেছে। নুসরাতের পরিবার থানায় মামলা করেছে। নুসরাতের ওপর আগেও একবার হামলার ঘটনা ঘটেছে। সে সময় তার বিচার হয়নি। থানার ওসিও এবার নুসরাতের নিপীড়কের পক্ষ নেয়। নুসরাতকে মামলা তুলে নিতে সোনাগাজী মাদরাসার অধ্যক্ষের সহযোগীরা হুমকি দেয়।

হুমকিতেও যখন নুসরাতের মুখ বন্ধ করা সম্ভব হয়নি তখন তার গায়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয়। সোনাগাজীতে ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়ায় অধ্যক্ষ সিরাজউদদৌলা এই ধরনের ঘটনা আগেও ঘটিয়েছেন।

সংহতি বক্তব্যে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে নুসরাতের মতো আরো যত নারী ধর্ষিত হচ্ছে, খুন ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন সে সবের কোনো বিচার হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, কারখানার শ্রমিকেরা নিপীড়ক-নির্যাতক-ধর্ষকের বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন। ধর্ষক-নিপীড়কদের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে। কারণ প্রতিবাদ করা ছাড়া বেঁচে থাকার আর কোনো উপায় নাই। তা যদি না পারি তবে নুসরাতের মতো ঘটনা আরো ঘটতে থাকবে।

বক্তারা বলেন, যেই সরকার একটি নির্বাচন করতে পারে না, অগণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখে, জনগণকে মুখ খুলতে দেয় না, মত প্রকাশ করতে দেয় না, শ্রমিকের কথা বলতে দেয় না- সেই সরকার নিয়ে আমাদের জনগণকে প্রশ্ন করতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ-কারখানার শ্রমিক-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এক হতে হবে। ক্ষমতার কাছে ধর্ণা না দিয়ে আমাদের লড়াই করতে হবে। আমাদের সম্মান ও আত্মমর্যাদা রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

সমাবেশ থেকে সব ধরনের নিপীড়নের বিরুদ্ধে নারী সংহতিসহ বাংলাদেশের সকল শ্রেণি পেশার নারী ও সব প্রগতিশীল সংগঠনগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানায় নারী সংহতি। সমাবেশ শেষে শাহবাগ থেকে মিছিল শুরু হয়ে শহীদ মিলন চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।


আরো সংবাদ



premium cement