অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসেন তিনি। প্রায় দুই বছর তিনি নারায়ণগঞ্জের কারাবন্দিদের বিনামূল্যে হাতেকলমে প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী করে আসছেন।
সেলাই-কাটিং, ব্লক বাটিক, অ্যামব্রুস, স্প্রে, সিরামিক, ডায়মন্ড সিরামিক, হ্যান্ড অ্যামব্রয়ডারি, পুঁথির তৈরি বিভিন্ন শোপিস ব্যাগ, বনসাই, পটারি, ঝর্না, গ্লাস পেইন্ট, পাটের কাজ, কাপড়ের ফুল, ওয়ালমেট, বিউটিফিকেশন, চামড়ার দ্রব্যাদিসহ ৩২টি বিষয়ের উপর প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন তিনি।
তিনি সাবিরা সুলতানা নীলা। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে নারী উদ্যোক্তার জাতীয় পুরস্কার, জয়িতা পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা পদক। তবে তার এ পথচলা গত ২১ বছর ধরে।
আজ ৮ মার্চ নারী দিবসে সাবিরা সুলতানার কর্মকে স্যালুট করছে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে স্বাবলম্বী হওয়া অনেকে।
শুধুমাত্র সমাজের অবহেলিত ও সুবিধাবঞ্চিতদেরই নয়, কারাগারের বন্দী অপরাধীদেরও বিভিন্ন বিষয়ে হাতেকলমে প্রশিক্ষণ দিয়ে আত্মকর্মসংস্থানের লক্ষ্যে তাদেরকে প্রতিষ্ঠিত করে চলেছেন এই নারী, যেনো আইনের দ- ভোগ শেষে কারাগারের বাইরের জীবনে গিয়ে তারা আর অপরাধ জগতে না জড়ায়, নিজেরা এসব কাজ করে অর্থ উপার্জন করতে পারে।
শুরুটা ১৯৯৮ সালে ‘রং মেলা বুটিকস’ দিয়ে হলেও সাবিরা সুলতানা নীলা ২০১৫ সালের ২ জুলাই থেকে ‘রং মেলা নারী কল্যাণ সংস্থা’ প্রতিষ্ঠা করেন। যেখানে বর্তমানে প্রায় অর্ধশত নারী কর্মরত রয়েছেন। এক সময়ের শখের বসে শূন্যহাতে সেলাই মেশিন দিয়ে পথচলা শুরু করা নীলা আজ একজন সফল উদ্যোক্তা।
বাবা মো: আলম ও মা রেহেনা বেগমের সংসারে বড় কন্যাসন্তান নীলা।
১৯৯৮ সালে নারায়ণগঞ্জের উত্তর চাষাঢ়া ৫১নং বাড়িতে নিজঘরেই গড়ে তুলেন ‘রং মেলা বুটিকস’ নামে একটি আত্মকর্মসংস্থানমূলক প্রতিষ্ঠান। শুরু করেন ব্যবসায়। প্রথমদিকে সামান্য আয় থাকলেও আত্মপ্রত্যয়ে বিভোর নীলা সমাজের অবহেলিত নারীদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার প্রচেষ্টায় থাকেন সব সময়।
নিজ সংস্থার বাইরে বর্তমানে তিনি কারুকুঞ্জ সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের একজন প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে বিগত ২ বছর যাবত কারাবন্দি নারী-পুরুষদের বিনামূল্যে এসব বিষয়ের উপর বিভিন্ন দিয়ে চলেছেন। যেনো তারা পারিবারিক জীবনে ফিরে গিয়ে পরিবার ও সমাজে অনবদ্য ভূমিকা রাখতে পারে।
সাবিরা সুলতানা নীলা বলেন, ‘প্রায় দেড়শত কারাবন্দিকে তিনি বিভিন্ন বিষয়ে হাতেকলমে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৬জনই নারী। এদের এক সময় বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্ত হয়ে কারাগারে ঠাঁই হয়েছে। মূল ¯্রােতের বাইরে যাতে এরা না যায়, এমনকি নিজের পায়ে নিজে দাড়াতে পারে সেজন্য আমি বিনামূল্যে তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি।’
‘নারী উদ্যোক্ত হিসেবে জাতীয় পুরস্কার পাওয়াই তার জীবনে শ্রেষ্ঠ অর্জন। প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার নেয়ার সে দিনের স্মৃতি তাকে আজো উদ্যমী করে তোলে,’ বলেন নীলা।
৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষে নীলা বলেন, ‘আমি মনে করি আর্থিকভাবে আত্মনির্ভরশীল একজন নারীর সামাজিক মর্যাদা এবং শুধুমাত্র ঘরের কাজ করা নারীর সামাজিক মর্যাদার মধ্যে বেশ পার্থক্য রয়েছে। আর তাই প্রতিটা নারীরই আত্মনির্ভরশীল হওয়া উচিত।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা