২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আগুন দেয়া স্বামীকে জড়িয়ে ধরেই বাঁচতে চেয়েছিলেন শিউলী

নারী নির্যাতন
শহীদুল ও শিউলি - ছবি: সংগৃহীত

গাজীপুরের শ্রীপুরে দাম্পত্য কলহের জেরে গায়ে কেরোসিন ঢেলে স্বামীর দেয়া আগুনে দ্বগ্ধ এক নারী গার্মেন্টস কর্মী মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে।

ঘটনার সময় শরীরের আগুন নিয়ে স্বামীকে জড়িয়ে ধরে আত্মরক্ষার চেষ্টা করলে তার স্বামীও দ্বগ্ধ হয়।

নিহতের নাম শিউলী আক্তার (৩৫)। তিনি ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার ডাকাতিয়া গ্রামের শুক্কুর আলীর কন্যা।

শ্রীপুর থানার এসআই আব্দুল মালেক ও নিহতের বাবা শুক্কুর আলী জানান, প্রায় একযুগ আগে বরিশাল জেলার বানারীপাড়া উপজেলার সরূপকাঠি উপজেলার আব্দুল মোতালেবের ছেলে শহীদুল ইসলামকে ভালবেসে বিয়ে করে শিউলী আক্তার। এটি উভয়ের দ্বিতীয় বিয়ে। বিয়ের পর থেকে নানা বিষয়াদি নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া কলহ চলে আসছিল। প্রায়ই স্বামী তাকে মারধরও করত।

গত কিছুদিন ধরে শিউলী শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের মুলাইদ গ্রামের আব্দুর রশীদের বাড়িতে ভাড়া বাসায় থেকে স্থানীয় ছাতিরবাজার এলাকার দুলাল ব্রাদার্স লিমিটেড (ডিবিএল) শিল্প গ্রুপের পোশাক কারখানায় শ্রমিকের চাকরি করত। তার স্বামী প্রথম স্ত্রীকে নিয়ে গাজীপুর মহানগরের কোনাবাড়ী এলাকার ভাড়া বাসায় থেকে এলাকায় গাড়ি চালায়। প্রতি মাসে কারখানা থেকে বেতন পেলে শিউলীর কাছ থেকে প্রায় সব টাকা নিয়ে যেত শহীদুল।

সোমবার রাতেও কারখানা থেকে পাওয়া বেতন স্বামী কেড়ে নিতে চাইলে উভয়ের মধ্যে ঝগড়া হয়। মধ্যরাতে শিউলী ঘুমিয়ে পড়লে শহীদুল প্রতিবেশী কয়েক ভাড়াটিয়ার ঘরের দরজার বাইরে থেকে সিটকিনি আটকিয়ে দেয়। পরে সে ঘরে ঘুমন্ত শিউলীর গায়ে কোরোসিন ঢেলে অগ্নিসংযোগ করে।

এ সময় শরীরের জ্বলন্ত আগুন নিয়ে শিউলী জেগে উঠে ডাক চিৎকার শুরু করে। ঘটনার সময় শহীদুল পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে শিউলী আগুন নিয়ে স্বামীকে জড়িয়ে ধরে আত্মরক্ষার চেষ্টা করে।

টের পেয়ে অন্য প্রতিবেশীরা এগিয়ে ওই কক্ষ থেকে দ্বগ্ধ শিউলীকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। কিন্তু ততক্ষণে শিউলীর শরীরের অধিকাংশ ঝলসে যায় এবং শহীদুলেরও দু’হাতসহ শরীরের কিছু অংশ পুড়ে যায়।

হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার বিকেলে শিউলী মারা যায়। তার স্বামী পুলিশের নজরদারীতে একই ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

পুলিশের ওই কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শহীদুল তার স্ত্রীর শরীরে আগুন দেয়ার কথা স্বীকার করেছে। এ ব্যাপারে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

আরো পড়ুন :
কমলগঞ্জে যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে নির্যাতন
কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) সংবাদদাতা, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮
কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নের টিলাগড় গ্রামে হামিদ মিয়া যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে। স্বামীর অকথ্য নির্যাতনে স্ত্রীর বাম চোখে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক আঘাত প্রাপ্ত হলে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হামিদ মিয়া তার নিজ বাড়িতে নির্যাতনের এ ঘটনা চালায়। এ ঘটনায় হামিদ মিয়ার শ্বাশুড়ী বাদি হয়ে কমলগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, টিলাগড় গ্রামের রইছ মিয়ার ছেলে হামিদ মিয়ার সাথে দুই বৎসব পূর্বে একই গ্রামের মন্নান মিয়ার কন্যা বাবলী আক্তার (২২) বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিবাহের পর হতে যৌতুক নিয়ে নানা সময়ে হামিদ মিয়া ও তার মা হাসনা বেগম বাবলী আক্তারকে নির্যাতন করে আসছে। নির্যাতিত বাবলীর মা রিমা বেগম বলেন, যৌতুকের জন্য মেয়ের জামাই নানা সময়ে নির্যাতন করেছে। তাই মেয়ের শান্তির কথা চিন্তা করে মেয়ের জামাইকে বিভিন্ন সময়ে দেড় লক্ষ টাকা প্রদান করেছি। এরপরও নির্যাতন থেমে থাকেনি। ঘটনার দিন হামিদ মিয়া ও তার মা হাসনা বেগম যৌতুকের বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে বাবলী আক্তারকে অকথ্য নির্যাতন চালায়। তাদের নির্যাতনে বাবলীর বাম চোখ, হাত, পা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক জখম হয়। খবর পেয়ে রিমা বেগম আশপাশ এলাকার লোকদের সহায়তায় মেয়েকে দ্রুত উদ্ধার করে প্রথমে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। এ ঘটনায় শ্বাশুড়ী রিমা বেগম বাদি হয়ে হামিদ মিয়া সহ তিনজনকে অভিযুক্ত করে শুক্রবার রাতে কমলগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

অভিযোগ বিষয়ে যৌতুকের বিষয়টি অস্বীকার করে হামিদ মিয়া বলেন, আমি বিদেশ যাওয়ার জন্য কিছু টাকা সংগ্রহ করে রাখি। এই টাকা নিয়ে কথা কাটাকাটির সময়ে পারিবারিক ঝগড়াঝাটি হয়। এ সময়ে বাবলী রাগাম্বিত হয়ে আমাকে মারতে চাইলে আমি বাধা প্রদান করি। তবে তাকে কোন নির্যাতন করা হয়নি।

অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা শমশেরনগর ফাঁড়ির এসআই আবু সায়েম এর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে শমশেরনগর ফাঁড়ির ইনচার্জ অরুপ কুমার চৌধুরী বলেন, বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement