২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ব্রেক্সিট কার্যকরের কাছাকাছি জনসন

-

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে ব্রিটেনের বিচ্ছেদ (ব্রেক্সিট) কার্যকর করার দাবি নিয়ে সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে বিপুল ব্যবধানে জয় ছিনিয়ে নেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত গণভোট ব্রেক্সিটের পক্ষে যাওয়ার পর থেকেই টালমাটাল অবস্থায় ব্রিটেন। গত বছরও ব্রিটেনের রাজনীতিতে ব্রেক্সিট ছিল আলোচনার মূল বিষয়।
‘ব্রিটেন এক্সিট’ নামটিকে সংক্ষেপে ডাকা হচ্ছে ব্রেক্সিট নামে, যা হচ্ছে ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া। ২০১৯ সালের ২৯ মার্চ ব্রেক্সিট কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পার্লামেন্টের বিরোধিতার কারণে তা এখনো কার্যকর হয়নি। তিন দফা পিছিয়ে বিচ্ছেদের নতুন তারিখ আসছে নতুন বছরের ৩১ জানুয়ারি।
নতুন বছরে বিভক্ত জাতিকে আবার ঐক্যবদ্ধ করার ঘোষণা দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। ‘চমৎকার একটি বছর ও একটি উল্লেখযোগ্য দশক’ ব্রিটিশরা পাবে বলে জানান তিনি। মাত্র দুই সপ্তাহ আগে অনুষ্ঠিত পার্লামেন্ট নির্বাচনে ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পর উৎফুল্ল জনসন নতুন বছরের বার্তায় এ কথা বলেন।
নতুন বছরের শুরুতে বরিস জানান, তার প্রথম কাজটি হলো ইইউ থেকে বের হয়ে ব্রেক্সিট নিশ্চিত করা। ব্রিটেন ইইউ ছেড়ে যাওয়ার গণভোটের তিন বছরেরও বেশি সময় পরে ভোটের মাধ্যমে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির পথ খুলে যায়।
তিনি বলেন, আমাদের মধ্যকার বিভক্তি-বিভাজন-অনৈক্য, বর্ণবাদী চেতনা ও অনিশ্চয়তার দিকে থাকা অধ্যায়টি বদলে দেবো, এখানকার জনজীবনে যেসব প্রাধান্য পেয়েছে এবং দীর্ঘকাল ধরে আমাদের পেছনে টেনে ধরে রেখেছে।
এখন জনগণকে অগ্রাধিকার প্রদানের জন্য জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত আমাদের একটি নতুন পার্লামেন্ট রয়েছে, যারা গণভোটকে চূড়ান্তÍভাবে সম্মান করবে এবং ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন করবে। সুতরাং আমরা এই মাস শেষ হওয়ার আগেই ব্রেক্সিট পুরোপুরি সম্পন্ন করব।
ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে উত্থাপিত বিল ব্রিটিশ পার্লামেন্ট পাস হওয়ায় ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের পথে আরো এক ধাপ এগিয়েছে ব্রিটেন। গত ২০ ডিসেম্বর দেশটির প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন পার্লামেন্টের নি¤œকক্ষ হাউজ অব কমন্সে ‘উইথড্রয়াল অ্যাগ্রিমেন্ট বিলটি উত্থাপনের পর ৩৫৮-২৩৪ ভোটে তা পাস হয়। এই বিলে বিরোধী দলের অনেক আইনপ্রণেতাও সমর্থন দিয়েছেন। বিলটি পাস হওয়ায় ২০২০ সালের ৩১ জানুয়ারির মধ্যেই ব্রেক্সিট কার্যকরের পথ সুগম হলো।
বিরোধী লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিনসহ অন্যরা বিলটির বিরোধিতা করেন। পার্লামেন্টে এই বিলের বিপক্ষে পড়ে ২৩৪টি ভোট। তবে এই পার্লামেন্টে বরিসের কনজারভেটিভ পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় বিল পাস আটকে থাকেনি। নি¤œকক্ষে বিলটি পাসের পর এর খুঁটিনাটি নিয়ে আরো বিতর্ক হবে। জানুয়ারির প্রথম দিকেই বিলটি উচ্চকক্ষ হাউজ অব লর্ডসে পাস হলে আইনে পরিণত হবে।
ব্রেক্সিট ইস্যু নিয়ে বহুদিন ধরে ভুগছে ব্রিটিশ রাজনীতি। ২০১৬ সালে ব্রেক্সিটের পক্ষে গণভোটের পরপরই পদত্যাগ করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। তারপর ক্ষমতাসীন দলের নেতৃত্বে ও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনে আসেন থেরেসা মে। কিন্তু পার্লামেন্ট তার প্রস্তাবিত ব্রেক্সিট চুক্তিতে সম্মত না হওয়ায় তিনিও পদত্যাগ করেন।
ক্ষমতায় থাকাকালীন পরপর দুবার ব্রেক্সিট কার্যকরের সময়সীমা পেছান তিনি। থেরেসার পর প্রধানমন্ত্রী ও কনজারভেটিভ দলের নেতা নির্বাচিত হন বরিস জনসন। ক্ষমতায় এসেই ৩১ অক্টোবরের মধ্যে ব্রেক্সিট সম্পাদনের প্রত্যয় ঘোষণা করেন। হোক তা চুক্তিসহ বা চুক্তি ছাড়া। এরপর বিচ্ছেদ কার্যকরে ১৭ অক্টোবর ইইউর সাথে নতুন একটি চুক্তি সম্পাদন করেন বরিস। পার্লামেন্ট তার সেই চুক্তিতে প্রাথমিক সমর্থন দিলেও ৩১ অক্টোবরের আগে চুক্তিটি পাসের বিরোধিতা করে। বাধ্য হয়ে বরিস ব্রেক্সিট পেছানোর ঘোষণা দেন। পরে জাতীয় নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে ফিরে আসেন জনসন। ঘোষণা হয় ২০২০ সালের ৩১ জানুয়ারি বিচ্ছেদের নতুন তারিখ।


আরো সংবাদ



premium cement