১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪২৯, ০৮ রমজান ১৪৪৫
`

চীনের সাথেও কি নতুন হিসাবে যাবে ভারত?

-

যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ঘনিষ্ঠ মিত্রতার বন্ধনে আবদ্ধ হয়েও রাশিয়ার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণে অস্ত্র কেনার চুক্তি করেছে ভারত। এস-৪০০ বিমানবিধ্বংসী পেণাস্ত্র কেনাসহ রাশিয়ার সাথে সম্প্রতি যেসব চুক্তি ভারত করেছে, তাতে করে আগামী কয়েক দশক পর্যন্ত মস্কো-দিল্লি সামরিক সম্পর্ক অটুট থাকবে।
এই চুক্তিতে নাখোশ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে ভারতের বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপ করবে কি না তা এখনো নিশ্চিত নয়। রাশিয়ার সাথে এই চুক্তির ফলে আবার লাইমলাইটে এসেছে চীন। রাশিয়ার সাথে চীনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এই সূত্র ধরে কি বেইজিং-দিল্লি সম্পর্কে উষ্ণতার ছোঁয়া পাবে?
বিশ্লেষকদের একটি অংশের মতে, দোকলামের এক বছর পর ভারত সম্ভবত বন্ধুপ্রতিম বেইজিংকে কামনা করছে। ভারতের নরেন্দ্র মোদি ও চীনের শি জিনপিংয়ের মধ্যে গত এপ্রিল থেকে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। এপ্রিলে ওহানে ‘অনানুষ্ঠানিক’ শীর্ষ বৈঠকের পর তারা জুনে কিংদাওতে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (এসসিও) ও জুলাইয়ে জোহানেসবার্গের ব্রিকস শীর্ষ বৈঠকের ফাঁকে মিলিত হন।
ওহান শীর্ষ বৈঠকে মোদি ও শি আফগানিস্তানের মতো দেশে চীন-ভারত প্লাস সহযোগিতার মডেলে রাজি হন। এরপর ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিজয় গোখলে সামর্থ্য-বিকাশ প্রকল্পের রূপরেখা প্রণয়ন করেন। জুনে কিংদাওয়ে এসসিও শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে তিনি তা ঘোষণা করেন।
গত ১৫ অক্টোব ভারত ও চীন যৌথভাবে নয়াদিল্লিতে আফগান কূটনীতিকদের প্রশিণ কর্মসূচি শুরু করে। এটি ছিল একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। ভারতে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূতের বরাত দিয়ে বলা হয়, দুই দেশের উচিত হবে ইরান, নেপাল ও মিয়ানমারের মতো অন্য প্রতিবেশীদের সহযোগিতা করা। ভারতের ফরেন সার্ভিস ইনস্টিটিউটে ১০ আফগান কর্মকর্তা প্রশিণ নিচ্ছেন। তারা প্রশিণ কর্মসূচির দ্বিতীয় পর্যায় সম্পন্ন করার জন্য চীন যাবেন।
প্রশিণ কর্মসূচিতে কূটনীতিকদের পাঠালেও আফগান নেতৃত্ব ভারতের প্রতি অসন্তুষ্ট বলে খবর পাওয়া গেছে। চীনের সাথে হাত মেলানোর কারণেই নাকি ভারতের প্রতি ুব্ধ হয়েছে আফগানিস্তান। ভারত এখন চীনের অনুরোধে পাকিস্তানের উদ্বেগ দূর করতে ছোট ছোট সামর্থ্য বিকাশমূলক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
কেবল আফগানিস্তানেই চীনের উদ্বেগ হ্রাস করার চেষ্টা করছে না ভারত। দুই দেশ ২২ অক্টোবর একটি দ্বিপীয় অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সহযোগিতা চুক্তিও করেছে। চীনের জননিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী জো কেজাই ভারত সফরকালে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়, বিনিময় কর্মসূচি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত ওই চুক্তি করে।
কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, নিরাপত্তা সহযোগিতা চুক্তির রেশ ধরে পরস্পরের দেশে আটকে পড়া বন্দীদের বিনিময়ও ঘটতে পারে। বর্তমানে চীনা কারাগারগুলোতে ১০ জনের মতো ভারতীয় বন্দী রয়েছে। ভারতের কারাগারগুলোতেও সমসংখ্যক চীনা বন্দী রয়েছে। আগামী ডিসেম্বরে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ির ভারত সফর করার কথা রয়েছে। দুই দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক বাড়ানোর জন্য মোদি ও শি দোকলাম-পরবর্তী যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তার আলোকেই এই সফরটি হবে।
নয়াদিল্লি-বেইজিং সম্পর্কের আরেকটি দিকও আছে। ভারত কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কে অবনতি ঘটায়নি। ভারত-জাপান সামুদ্রিক সহযোগিতা জোরদারের ফলে মহড়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে গত মাসে ২+২ সংলাপ হয়েছে, নিরাপত্তাবিষয়ক সিওএমসিএএসএ চুক্তিও হয়েছে। ভারত-অস্ট্রেলিয়া সম্পর্কও আবার চাঙা হচ্ছে। জাপান-অস্ট্রেলিয়া-যুক্তরাষ্ট্র-ভারত মিলে চীনকে সংযত করার কর্মসূচি থেকে সরে যায়নি। অন্য দিকে চীনও ভারতের পরিমণ্ডলে তার প্রভাব বাড়ানোর কাজ থেকে বিরত থাকছে না। উভয় দেশই ভারত মহাসাগরে সামরিক শক্তি বাড়াচ্ছে, সীমান্তে নিজ নিজ অবস্থান মজবুত করে যাচ্ছে।
অন্য দিকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন প্রদর্শন করে রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ বিমানবিধ্বংসী পেণাস্ত্র কেনার চুক্তি করেছে ভারত। মার্কিন অবরোধের হুমকি সত্ত্বেও নভেম্বর থেকে ইরানের কাছ থেকে আরো তেল কেনার পরিকল্পনাও করছে ভারত। ভারত এখন কৌশলগত শক্ত করে বাঁধা দড়ির ওপর দিয়ে হাঁটার ঝুঁকি কতটুকু বজায় রাখতে পারে, তাই দেখার বিষয়। আবার যুক্তরাষ্ট্রের সংরণবাদ মোকাবেলা করার জন্য ভারতকেও প্রয়োজন চীনের। চীন কি সুযোগটি গ্রহণ করতে পারবে? এ প্রশ্নটিও সৃষ্টি হয়েছে। হ


আরো সংবাদ



premium cement