জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে নান্দনিক সেঞ্চুরি হাঁকিয়ছেন ওপেনার ইমরুল কায়েস। ১৪০ বলে ১৪৪ রানের ইনিংসটি সাজিয়েছেন ১৩টি বাউন্ডারি ও ৬টি ছক্কা দিয়ে। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের এ তৃতীয় সেঞ্চুরিটি হাঁকানোর পর ভিন্নভাবে উদযাপন করেছেন ইমরুল।
কীভাবে?
সেঞ্চুরি করার পর ছোট্ট শিশু কোলে নেয়ার মতো করে ড্রেসিংরুমের দিকে তাকিয়ে দুই হাতে ব্যাট নাচান ইমরুল।
পরে জানান এই উদযাপনের কারণ।
গত মাসে এশিয়া কাপ খেলে দেশে ফিরেই পুত্র সন্তানের বাবা হন ইমরুল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ত্রী-সন্তানসহ ছবিও পোস্ট করেন তিনি।
কাল উদযাপনটি ছিল সেই সন্তানকে নিয়েই। সেঞ্চুরিটি তাকেই উৎসর্গ করেন ইমরুল। নিজেই জানান সেই কথা, 'আমার বেবি হয়েছে, বেবির জন্য সেঞ্চুরি উৎসর্গ করেছি।'
যেদিন দলে খেলার সুযোগ থাকবে না, নিজেই বলব ধন্যবাদ : ইমরুল
১০ বছরের ক্যারিয়ার ইমরুল কায়েসের। দলে ধারাবাহিকভাবে খেলা হয় না তার। উত্থান-পতন তো রয়েছেই। এই যে কয়েকদিন আগে শেষ মুহূর্তে এশিয়া কাপে দলে জায়গা হয়েছে তার। এরপর কাল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে রেকর্ড গড়া সেঞ্চুরি। সাথে দলের জয়। অনুভূতিটা অন্যরকম হওয়ারই কথা। ম্যাচ শেষে ইমরুল সাংবাদিকদের জানালেন মনের সেই কথাগুলো।
'আমার সাথে অনেক খেলোয়াড়ের অভিষেক হয়েছে, যারা এখন দৃশ্যপটেই নেই। লক্ষ্য ঠিক রাখাটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সব সময়ই বিশ্বাস করি, আমার ক্যারিয়ার এত দ্রুত শেষ হতে পারে না। নিজেকে সে কারণেই তৈরি রাখি জাতীয় দলের জন্য। যেদিন আর জাতীয় দলে খেলার সুযোগ থাকবে না, নিজেই বলব ধন্যবাদ।'
ক্যারিয়ারের উত্থান-পতন নিয়ে ইমরুল বলেন, 'যখনই সুযোগ পাই, চেষ্টা করি ভালো করতে। সব সময়ই সুযোগের অপেক্ষায় থাকি। খেলোয়াড়দের জীবনে উত্থান-পতন থাকে। টানা ভালো খেলা কঠিন। আমার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। আমি বাদ পড়লে, সে জায়গায় যে এসেছে ভালো খেলেছে বলে আমার আর প্রয়োজন হয়নি। যেহেতু দেশের হয়ে খেললে অনেক ভালো লাগে। আমি এ সুযোগের অপেক্ষায় থাকি।'
রোববার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দলকে খাদের কিনারা থেকে টেনে তুলেন ইমরুল। ১৪০ বলে ১৪৪ রানের অনবদ্য একটি ইনিংস খেলেন তিনি। ১৩ বাউন্ডারি ও ৬ ছক্কায় ইনিংসটি সাজান তিনি। এর ফলে ঘরের মাঠে সর্বোচ্চ এক ইনিংসের মালিক বনে যান তিনি। এর আগে রেকর্ডটি ছিল তামিম ইকবালের। ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৩২ রান করেন তিনি।
সেঞ্চুরি করে যে বার্তা দিলেন ইমরুল
অনেক দিন এমন দুর্দান্ত একটি ইনিংস খেললেন ইমরুল কায়েস। সে সাথে কি নির্বাচকদের কাছে একটি বার্তাও দিয়ে রাখলেন এই বামহাতি ওপেনার। ১০ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার কিন্তু; এখনো জাতীয় দলে আসন পাকা করতে পারেননি। প্রায়ই বাজে ফর্মের কারণে ছিটকে যেতে হয় দল থেকে। তবে পরিশ্রমী ইমরুল কায়েস বারবারই ফিরে এসেছেন। তবুও জাতীয় দলে ওপেনারের সঙ্কট রয়েই গেছে।
তামিম ইকবালের একজন স্থায়ী ওপেনিং পার্টনারের খোজে অনেক দিন নির্বাচকরা। কিন্তু সেই জায়গাটিতে কেউ স্থায়ী হতে পারছেন না। বর্তমানে যারা এই পজিশনটির জন্য বিবেচনায় রয়েছেন তাদের মধ্যে ইমরুল কায়েস কায়েসই সবচেয়ে অভিজ্ঞ। তামিমের সাথে সাম্প্রতিক ওপেনারদের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে বেশিবার জুঁটি বেঁধেছেন। তবুও তিনি আস্থার প্রতীক হতে পারছেন না সব সময়। যে কারণে সাম্প্রতিক সময়ে লিটন দাসকে তামিমকের সঙ্গী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
এশিয়া কাপের দলে শুরুতে ইমরুলের জায়গা হয়নি; তার বদলি হিসেবে ওপেনার হিসেবে নেয়া হয়েছিলো লিটনকে। ফাইনালে সেঞ্চুরি করে লিটন দাস নিজের দাবি আরো জোরালো করেছেন। তবে এশিয়া কাপে মাঝপথে উড়ে গিয়ে আর মিডল অর্ডারে খেলতে নেমে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ইমরুল খেলেন ম্যাচ বাঁচানো ইনিংস। ক্যারিয়ারে প্রথমবার ছয়ে ব্যাট করে ইমরুল খেললেন অপরাজিত ৭২ রানের ইনিংস, দলকে যা গড়ে দিল জয়ের ভিত্তি। তার ক্যারিয়ার পেল নতুন প্রাণ।
আর এবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এই দারুণ সেঞ্চুরিতে ইমরুল কায়েস জানান দিলেন- তিনি এখনো প্রস্তুত তামিম ইকবালের সঙ্গী হতে। এত সহজে যে কাউকে জায়গা ছেড়ে দেবেন না ইমরুল সেটি স্পষ্ট হলো তার রোববারের ইনিংসে।
এশিয়া কাপের ফাইনালে লিটন দাস যে দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করেছেন তাতে তামিম ইনজুরিতে না পড়লে হয়তো ইমরুলের খেলাই হতো না আজকের ম্যাচে। দলে থাকার পরও একাদশে থাকবেন কিনা সেটি নিয়ে সংশয় ছিলো। কারণ অনেকেই ভেবেছেন টিম ম্যানেজমেন্ট হয়তো তরুণ নাজমুল হোসেন শান্তকে যাচাই করতে পারে হোম সিরিজে। তবে শেষ পর্যন্ত সুযোগটা পেলেন ইমরুল কায়েস।
আর সেই সুযোগটা কী দরুণ ভাবেই না কাজে লাগালেন ইমরুল! ১৪০ বলে ১৪৪ রান, ১৩ চার ও ৬ ছক্কা। তার চেয়ে বড় কথা দল যখন খাদের কিনারে, এক পাশ দিয়ে ব্যাটসম্যানরা যখন আশা যাওয়ার মিছিলে, তখন তিনি এক প্রান্তে ছিলেন অবিচল।
বিপর্যয়ের মধ্যে খেলেছেন ধৈর্য্য ধরে, পাশাপাশি রান রেটও ঠিক রেখেছেন। মুশফিক, মিথুন আর সাইফউদ্দিনকে নিয়ে গড়েছেন তিনটি দারুণ জুটি। এদিন ইমরুলের ব্যাটে ছিলো আত্মবিশ্বাসের ছোয়া। যেন পণ করেই নেমেছিলেন দলকে বড় স্কোর এনে দিবেন।
তাই আগামী দিনে তামিম ইকবালের সঙ্গী হিসেবে যে লড়াই চলবে সেখানে নিজের দাবিটা আবারো জোরালো করে তুললেন ইমরুল তার পারফরম্যান্স দিয়ে। নির্বাচক কাছে স্পষ্ট বার্তাই পাঠালেন এদিন ব্যাট হাতে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা