৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


জামায়াত নেতার জানাযায় আবেগাপ্লুত আ’লীগ এমপি যা বললেন

জি এম রহিমুল্লাহর জানাযায় হাজারো মানুষের ঢল। - ছবি: নয়া দিগন্ত

কক্সবাজার কক্সবাজার জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিএম রহিমুল্লাহর প্রথম নামাজে জানাযা কক্সবাজার কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়েছে। জানাযায় ইমামতি করেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শীর্ষনেতা মাওলানা আবদুল হালিম।

জননেতা জিএম রহিমুল্লাহর জানাযাপূর্ব সংক্ষিপ্ত সভায় বক্তব্যে তিনি বলেন, আমার আদরের ভাই জিএম রহিমুল্লাহর মৃত্যুর সংবাদ বিশ্বাস হয়নি। কিভাবে তিনি এত অল্প সময়ে চলে যাবেন ভাবিনি।

মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, আপনাদের জিএম রহিমুল্লাহ ছিলেন ছোট মানুষ। হয়ে গেলেন জাতীয় নেতা। তিনি কক্সবাজারবাসীর গৌরব ছিলেন। তার মতো যোগ্যতা সম্পন্ন মানুষ কম মেলে।

জামায়াত নেতার জানাযায় দল মত নির্বিশেষে সব শ্রেণির মানুষ অংশ গ্রহণ করে। জানাযার নির্ধারিত স্থান কক্সবাজার কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠ হলে তা দশটার আগেই কানায়-কানায় পূর্ন হয়ে যায়। পার্শ্ববর্তী কক্সবাজার বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়াম, পৌর প্রিপ্যারেটরী উচ্চবিদ্যালয় মাঠ, আশপাশের সড়ক উপসড়কে শোকাহত জনতা অবস্থান নেয়। যে যেখানে ছেল সেখান থেকে জানাযার নামাজে অংশ নেয়।

কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল ও জানাযায় অংশ নেন।

জানাযাপূর্ব সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় তিনি বলেন, আজকে মহানবীর জন্মদিন। এমন দিনে জিএম রহিমুল্লাহর জানাযা হচ্ছে। ভাবতে পারিনি তিনি এত কম সময়ে বিদায় নিবেন। আবেগাপ্লুত এই জনপ্রতিনিধি বলেন, ‘তিনি সবাইকে সন্তুষ্ট রেখে রাজনীতি করতেন। মানুষের যে কোন বিপদে ছুটে যেতেন।’

এ সময় এমপি কমল প্রয়াত রহিমুল্লাহর পরিবারের জন্য একখন্ড জায়গার ব্যবস্থার আশ্বাস দেন।

সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, আমি জিএম রহিমুল্লাহর সাথে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছি। তিনি অত্যন্ত ভাল মানুষ ছিলেন।

এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের আমীর ও কক্সবাজার জেলার সাবেক আমীর মোহাম্মদ শাহজাহান।

তিনি বলেন, তার ঘরে অনেক সময় চাল থাকতো না। আমাদের চাল কিনে দিতে হতো। তার মতো নির্লোভ মানুষ হয় না। একজন উপজেলা চেয়ারম্যান হলেও চাল-চলন ছিল সাধারণ মানুষের মতো।

বিএনপির কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবী বিষয়ক সম্পাদক কক্সবাজার সদর-রামু আসনের সাবেক এমপি লুৎফুর রহমান কাজল বলেন, জিএম রহিমুল্লাহ আমার বন্ধু। তার সাথে আমার রাজনৈতিক বিরোধ ছিল, তা ঠিক। কিন্তু তার মতো সাহসী বলিষ্ঠ নেতা আমি আর দেখিনি। ২৪ ঘন্টাই রাজনীতি, সমাজসেবা ছিল তার কাজ।

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তপক্ষের চেয়ারম্যানের লে.কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমদ বলেন, আমি দায়িত্ব পালনের কারণে জিএম রহিমুল্লাহকে কাছ থেকে দেখেছি। প্রায় সময় আমার পরামর্শ নিতেন। খুবই কর্মঠ জনপ্রতিনিধি ছিলেন। জনগণের সেবার মানসিকতা লালন করতেন। একটি রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত থাকলেও তার মাঝে প্রভাব ছিল না। তার মধ্যে কোন বদনামিমূলক কাজ দেখিনি।

কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, আমি জিএম রহিমুল্লাহর সাথে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছি। তিনি অত্যন্ত ভাল মানুষ ছিলেন।

বক্তব্য রাখেন- জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান, নায়েবে আমীর ঝিলংজা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল গফুর, টেকনাফের হোয়াইক্ষ্যং ইউপি চেয়ারম্যান জেলা জামায়াতের নাযেবে আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা নুর আহমদ আনোয়ারী, শিবিরের কেন্দ্রীয় ছাত্র আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক তৌহিদ হোসেন, চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট ফরিদ উদ্দিন খান, অধ্যক্ষ নুর হোসেন সিদ্দিকী, কুমিল্লা ভিকটোরিয়া কলেজের সাবেক ভিপি অধ্যক্ষ রেজাউল করিম, কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক মেয়র সরওয়ার কামাল, কক্সবাজার শহর জামায়াতের আমীর সাইয়েদুল আলম, ইসলামী ঐক্যজোটের কক্সবাজার জেলা সভাপতি হাফেজ মাওলানা সালামত উল্লাহ, রামু উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান উপজেলা জামায়াতের আমীর ফজলুল্লাহ মো হাসান, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর কাশেম, কক্সবাজার সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান এড সলিম উল্লাহ বাহাদুর, সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শহিদুল আলম বাহাদুর, জেলা শিবির সভাপতি হেদায়েত উল্লাহ, জেলা শিবির সভাপতি রবিউল আলম, শহর সভাপতি রিদুয়ানুল হক জিসান প্রমুখ।

জেলা প্রশাসের পক্ষ থেকে জানাযায় অংশ গ্রহণ করে বক্তব্য দেন কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এএইচ এম মাহমুদুর রহমান।

জানাযা পূর্ব সভা পরিচালনা করেন জেলা জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুল আলম বাহাদুর, শহর জামায়াতের সেক্রেটারী আবদুল্লাহ আল ফারুক। পরিবাবের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন জাহিদ ইফতেখার।

উল্লেখ্য, জামায়াত নেতা জিএম রহিমুল্লাহ (৫৪) হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মঙ্গলবার (২০ নভেম্বর) কক্সবাজার শহরের হোটেল সাগরগাঁওতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এর আগের রাতে তিনি হোটেলের চতুর্থ তলার ৩১৬ নম্বর কক্ষে একাই ঘুমান। দুপুর পর্যন্ত ঘুম থেকে না ওঠায় তাকে ডাকতে যায় হোটেলের এক বয় ছেলে। এরপর ডাকতে যায় হোটেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও জিএম রহিমুল্লাহর শ্যালক শাহেদুল ইসলাম। তিনিও গিয়ে প্রথমে দরজা ধাক্কা দেন। কোনো সাড়া-শব্দ পাননি। পরে ভ্যান্টিলেটর দিয়ে উঁকি মেরে দেখেন- জিএম রহিম উল্লাহ উপুড় হয়ে ঘুমিয়ে আছেন। ২টা ৪০ মিনিটের দিকে বিকল্প চাবি দিয়ে দরজা খুলে দেখেন তিনি মারা গেছেন। পরে পুলিশকে খবর দেয় তারা। শাহেদ জানান, জিএম রহিমুল্লাহ মাঝে মধ্যে হোটেল সাগরগাঁওতে রাত যাপন করতেন। সোমবার রাতেও এসে হোটেলের চার তলার ৩১৬ নং কক্ষে ঘুমাতে যান। হোটেলে থাকলে সকালে ফোন করে নাস্তা আনাতেন। কিন্তু মঙ্গলবার তিনি তা করেননি।

জিএম রহিমুল্লাহ কক্সবাজার সদরের ভারুয়াখালীর বানিয়াপাড়ার বাসিন্দা মৃত আব্দুল হাকিমের ছেলে। তিনি ভারুয়াখালী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান। তিনি ৪ মেয়ে ও ১ ছেলের জনক।


আরো সংবাদ



premium cement