০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`


৩ লাখ টন সরিষা ও ২ হাজার টন মধু উৎপাদনের পথে চলনবিল

-

উত্তরাঞ্চলের মাঠে মাঠে চোখ জুড়ানো হলুদ ফুলের সমারোহ। মাঠগুলো যেন হলুদ চাদরে মোড়া। ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে বদলে গেছে প্রকৃতির রূপ। শীতের সোনাঝরা রোদে ঝকমক করছে হলুদে-সবুজে মিশেল দিগন্ত বিস্তৃত সরিষা ক্ষেত। যেন প্রকৃতি সেজেছে হলুদবরণ সাজে। বাতাসে বইছে ম ম গন্ধ। মৌমাছি ও মৌচাষিরা ব্যস্ত মধু আহরণে। শীতে নয়নাভিরাম বাংলার চিরায়ত এ দৃশ্য দেখতে প্রকৃতিপ্রেমীরা ভিড় করছেন চলনবিল অঞ্চলে।
পাবনা-নাটোর-সিরাজগঞ্জ অঞ্চলের কৃষকরা বোরো আমনের লোকসান পুষিয়ে নিতে ব্যাপকভাবে সরিষার আবাদ করেছেন। চলতি মওসুমে তিন জেলায় প্রায় এক লাখ ৬৫ হাজার হেক্টর জমিতে আগাম ও নাবি জাতের সরিষার আবাদ হয়েছে। সরিষাক্ষেতে চোখ জুড়ানো হলুদফুল আকৃষ্ট করছে মৌমাছিদের। পুরো চলনবিল অঞ্চল মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত হয়ে উঠেছে। মৌচাষিরা মধু আহরণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। চলতি মওসুমে প্রায় তিন লাখ ৩০ হাজার টন সরিষা ও দুই হাজার ২০০ টন মধু উৎপাদনের দিকে এগিয়ে চলছে চলনবিল।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, পাবনা জেলার বেড়া, সাঁথিয়া, ফরিদপুর, ঈশ্বরদী, আটঘরিয়া, সুজানগর চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর, নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম, গুরুদাসপুর, লালপুর ও সিংড়া এবং সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া, তাড়াশ, চৌহালী, রায়গঞ্জ, শাহজাদপুরসহ ২৬টি উপজেলায় চলতি রবি মওসুমে প্রায় এক লাখ ৬৫ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন আগাম ও নাবি জাতের সরিষা চাষ হয়েছে। সরিষা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রতি হেক্টরে দুই টন হিসেবে দুই লাখ হেক্টরে প্রায় তিন লাখ ৩০ হাজার টন। চলতি মওসুমে সরিষার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে কৃষি সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
পাবনা ও সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি রবি মওসুমে পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলার চরাঞ্চলে প্রায় ৬৫ হাজার হেক্টরে সরিষার আবাদ হয়েছে। সেই সরিষা ক্ষেতের আলে আলে এখন সারি সারি মৌয়ের বাক্স। আবহাওয়া অনকূলে থাকায় এ বছর সরিষার আশাতীত ফলন হবে বলে কৃষকেরা জানিয়েছেন।
সুজানগরের কৃষক রমজান আলী জানান, এক একর জমিতে সরিষা চাষ করতে খরচ হয় এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা। ভালো ফলন হলে প্রতি বিঘায় ছয় থেকে সাত মণ সরিষা উৎপাদন হয়। প্রতি মণ সরিষার বাজারমূল্য দুই হাজার থেকে দুই হাজার ২০০ টাকা। অন্য ফসল আবাদ করে প্রতি বিঘায় যে পরিমাণ লাভ হয় তার চেয়ে একই পরিমাণ জমিতে সরিষে চাষ করে দ্বিগুণ লাভ করা যায়। এ অঞ্চলে সরিষার আবাদ বৃদ্ধির সাথে সাথে বেড়েছে মওসুমি মৌচাষিদের তৎপরতা। সরিষা যেমন দিচ্ছে তেল, সাথে দিচ্ছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এ ছাড়া সরিষার ফুল ও পাতা ঝরে তৈরি হয় জৈবসার। ফলে কৃষকরা এখন ধান ও অন্য ফসলের পাশাপাশি সরিষে চাষের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়েছেন। পাবনার হাণ্ডিয়াল এলাকার কৃষক ছলিম খাঁ জানান, তিনি পাঁচ একর জমিতে সরিষা আবাদ করে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন। সাত বছর ধরে সরিষা চাষ করে তিনি প্রতি মওসুমে পৌনে দুই থেকে দুই লাখ টাকা লাভ করেছেন। চলতি মওসুমে আরো বেশি লাভের আশা করছেন।
মৌমাছির ম ম গুঞ্জনে মুখরিত পুরো বিলাঞ্চল। ঝাঁকে ঝাঁকে মৌমাছি উড়ে গিয়ে সরিষা ফুলে বসছে। কিছুক্ষণ পরপর মধু নিয়ে ফিরছে মৌয়ের বাক্সে। চলতি মওসুমে আবহাওয়া যদি তেমন কোনো বৈরী আচরণ না করে তাহলে তিন জেলায় দুই হাজার থেকে দুই হাজার ২০০ টন মধু আহরণ করা সম্ভব হবে। যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রতি কেজি সর্ব নিম্নœ ২৫০ টাকা হিসেবে ৪৩ থেকে ৪৫ কোটি টাকা। এমনটিই আশা করছেন মৌচাষিরা। প্রায় এক মাস আগে বগুড়া, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, সাতক্ষীরা, পাবনা, নাটোর ও সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন অঞ্চলের সাড়ে সাত শতাধিক প্রশিক্ষিত মৌখামারি চলনবিলে অস্থায়ী আবাস গেড়েছেন। মৌচাষিরা সরিষা ক্ষেতের আলে এক লাখ থেকে সোয়া লাখ মৌয়ের বাক্স বসিয়েছেন। প্রতি বছর নভেম্বর থেকে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত সরিষা ফুলের মধু আহরণ চলে। এ সময়ে একেকজন মৌচাষি গড়ে দুই থেকে আড়াই টন মধু আহরণ করতে পারেন।
পাবনার আব্দুল আজিজ জানান, গত বছরের চেয়ে এবার প্রায় দেড়গুণ মৌবাক্স নিয়ে হাজির হয়েছেন বিভিন্ন জেলার মৌচাষিরা। প্রাকৃতিক উপায়ে মধু সংগ্রহের ফলে শুধু মৌচাষিরাই লাভবান হচ্ছেন না, মৌমাছির বিচরণে সঠিকভাবে সরিষার ফুলে পরাগায়ন ঘটছে। তাতে সরিষার উৎপাদন ক্ষমতা বেড়ে গেছে অনেক। এতে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। শুধু তাই নয় পরিবেশবিদরা বলছেন, ক্ষেতে কীটনাশক ব্যবহার কম হওয়ায় উপকৃত হচ্ছে পরিবেশ। মৌমাছি শুধু মধুই সংগ্রহ করে না, ফসলের জন্য ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গ মেরে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে থাকে।
বর্তমানে প্রতি সপ্তাহে মধু সংগ্রহের পরিমাণ প্রায় দেড় লাখ কেজি। প্রতি কেজি মধু অগ্রিম ২০০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে মাঠ থেকে। এ অঞ্চলে উৎপাদিত মধুর গুণগত মান খুবই ভালো হওয়ায় ভারতের ডাবর কোম্পানি এবং বাংলাদেশের প্রাণ, স্কয়ার, এপি, এসিআইসহ বিভিন্ন নামী-দামি কোম্পানির এজেন্টরা মাঠ থেকে অপরিশোধিত মধু অগ্রিম কেনা শুরু করেছেন। সুন্দরবনের মধুচাষিরাও এ অঞ্চলে মধু সংগ্রহ করতে এসেছেন। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে এখানে পুরোদমে শুরু হয়েছে মধু সংগ্রহ।
পুষ্টি বিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন জাহিদ জানান, আমাদের দেশে অতীতকাল থেকে মধু বহু রোগের প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। মধু পরিপাকে সহায়তা করে, ক্ষুধা বাড়ায়, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে, সর্দি, কাশি, জ্বর, হাঁপানি, হৃদরোগ, পুরনো আমাশয়, দাঁত, ত্বক, পেটের পীড়াসহ নানা জটিল রোগ নিরাময় করে থাকে। মধুতে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান ও ভেষজ গুণ রয়েছে। মধুর উচ্চমাত্রার ফ্রুক্টোজ ও গ্লুকোজ যকৃতে গ্রাইকোজেনের মজুদ গড়ে তুলতে সাহায্য করে। এ ছাড়া মধু ভালো শক্তি প্রদায়ী খাদ্য। মৌচাষিরা জানিয়েছেন, বছরের সাত মাস মধু পাওয়া যায়। সরিষার পর লিচু, আম, ধনিয়া, তিলসহ বিভিন্ন ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করা হয়।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, পাবনা, নাটোর ও সিরাজগঞ্জ অর্থাৎ চলনবিল অঞ্চলে সরিষার আবাদ খুব ভালো হয়েছে। বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবার সরিষার আশাতীত ফলন হতে যাচ্ছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
১ আগস্ট থেকে জেদ্দায় ফ্লাইট ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের প্রকৌশল সংস্থার শীর্ষ পদগুলোতে প্রকৌশলীদের পদায়ন চায় আইইবি বালাকোটের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে সব ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে : শিবির বাহরাইনে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে বাংলাদেশীর মৃত্যু সরকার নির্বাচনের নামে ভণ্ডামি করছে : মান্না পেশাগত নৈতিকতা ও মূল্যবোধের অনুশীলনই আইন পেশার মূল ভিত্তি : প্রধান বিচারপতি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে পিরোজপুরে ছাত্রলীগের পদযাত্রা বিদ্যুৎস্পর্শে নয়, মা গলা টিপে হত্যা করে শিশু মাইশাকে সিটি টোলের নামে চাঁদাবাজি বন্ধের সুপারিশ সাঈদ খোকনের রাজশাহীতে তরুণকে তুলে নিয়ে চাঁদা দাবির অভিযোগে ৪ পুলিশ সদস্য প্রত্যাহার নয়াপল্টনে শুক্রবার সমাবেশ করবে বিএনপি

সকল