খুলনার পাইকগাছা পৌর সদরের শিবসা নদীর পাড় এখন ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। সেখানকার পচা গন্ধে স্থানীয় দোকানি, ক্রেতাসাধারণ, পথচারীসহ এলাকাবাসীর দুর্ভোগের শেষ নেই। বিষাক্ত উটকো গন্ধে নানা রোগ-জীবাণু ছড়িয়ে পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, দীর্ঘ দিন ধরে শিবসার নাব্যতা হ্রাসে পলির পাশাপাশি সুন্দরবন থেকে পানির সাথে ভেসে আসা বিভিন্ন প্রজাতির ফলের বীজ পড়ে চারা গজিয়ে উঠেছে গাছপালার। এখানকার নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে প্রতিদিন সৌন্দর্য পিপাসুরা ছুটে আসেন শিবসা পাড়ে। এলাকাজুড়ে গড়ে উঠেছে চা পট্টিসহ নানা দোকানপাট। তবে সারাক্ষণ উটকো পচা গন্ধে সেখানকার পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে। এরপর বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে পৌর সদরময়।
স্থানীয়রা জানান, পথচারীদের এ এলাকা পার হতে নাকে কাপড় গুঁজে চলতে হয়। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, পাইকগাছা পৌরসভার ওই এলাকা তলিয়ে যাচ্ছে ময়লা-আবর্জনার স্তূপের নিচে।
১৯৯৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারি পাইকগাছা পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। সেখান থেকে ধীরে ধীরে দ্বিতীয় শ্রেণী ও পরবর্তী সময়ে প্রথম শ্রেণীতে স্থান করে নিলেও কার্যত দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন হয়নি এখানে। পৌরবাসীকে কাক্সিক্ষত সেবা দিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। বিশেষ করে পরিকল্পনাহীনতায় অনেক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়েছে, যার ধারাবাহিকতায় পৌরসভার হাট-বাজারের দক্ষিণ পাশের শিবসা নদীর পাড়ে গড়ে উঠেছে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ, যার কোল ঘেঁষে রয়েছে কাঁচাবাজার, মুদি দোকানের সারি, মাছ বাজারসহ পাইকগাছার সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এর অনতিদূরেই অবস্থিত পাইকগাছা থানাসহ নানা প্রতিষ্ঠান।
স্থানীয়রা আরো জানান, দীর্ঘ দিনের সমস্যা সমাধানে পৌর কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নেয়া তো দূরে থাক, উপরন্তু পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহ করে বাজারসংলগ্ন এই স্থানে ফেলে বাজারকে রীতিমতো দূষণের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। গরু-ছাগলের মল-মূত্র, হাঁস-মুরগির বর্জ্য-আবর্জনা, মানুষের মল-মূত্রসহ বিভিন্ন আবর্জনা ভ্যান অথবা ট্রাকে করে সেখানে ফেলে আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত করা হয়েছে।
পচা আবর্জনার ভাগাড়ের পাশ দিয়ে পৌরসভার বরাদ্দকৃত ইটের সোলিং রাস্তা থাকলেও তা ইতোমধ্যে ঢাকা পড়েছে আবর্জনার স্তূপে। পুরনো লঞ্চঘাটের ওই এলাকা দিয়েই ওঠা-নামা হয় ব্যবসায়ীদের খুলনা থেকে নৌপথে আনা বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী। প্রতিনিয়ত আবর্জনার স্তূপ প্রসারিত হওয়ায় খোলা জায়গার অভাবে অনেককে নৌপথে আনা মালামাল আবর্জনার স্তূপের ওপর রাখতে হয়। সামান্য বৃষ্টিতেই ময়লা-আবর্জনা ধুয়ে নদীতে পড়ে সেখানকার পানি দূষিত করার পাশাপাশি দূষিত পানি ছড়িয়ে পড়ে গোটা পৌর সদরে। ফলে বায়ুবাহী রোগাক্রান্তের হারও বেড়েছে। পৌরসভা প্রতিষ্ঠার দু’দশকেও কর্তৃপক্ষ ময়লা-আবর্জনা ফেলার কোনো নির্দিষ্ট স্থান তৈরি করতে না পারায় মূলত এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন অনেকে।
আবার ময়লা-আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট কোনো স্থান না থাকায় বাজারের মরা কাঁকড়া, কুঁচে, পচা মাছ ইত্যাদি ফেলা হচ্ছে এখানে।
পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের খামখেয়ালিপনা ও কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতার পাশাপাশি চরম অব্যবস্থাপনায় পাইকগাছা পৌর সদরের বৃহৎ অংশ আজ চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জনৈক পরিচ্ছন্নতাকর্মী বলেন, আমরা পৌরসভা থেকে বেতন ভোগ করি। কর্তৃপক্ষ আমাদের যেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলাতে বলবেন সেখানেই ফেলব। বাজারের পাশে ফেলছি, কোনো দিন নিষেধ করেনি।
জনৈক গোশত ব্যবসায়ী বলেন, সকালে গোশত বিক্রি করার সময় ক্রেতা-বিক্রেতা সবাইকে নাকে কাপড় গুঁজেই এখানে থাকতে হয়। তারা আরো বলেন, আমরা তো ব্যবসার স্বার্থে দুর্গন্ধ সহ্য করে নিয়েছি। তবে ক্রেতারা কেন দুর্গন্ধ সহ্য করে সেখানে আসবেন? তবে এ সময় বাজার ইজারাদারের সাথে যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে উপজেলা সেনেটারি কর্মকর্তা উদয় কুমার মণ্ডলের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে তিনি একাধিকবার মেয়রের সাথে কথা বললেও কোনো সমাধান আসেনি।
পাইকগাছা পৌরসভার মেয়র সেলিম জাহাঙ্গীরের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা