সুনামগঞ্জের হাওরে শ্রমিকসঙ্কট বোরোধান কাটা ব্যাহত
- তৌহিদ চৌধুরী প্রদীপ সুনামগঞ্জ
- ২০ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০
সুনামগঞ্জের হাওরে কৃষি শ্রমিকসঙ্কটের কারণে বোরোধান কাটা ব্যাহত হচ্ছে। চাহিদা অনুযায়ী শ্রমিক না পাওয়ায় ধান কাটতে পারছেন না কৃষকেরা। ফলে ফসল উঠতে দেরি হচ্ছে কৃষকের গোলায়। এ কারণে ফসল কাটার আনন্দও ক্রমেই ম্লান হয়ে পড়ছে কৃষকদের।
চলতি বোরো মওসুমে দেশের উত্তরাঞ্চলসহ বেশ কয়েকটি জেলা থেকে এবার ধান কাটার শ্রমিক দল কম এসেছে সুনামগঞ্জ অঞ্চলে। গৃহস্থরা দলীয় শ্রমিকদের কয়েক ভাগে ভাগ করে ধান কাটাচ্ছেন। এতে প্রতিদিন গড়ে যে পরিমাণ ধান ফসলি জমি থেকে মাড়াই খলায় উঠে আসার কথা, তার চেয়েও অনেক কম পরিমাণ ধান উঠে আসছে। এতে চিন্তিত হয়ে পড়ছেন কৃষকরা। চৈত্রের প্রচণ্ড তাপদাহে কিছু জমিতে চিটা, কালবোশেখি ঝড় ও শিলা বৃষ্টিতে উঠতি বোরো ফসল আংশিক ক্ষতি হলেও মাঠ ভরা পাকা ধান নিয়ে এখন চরম সংশয়ে রয়েছেন কৃষকরা। বহু কৃষক পাকা ধান কাটাতে শ্রমিকের খোঁজে দিগি¦দিক ছুটে বেড়াচ্ছেন। সময়মতো ফসল ঘরে তোলার আতঙ্ক যেন পিছু ছাড়ছে না তাদের।
হাওর এলাকা ঘুরে কৃষক ও গৃহস্থরা জানান, চৈত্রের খরায় আংশিক ধানে চিটা হওয়ায়, গড়ে চার আনা ফসল নষ্ট হয়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় এবার ফলন মোটামুটি ভালো হলেও ধানকাটার শ্রমিক খুব কম এসেছেন। একজন গৃহস্থের কম পক্ষে ২০-৩০ জন ধান কাটার শ্রমিক প্রয়োজন। সেখানে অনেকেই এবার শ্রমিক না পাওয়ার কারণে একজন গৃহস্থের শ্রমিককে ভাগ করে কয়েকজন গৃহস্থ ধান কাটাচ্ছেন। আবার এলাকার আংশিক শ্রমিক ৫-৬ শত টাকা রোজ হারে যে পরিমাণ ধান কাটেন, এতে কৃষকদের ধানকাটা ও রোজের পারিশ্রমিক গড়-পরতায় পোষায় না। তাই প্রতি দিন আশানুরূপ ফসল ঘরে উঠছে না। আবার অনেকেই শ্রমিক না পেয়ে নিজেরাই কিছু ধান কাটছেন। এতে লাভের চেয়ে লোকসানের পরিমাণ বেশি হচ্ছে। ধান কাটতে যাওয়া এলাকার কৃষিশ্রমিক হারুন মিয়া বলেন, আমরা তো সারা বছর কাম (কাজ) করতে পারি না বৈশাখ মাসে যে রোজি করি বউ-বাচ্চা নিয়ে খাই, এই সময় ৫-৬ শ’ টাকা রোজ পড়ে।
ময়মনসিংহ থেকে আসা ধান কাটার শ্রমিক সর্দার ঠান্ডু মিয়া (ঠান্ডু বেপারী ) জানান, তার নেতৃত্বে প্রতি বছরই ৩০-৩২ জনের একটি দল জামালগঞ্জের পাকনা হাওরে আসেন একজন (কৃষক) মহাজনের ধানি জমি কাটতে। কিন্তু এবার তিনি কয়েকজন কৃষকের ধান কাটছেন উপদলে বিভক্ত হয়ে। এতে তাদের কোনো রকম কমতি না হলেও, কৃষকদের জমি থেকে সময়মতো ফসল উঠছে না। বিলম্বে ধান কাটলে বেশি পাকা ধান জমিতেই ঝরেপড়ে, এতে ক্ষতি শুধুই কৃষকদের। ফসল তোলার কজে ব্যস্ত গজারিয়া গ্রামের কৃষাণী নুরুন্নেছা বিবি বলেন, বৈশাখ মাসে সারা দিন কামকাজ করলেও কষ্ট লাগে না। বেপারীসহ (ধান কাটার শ্রমিক) কত জনের রান্দা (রান্না) করি, ধান হুকাই (শুকাই), ধান (চিটা ও চোঁছা ছাড়ানো) উড়াই, কত খামকাজ করি কোনো খামই শরীরে লাগে না। কৃষক-কৃষাণীদের সাথে কাজে সহযোগী করছে স্কুল-কলেজ ও মাদরাসাপড়–য়া ছাত্রছাত্রীরা। লক্ষ্মীপুর তাওয়া কুলিয়া দাখিল মাদরাসারছাত্রী তাওহিদা আক্তার জানান, সকালে বাবা-ভাই ও কাজের লোকদের ভাত খাইয়ে সে মাদরাসায় যায়। দুপুরে আবার হাওরে ভাত দিতে সে মাদরাসা থেকে চলে আসে। হঠামারা গ্রামের হতদরিদ্র শাহেদ আলীর ছেলে স্কুলছাত্র আফজল মিয়া ধান কাটার এক মাসে ১০-১২ মণ ধানে বেতনে গৃহস্থের বাড়িতে কাজ করছে। একই গ্রামের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র সোলেমান মিয়া জানায়, প্রতিদিন তার বাবার সাথে হাওরে কাজ করে সে। হাওরপাড়ের স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি এখন কমেছে বলে জানান স্কুলশিক্ষকরা। বৈশাখে ছাত্রছাত্রীরা তাদের মতোই আসা-যাওয়া করে, তাদেরকে আটকানো যায় না। আটকানোর চেষ্টা করলে স্কুলে আসবে না এসব শিক্ষার্থী। ফসল তোলার এই মাসে তারাও বাড়িতে সাংসারিক কাজে সহযোগতিা করে।
এ দিকে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন হাওরের ধান কাটার শ্রমিকসঙ্কট নিরসনের জন্য জেলার ফাজিলপুর, যাদুকাটা নদীসহ বিভিন্ন বালু-পাথর কোয়ারিগুলোতে ফসল কাটা পর্যন্ত বালু-পাথরের কাজ আপাতত বন্ধ ঘোষণা করে ধান কেটে ঘরে তোলার আহবান জানিয়েছেন।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো: বশির আহমদ সরকার জানান, সুনামগঞ্জের ২ লাখ ২৪ হাজার ৭১৯ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ১৩ লাখ ৩২ হাজার ৭৯২ মেট্রিক টন ধান। টাকার অঙ্কে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। বোরো ফসলের ফলন ভালো হয়েছে। প্রায় ২৫ ভাগ জমির ধান পেকে গেছে। কিছু দিনের মধ্যে বাকি জমির ধানও পেকে যাবে। ধান পাকা শুরু করলেও শ্রমিক সঙ্কটের কারণে ধান কাটতে পারছেন না কৃষকরা। বাড়তি লোকবল নিয়োগ করে পাকা ধান দ্রুত কেটে ফেলতে কৃষকদের আহ্বান জানান তিনি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা