১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ জিলকদ ১৪৪৫
`


রানীনগরে ১৯ হাজার হেক্টর জমির সেচ নিয়ে শঙ্কায় কৃষক

এক বছরেও শেষ হয়নি পল্লী বিদ্যুতের সাব-স্টেশন নির্মাণ
রানীনগরের আবাদপুকুর এলাকায় নির্মাণাধীন পল্লী বিদ্যুতের সাব-স্টেশন : নয়া দিগন্ত -

নওগাঁর রানীনগরের আবাদপুকুর এলাকায় পল্লী বিদ্যুতের সাব-স্টেশনের নির্মাণকাজ এক বছরেও শেষ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। ফলে একদিকে যেমন চলতি ইরি-বোরো মওসুমে উপজেলার প্রায় ১৯ হাজার হেক্টর ধানের জমিতে সেচ নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন কৃষক, অন্য দিকে এ মওসুমে প্রায় অর্ধলাখ গ্রাহক পড়তে পারেন ভোগান্তিতে।
নওগাঁ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাধীন রানীনগর সাব-জোনাল অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালে উপজেলার আটটি ইউনিয়নে গভীর-অগভীর নলকূপ, আবাসিক, বাণিজ্যিক, শিল্পপ্রতিষ্ঠানসহ ১৩ হাজার ৮২৯ জন গ্রাহকের বিপরীতে রানীনগর উপজেলার চকমুনু এলাকায় একটি সাব-স্টেশন নির্মাণ করা হয়। সেখান থেকেই পুরো রানীনগর উপজেলা বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এরপর গত ১০ বছরে তিনগুণ সংযোগ বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫২ হাজার ১৮০ জন। এসব গ্রাহক অধিক দূরত্ব থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের কারণে বেশির ভাগ সময় লো-ভোল্টেজ ও অনাকাক্সিক্ষত লোডশেডিং সমস্যার শিকার হন। বিশেষ করে ইরি-বোরো মওসুমে জমিতে পানি সেচ দিতে বিদ্যুৎচালিত গভীর-অগভীর নলকূপ চালাতে সমস্যা হয়। শিল্প কলকারখানায় উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া বৃহৎ উপজেলার কোথাও ঝড়বৃষ্টির কারণে গাছের ডাল ভেঙে অথবা কোনো সমস্যা দেখা দিলে স্টেশনটি বন্ধ রেখে কাজ করতে হয়। তখন পুরো উপজেলাবাসী ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। ফলে নানা রকম কাজকর্ম নিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে গ্রাহকদের।
উপজেলায় শুধুমাত্র একটি সাব-স্টেশন থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে গিয়ে গ্রাহকসেবার মান অনেকটাই ভেঙে পড়েছে। গ্রাহকদের দোরগোরায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে এবং সেবার মান উন্নয়নে ১০ মেগাওয়াট ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন আরো একটি সাব-স্টেশন নির্মাণ কাজের জন্য প্রকল্প হাতে নেয় কর্তৃপক্ষ। আবাদপুকুর এলাকায় জমি কিনে গত জানুয়ারি মাসে রাজশাহী ডিভিশনাল প্রজেক্ট-২ (আর আর ডিপি-২) এর আওতায় প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে সরকারি অর্থায়নে নির্মাণকাজ শুরু হয়। চলতি ইরি-বোরো মওসুমে সেচকার্য নির্বিঘœ করতে বেশ তোড়জোড় করেই নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। কিন্তু কাজের মাঝামাঝি সময়ে এসে অজানা কারণে ঝিমিয়ে পড়ে। স্টেশনটি চালু হলে রানীনগর চকমুনু স্টেশন থেকে চারটি ইউনিয়ন এবং আবাদপুকুর স্টেশন থেকে কালীগ্রাম, পারইল, একডালা ও বড়গাছা ইউনিয়নের জন্য চারটি ফিডারে ভাগ করে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। এতে একদিকে যেমন লো-ভোল্টেজের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে অন্য দিকে মেইন লাইনে কোনো লোডশেডিং থাকবে না। ফলে সব সময়ই কাক্সিক্ষতমানের ভোল্টেজে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ পাবেন গ্রাহকেরা। এতে করে উপজেলার অর্ধলক্ষাধিক গ্রাহক ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাবেন।
এ ব্যাপারে রানীনগর উপজেলার আমিরপুর গ্রামের গভীর নলকূপ মালিক রবীন সরদার ,ভাটকৈ গ্রামের আবু সাইদ, করজগ্রামের কাজী সাখাওয়াত হোসেন জানান, গত ইরি-বোরো মওসুমেই বিদ্যুতের ভেল্কিবাজি, লো-ভোল্টেজের কারণে অনেক বেকায়দায় পড়েছিলেন তারা। চলতি মওসুমের শুরুতেই গত কয়েক দিন ধরে বিদ্যুতের লো-ভোল্টেজ এবং তিনটি ফেজের মধ্যে একটি ফেজ না থাকায় সেচকাজে কিছুটা বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে। সাব-স্টেশনের নির্মাণকাজ দ্রুত শেষ করে কাক্সিক্ষত ভোল্টেজে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।
এ ব্যাপারে পল্লী বিদ্যুৎ রানীনগর সাব জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার আসাদুজ্জামন জানান, লাইনের শেষ প্রান্তে বিদ্যুৎ সরবরাহে ভোল্টেজের কিছুটা সমস্যা হলেও সেচের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না।
নওগাঁ জেলা পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির নির্বাহী প্রকৌশলী তৌহিদুল ইসলাম জানান, গ্রাহকদের ভোগান্তির কথা মাথায় রেখে দ্রুত কাজ চলছে। যদিও চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত কাজের সময় রয়েছে তারপরও আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যেই সাব-স্টেশনটি নির্মাণকাজ করতে পারবেন বলে আশা করছেন তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল