২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কম্বল

চারাগল্প
-

শীতের তীব্রতা আজ এতই বেশি যে, তামান্নার মোবাইল রীতিমতো ঠাণ্ডা হয়ে আছে। শীতল হাতে মোবাইলটা ধরে তামান্না শুভকে কল দেয়। কিন্তু ওপার থেকে লাইন কেটে দেয় শুভ। হঠাৎ তামান্নার মনে পড়ে আজ তো শুভর ব্যস্ত থাকার দিন। অসহায় শীতার্তদের আজ শুভ কম্বল বিতরণ করবে। প্রতি বছর শীতে বন্ধুদের নিয়ে দল বেঁধে এই কাজ করতে শুভ খুব আনন্দ পায়।
শুভ সম্ভ্রান্ত পরিবারের একমাত্র সন্তান, সোনার চামচ মুখে নিয়ে যার জন্ম। অন্য দিকে, তামান্না তার বিপরীত। সাধারণ এক কৃষকের মেয়ে সে। ভারি সুন্দরী হওয়ার সুবাদে শুভর ভালোবাসার শুভদৃষ্টি তামান্নার দিকে চলে যায়। নিজের পারিবারিক অবস্থার কথা ভেবে তামান্না প্রথম প্রথম শুভর প্রেমপ্রস্তাবকে সুকৌশলে প্রত্যাখ্যান করত। কিন্তু শুভ হাল ছেড়ে দেয়ার পাত্র নয়। তার মনের সবটুকুজুড়ে যে তামান্নার বসবাস, সে কথা বারবার তামান্নাকে বোঝায়। অবশেষে একদিন তামান্না বুঝে গেছে, শুভ তাকে সত্যি সত্যি মনে জায়গা দিয়েছে। তাই সেই জায়গায় নিজেকে বিলিয়ে দেয় তামান্না। শুভ তাতেই নিজেকে সার্থক ভাবতে শুরু করে।
না, আজ আর রোদ ফুটবে না মনে হয়। ঘড়ির কাঁটায় দুপুর ১২টা। এমন রোদহীন দিন অবশ্য ভালো লাগে তামান্নার। আরো ভালো লাগত যদি শুভর সাথে ফোনে কথা বলতে পারত। কিন্তু শুভ তার মহৎ কাজে ব্যস্ত। দুস্থদের কম্বল বিতরণ এতক্ষণে শেষ হলো কিনা কে জানে!
ফেসবুক ওপেন করতেই তামান্না দেখতে পায় শুভর কম্বল বিতরণ করার বেশ কয়েকটি ছবি। দশ মিনিট আগে শুভ ফেসবুকে ছবিগুলো পোস্ট করেছে। দ্বিতীয় ছবিটা দেখে তামান্নার বুক মোচড় দিয়ে উঠল। ছবিতে এ কাকে দেখছে সে! স্বয়ং তার বাবাকে। শুভ তামান্নার বাবার হাতে একটি কম্বল তুলে দিচ্ছেÑ এমন পোজে শুভ আর তামান্নার বাবা ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে আছে। দু’জনের মুখে হাসি। এই ছবি দেখে তামান্নার চোখে পানি চলে এলো।
২.
মকবুল আহমেদ বাড়ি ফিরলেন দুপুরে। তার হাতে একখানা কম্বল। মেয়েকে ডাকলেন মকবুল আহমেদÑ ‘কইরে মা, দেখে যা কী এনেছি! কম্বল। খুব বড় ঘরের এক ছেলে আজ আমাদের মতো গরিবদের কম্বল বিতরণ করেছে।’ তামান্না বাবার সামনে আসে। বাবার হাতে কম্বল। বাবার এই কম্বল গ্রহণ করার ছবি সে ফেসবুকে দেখেছে। মকবুল আহমেদ মেয়েকে বললেন, ‘দেখ মা, বেশ দামি কম্বল। তোর তো দামি কম্বলের শখ। নে, এটা তোর।’ তামান্না এক দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে উঠোনের পাশের ডালিমতলায় গিয়ে অঝোরে কাঁদতে লাগল। মকবুল আহমেদ কম্বল চকিতে রেখে মেয়ের পাশে এসে অবাক কণ্ঠে বললেন, ‘কান্দিস কেন মা! কিছুই তো বুঝলাম না।’ তামান্না চোখের পানি মুছতে মুছতে বলল, ‘বুঝতে হবে না বাবা। সব কিছু বুঝতে হয় না।’ মকবুল আহমেদ বিস্মিত চোখে মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকেন।
আমিশাপাড়া, নোয়াখালী।


আরো সংবাদ



premium cement