২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভাইবোনের গল্প : চারাগল্প

-

ভাতভর্তি থালায় বড় একটি ইলিশ মাছের টুকরো দেখে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না আকলিমা। বেগম সাহেবা মানুষটাকে আজো চিনতে পারছেন না সে। কখনো কখনো মনে হয় বেগম সাহেবা বড় দয়ালু, আবার কখনো কখনো বদের হাড্ডি। প্রায়ই ভাতের প্লেটে ভালো ভালো খাবার দেন, আবার মাঝে মাঝে সামান্য আলুভর্তা দিয়ে তেজী গলায় বলেন, ‘চুপচাপ খেয়ে নে। কাজের মেয়েদের ভালো খাবার দিতে হবে, এটা কোন কিতাবে লেখা আছে?’
আকলিমা সামান্য একটা কাজের মেয়ে। রোজ সকালে খান বাড়িতে কাজ করতে আসে। সারা দিনের সব কাজকর্ম শেষ করে রাত হলে বাড়ি ফিরে যায়। খান বাড়ি থেকে আকলিমাদের বাড়ির দূরত্ব বেশি নয়। হেঁটে গেলে মিনিট বিশেকের পথ।
ভাতের থালায় কেবল ইলিশের টুকরোই দেননি বেগম সাহেবা, সাথে বেগুন ভর্তাও। বেগুন ভর্তা বড় পছন্দের আকলিমার। ইলিশ মাছের টুকরোটি দেখে মিঠুকে মনে পড়ল। আহারে, ভাইটি অনেক বছর ইলিশ মাছ খায় না। প্রায়ই মিঠু বোন আকলিমার কাছে ইলিশ মাছের আবদার করে। ভাইয়ের আবদার কখনো রাখতে পারে না আকলিমা।
সেই ইলিশ মাছ দেখে এই ভরদুপুরে মিঠুকে বড্ড মনে পড়েছে। আকলিমা সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে মাছের টুকরোটি খাবে না। রাতে যাওয়ার বেলায় ভাইয়ের জন্য নিয়ে যাবে। বেগুন ভর্তা দিয়ে ভাত খেয়ে ইলিশের টুকরোটি পলিথিনের মুড়িয়ে কিচেনের এক কোণে রেখে দিলো।
রাত আটটা। বাড়ি ফেরার সময় হলো আকলিমার। ওড়নার তলে ইলিশের টুকরোটি লুকিয়ে রেখে সে যখন বের হতে যাবে, বেগম সাহেবা চোখ কপালে তুলে বললেন, ‘দেখি, তোর হাতে কী?’ পলিথিনে মোড়ানো ইলিশের টুকরোটি বের করে বড় লজ্জা পেয়ে আকলিমা বলল, ‘ইয়ে মানে...।’ কণ্ঠে হিংস্রতা এনে বেগম সাহেবার হুঙ্কার, ‘ওমা! তুই পাতিল থেকে তরকারি সরাতে কবে থেকে শুরু করেছিস?’
আসল সত্যটা বেগম সাহেবাকে বোঝাতে পারছে না আকলিমা। মাছ চুরি করেছে, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আকলিমার পিঠে এলোপাতাড়ি কিল বসিয়ে দিয়ে বেগম সাহেবা ইলিশের টুকরোটি কেড়ে নিয়ে খান বাড়ির বড় মেয়ে নাদিয়ার পোষা বিড়ালটার দিকে ছুড়ে মারলেন।
Ñকাল থেকে এ বাড়িতে আর আসার দরকার নেই। খান বাড়িতে চোর-ডাকাতের প্রশ্রয় দেয়া হয় না।
Ñআমি চুরি করিনি গো..., আল্লাহর কসম।
Ñআর একটা কথা বললে থানায় কল করে তোকে পুলিশের হাতে...
২.
রাতের আবছা আলোয় বাড়ি ফিরছে আকলিমা। চুরি না করেও তাকে চুরির সাজা পেতে হলো। কাল থেকে খান বাড়িতে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে, বেগম সাহেবা যে মুখের ওপর বলে দিয়েছেন। বড় কষ্ট হচ্ছে আকলিমার। মাস শেষে যে বেতনগুলো দিতেন বেগম সাহেবা, তা দিয়ে সংসারের অভাব কিছুটা দূর হতো। আজ সে পথটাও বন্ধ হয়ে গেল বিনা অপরাধে। মা-বাবাহীন এই অভাবের সংসারের ভার যে আর বইতে পারছে না আকলিমা। ছোট দুই ভাই মনির আর মিঠুকে নিয়ে তার ত্রিশ বছরের অবিবাহিত জীবন। মনির মেইন রোডে রিকশা চালায় গত বছর থেকে। মিঠু সেভেনে পড়ে।
ভাতে পানি ঢেলে শুকনো মরিচ ডলছে মিঠু। ঘরে ঢুকে এ দৃশ্য দেখে বুকটা খাঁ খাঁ করে উঠল আকলিমার। বোনকে দেখে মিঠু হেসে ডাকে, ‘আয় বুব্।ু’ ভাইয়ের পাশে এসে বসে আকলিমা। আজ যদি ইলিশের টুকরোটি পেত, না জানি কত খুশি হতো মিঠু। এটা ভাবতে গিয়ে আকলিমার বুকটা আবার খাঁ খাঁ করে উঠল।
বাইর থেকে মনিরের হাঁক ডাকÑ ‘কইরে মিঠু, দেখে যা কী এনেছি।’ মনিরের হাতে এক জোড়া টাটকা ইলিশ দেখে চোখ চকচক করে উঠল মিঠুর। আকলিমা অবাক চোখে ইলিশ মাছ দেখছে। এই ইলিশ মাছের জন্য আজ খান বাড়িতে সে কত যে অপদস্থ হলো। মনির বলল, ‘বুবু, অবাক লাগছে? আজ মাছের দাম কমে গেছে, এই সুযোগে দুটি কিনে ফেললাম। যা, মাছ কুটতে যা। আজ আমরা ইলিশ মাছ ভাজা খাবো।’
আকলিমা বঁটি নিয়ে বসেছে মাছ কুটতে। পাশে জ্বলছে মোমবাতি। আকলিমা এক মনে মাছ কুটছে, আর তার চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে।
আমিশাপাড়া, নোয়াখালী


আরো সংবাদ



premium cement
আশুলিয়ায় বাঁশবাগান থেকে নারী পোশাক শ্রমিকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার মিয়ানমারের কর্মকর্তারা ফেরত গেলেন, কিন্তু রোহিঙ্গা সঙ্কট কি আরো জটিল হচ্ছে দিনাজপুরে দুই ট্রাকের সংঘর্ষ, চালক-হেলপার নিহত মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২ সখীপুরে বৃষ্টির জন্য অঝোরে কাঁদলেন মুসল্লিরা দক্ষিণ ভারতে কেন কাজ করেনি বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের নতুন আংশিক কমিটি বাংলাদেশের হাসপাতাল ও চিকিৎসায় বিনিয়োগ সম্ভাবনা অন্বেষণে থাইল্যান্ডের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান ট্রাম্পের বিচার নিয়ে বিভক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট চুয়েট শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত, ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত আমদানি ব্যয় কমাতে দক্ষিণাঞ্চলের সূর্যমুখী তেলের আবাদ

সকল