২১ মে ২০২৪, ০৭ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ১২ জিলকদ ১৪৪৫
`


অনুভূতির ঈদ

ঈদ আয়োজন
-

টুকরো টুকরো খুশিগুলো জোড়া দিতাম ঈদের সময়। আমি কৈশোরের ঈদের কথা বলছি। আহ! ঈদের আগের দিন সন্ধ্যায় চাঁদ দেখার পর থেকে খুশিগুলো বাঁধ ভাঙা জোয়ারে উপচে পড়ত। লাল-নীল আনন্দগুলো আরো রঙিন হতো। নতুন জামা জড়িয়ে ধরে রাতে ঘুমিয়ে পড়তাম। আগামীকাল যেন খুশির কোনো ঝড়-তুফান আসবে এমন অনুভূতি হতো! সকালে দাপিয়ে গোসল করে নতুন জামা গায়ে দিয়ে সবার সাথে ঈদগাহে যেতাম। ঈদের নামাজ শেষে নতুন নোটের আশায় ঘন ঘন মুরব্বিদের সালাম করতাম। কিছু টাকা খরচ করে দোকানির কাছে নিজের মর্যাদা বৃদ্ধি করতে চেষ্টা থাকত।
ঝগড়া আর মনমালিন্য হওয়া বন্ধুটির সাথে ঈদ উপলক্ষে কোলাকুলি করে মিটমাট হয়ে যেত সবকিছু। এর পর একে একে সবার ঘরে গিয়ে কিছু খেয়ে নিজের পেট টাইট করে হৈ-হুল্লোড়ে মেতে উঠতাম সমবয়সীরা। আমাদের এ আনন্দের ছোঁয়া বড়দের মধ্যেও বিস্তার লাভ করত।
এখনো ঈদ আসে। তবে ঈদের সে অনুভূতিগুলো কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। এখনকার ঈদে কিশোরদের কাছে লাল-নীল স্বপ্নেরা আর ভিড় করে না। তাদের কাছে নতুন নোটের আকর্ষণ হারিয়ে গেছে। মনমালিন্য থাকা বন্ধুটির সামনে দিয়ে কেউ আর হাঁটে না কোলাকুলি করার ভয়ে। সবাই এখন নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে। আগের মতো মানুষের কাছে মানুষ আর ছুটে আসে না। আনন্দ ভাগ করে নিতে চায় না। তবে কেউ কেউ শুধু আনন্দে থাকার অভিনয় করে...। যা হোক, ছোট বোনের চাপাচাপিতে ঘর থেকে বের হলাম। রাস্তার ধারে এসে দাঁড়িয়ে আবারো অন্যমনস্ক হয়ে গেলাম। এ রাস্তা ধরেই কত ছুটোছুটি হতো সে হারিয়ে যাওয়া ঈদগুলোতে! অথচ সেই রাস্তা আজ কতটা নীরব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ডিজিটালের ছোঁয়া আজ সব ঈদের কোলাহল কেড়ে নিয়েছে। যারা ছুটোছুটিতে ব্যস্ত থাকার কথা তারা আজ হাতের ডিজিটাল মোবাইলে মাথা ঝুঁকে সময় পার করছে। কেউবা চার দেয়ালের মাঝে টিভি সিরিয়াল নিয়ে মগ্ন। এভাবে হুট করে কেটে যায় ঈদের দিন।
ইচ্ছে করে ঈদের দিন আকাশ পানে তাকিয়ে চিৎকার দিয়ে বলে উঠি। হে সৃষ্টিকর্তা ঈদের হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি আর খুশিগুলো ঠিক আগের মতো ফিরিয়ে দাও!
ছাগলনাইয়া, ফেনী

 


আরো সংবাদ



premium cement