২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

  মুক্তা আপু

-

মুক্তা আপু আসে না, দেরি করে, আমি আপুর জন্য বসে থাকি। দুপুর সাড়ে ১২টার কিছু বেশি বাজতেই আপুদের বাসার গ্রিলের আশপাশে হাঁটাহাঁটি করি।
ওদের রান্নাঘরের জানালায় উঁকি দিলে আন্টিকে দেখা যায়। খুব কষ্টে পায়ের পাতায় ভর দিয়ে উঁচু হয়ে আন্টিকে জিজ্ঞেস করি,
‘মুক্তা আপুর স্কুল কখন ছুটি? হেঁটে আসতে কতক্ষণ লাগবে?’
আন্টি হাসেন। খুন্তি দিয়ে তরকারিতে একটা নাড়া দেন। চুলাটা একটা কাপড় দিয়ে মোছেন।
‘চলে আসবে একটু পরেই। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলে মুক্তা আপুর সাথে দেখা হয়। মই পেরিয়ে ছাদে উঠে আমরা গান গাই। আপু ফুলগাছে পানি দেয়। ধনেপাতাগাছের আগাছা উঠায়। আমি আঙুল দিয়ে হাজারী গোলাপ গুনি! তারপর দেয়ালের ওপর বসে আপুর স্কুলের বান্ধবীদের গল্প শুনি। একজন বান্ধবীও যাতে মিস না হয়, রোল নাম্বার এক থেকে শুরু করি।
সন্ধ্যা হলে আমার মন খারাপ হয়। মুক্তা আপু পড়তে বসে। আমার পড়া নাই। আমি দাদুবাড়ি বেড়াতে এসেছি। হাতে একটা গল্পের বই নিয়ে বিড়বিড় করে দোয়া করি, কারেন্ট যেন চলে যায়! বলতে-না-বলতেই টুপ করে সব অন্ধকার হয়ে যায়। ভ্যাপসা গরম থেকে বাঁচতে আবার ছাদে যাই। অনেক কথার মাঝে হুট করে নারিকেলগাছ থেকে দুটি কালো বেড়াল লাফিয়ে পড়ে। মোটা স্বরে মিউ মিউ করে। আমরা দোয়া ইউনুস পড়ি। আলোর গতিতে ছাদ থেকে নেমে বুকে থুথু ছিটাই!
রাতে খেয়ে পায়চারী করি। পেছনের দরজাটা খুলে দিলে আমি মুক্তা আপুর ঘরে ঢুকে পড়ি! ওর সাথে রাতে ঘুমানো আমার জন্য অ্যাডভেঞ্চার। আপুর ফিটফাট ছোট ঘর। ধুলাবালির দানা অবধি নেই! আমার মতো নৌকার আকারে মশারি টাঙায় না। একেবারে বিজ্ঞাপনচিত্রের মতো টানটান করে টাঙায়, পাপোশে পা মুছে খাটে উঠি।
সকালের পর কাঁচা আমের ভর্তা বানাতে বানাতে আর বিকেলে বৌচি-এলোন্ডি লন্ডন খেলতে খেলতে একদিন ছুটি ফুরিয়ে যায়। আমরা একদিন রেডি হই। ট্রেনের সময় হলে হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে যাই। মুক্তা আপুদের দুটি জানালা রাস্তামুখী। এক জানালা দিয়ে আমাকে আর দেখা না গেলে আপু পরের জানালায় যায়। আমরা হাত ধরি।
মিরপুর, ঢাকা


আরো সংবাদ



premium cement