২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অভিশপ্ত আঙিনা

-

আমার এ আঙিনায় ঋতু বৈচিত্র্য বড্ড বেশি। কত রকম ছলনায় যে প্রকৃতি ভোলাতে চায় মানবেরে! কিন্তু আমার এ আঙিনায় প্রকৃতির ছলাকলা কেউ দেখে না। বেলীফুলের গন্ধে কোনো আনমনা পথিক এই আঙিনায় এসে বসে না দু-দণ্ড, বকুল ফুলেরা একা একাই সারা বাড়ি মাতানোর প্রতিযোগিতায় নামে। মৃদু হাওয়া বকুলের গন্ধ নিয়ে ফিরে ফিরে আসে, কিন্তু পুকুরপাড়ের মাচায় কিংবা পুকুরঘাটে কোনো বাউল তার গানের পসরা সাজায় না। হয় না কোনো মন উদাস-বেখেয়ালি। হাসনাহেনা ফুলগুলো বড্ড নমনীয়, লাজুক।
কত রকম রাতজাগা পাখির আনাগোনা এই আঙিনায়। তবুও কোনো বংশীবাদক তার বাঁশিতে বুঁদ হয়ে রাত পাড় করেনি কখনো। আমার এই আঙিনায় বৃষ্টির রূপ বড় মোহনীয়। কিন্তু কদম ফুলের গা ছুঁয়ে গড়িয়ে পড়া জলে ধৌত করেনি কেউ কখনো তার ক্লান্ত শরীর। বৃষ্টির ফোঁটা হাতের মুঠোয় বন্ধী করে কেউ তার প্রেয়সীর চোখে ছিটিয়ে করেনি কোনো খুনসুটি। সকালের ¯িœগ্ধ রোদ এসে হুটোপুটি খায় কত নাম নাজানা গাছেদের ভিড়ে। আমার আঙিনায় প্রভাকর এত কোমল হয়ে তার রূপের পসরা সাজায়! তবুও কেন জানি, আমার আঙিনায় কখনো কোনো সন্ন্যাসী ধ্যানে মগ্ন হয়নি। কত রকমের প্রজাপতি খেলা করে আমার এই ছোট্ট আঙিনায়। হলুদ, সাদা, লাল-কালো, সাদা-নীলের মিশেল, ছোট-বড়-মাঝারি কত রকমের প্রজাপতি! ঘাসফড়িং, ভ্রমোরেরাও খেলা করে, ফুলের সাথে তাদের প্রণয় হয়। এই আঙিনার নাম নাজানা কত ফুলের সাথে প্রেম হয় কত নাম নাজানা প্রজাপতির! তারা জানে তারা সবাই ক্ষণিকের অতিথি। তার জন্যই হয়তো কেউ কারো পরিচয় জিজ্ঞেস করে না।
ফুলদের চুমু খায় প্রজাপতিরা, ফুলেরা তাদের মধু দেয়। এই আঙিনা কত জীবনের রসদ জোগায়! কিন্তু এই আঙিনায় খেলা করে না কোনো শিশু, খলখলিয়ে হেসে ওঠে না কোনো মানবফুল, টলমলে পা নিয়ে প্রজাপতি, ঘাসফড়িংয়ের পেছনে দৌড়ায় না ছোট্ট কোনো ভালোবাসা।
আমার এই আঙিনা অভিশপ্ত বড়। তবুও আমি এই আঙিনায় প্রাণের সঞ্চারে অপচয় করি কত সময়, কত শক্তি, কত ভালোবাসা! কত অপমান, কত ইঙ্গিতময় অবহেলা জোটে কপালে। তবুও জানি না কিসের আশায়, কার প্রতীক্ষায় আমি আমার আঙিনা সাজাই! হয়তো মনের কোনো অন্তরালে অপেক্ষায় থাকি, কোনো এক সময়ের। যখন সব অভিশপ্ততা কেটে যাবে। দু’টি চোখ, একটি মন এই আঙিনার প্রেমে পড়বে!


আরো সংবাদ



premium cement