২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

স্ত্রীকে শেষ কথা : ‘আমি হয়তো আর বাঁচবো না, আমার জন্য দোয়া করো’

বনানী এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডে নিহত মির্জা আতিকের স্ত্রী পলির আহাজারি। (ডানে) নিহত মির্জা আতিকুর রহমান - নয়া দিগন্ত

ঢাকার বনানী এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত হন মির্জা আতিকুর রহমান। আর এই ঘটনার পর নিহত আতিকের শরীয়তপুরের গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। শুক্রবার সকালে নিহতের লাশ শরীয়তপুর সদর উপজেলার সারেঙ্গা গ্রামে নিজ বাড়িতে আনার পর এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।

এসময় স্ত্রী-সন্তান, আত্মীয় স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীদের কান্না-আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। নিহত আতিকের মা পুত্র শোকে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। এদিকে নিহতকে শেষবারের মতো দেখার জন্য শত শত উৎসুক জনতা ভিড় জমায়। পরে শুক্রবার বাদ জুমআ নিহতের জানাযা শেষে সারেঙ্গা গ্রামের জামে মসজিদ কবরস্থানে দাফন করা হয়।

নিহত আতিকের স্ত্রীর বড় ভাই মুকুল খান জানান, শরীয়তপুর সদর উপজেলার সারেঙ্গা গ্রামের মৃত আব্দুল কাদির মির্জার ছেলে মির্জা আতিকুর রহমান বনানীর স্ক্যান অয়েল কোম্পানীতে প্রায় ১৫ বছর ধরে এক্সিকিউটিভ পদে কর্মরত ছিলেন। তিনি স্ত্রী এ্যানি আক্তার পলি, চতুর্থ শ্রেনীতে পড়ুয়া মেয়ে তানহা (১০) ও ছেলে রাফিউর রহমান (৪) নিয়ে ঢাকার মানিকদি এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন।
তিনি আরো বলেন, প্রতিদিনের ন্যায় বৃহস্পতিবার তিনি এফআর টাওয়ারের ১৩তলায় কর্মস্থলে যান। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর বেলা আনুমানিক ১টার দিকে স্ত্রীকে ফোনে ভবনে আগুন লাগার সংবাদ দেন এবং দোয়া করতে বলেন। এসময় তিনি স্ত্রীকে বলেন, পুরো ভবনে আগুন লেগে ধোয়ায় অন্ধকার হয়ে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। আমি শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারছি না। হয়তো আমি আর বাচবো না। আমার জন্য দোয়া কর।

মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগে দুপুর ১:১০ মিনিটে তার স্ত্রীর বড় ভাই মুকুল খানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে শেষ কথা হয়। এ সময় তিনি মোবাইল ফোনে বলেন, এখান থেকে বের হওয়ার কোনো রাস্তা খুজে পাচ্ছি না। আমার স্ত্রী সন্তানদের দেখে রাখবেন। এর কিছুক্ষণ পর আতিকের মোবাইলে আর সংযোগ পাওয়া যায়নি।

সর্বশেষ বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আতিকের কাছে থাকা মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে স্বজনদের জানায়- কুর্মিটোলা হাসপাতালে আতিকের লাশ নেয়া হয়েছে। সেখানে গেলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায় আতিকের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

পরে মুকুল খানসহ অন্যান্য স্বজনরা রাত সাড়ে ১০টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে নিহতের লাশ সনাক্ত শেষে গ্রহণ করেন। শুক্রবার সকাল ১১টায় আতিকের লাশ তার শরীয়তপুরের গ্রামের বাড়িতে পৌছায়।

লাশ গ্রামের বাড়িতে নেয়ার পর এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। স্ত্রী-সন্তান, আত্মীয় স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীদের কান্নায় বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।

নিহত আতিকের স্ত্রী এ্যানি আক্তার পলি এসময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আগুন লাগার পর আতিক আমাকে ফোন দিয়ে বলে- পলি তুমি কি বাসায় এসেছো। আমার জন্য দোয়া করো। আমার পুরো ফ্লোর অন্ধকার হয়ে আসছে। আমি নিঃশ্বাস নিতে পরছি না। এই শেষ কথা আর আমার সাথে কথা হয়নি। আমার সবশেষ হয়ে গেছে। আমি এখন কি নিয়ে বাঁচবো।


আরো সংবাদ



premium cement