২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

চট্টগ্রামে গ্যাসনির্ভর সব বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও সার কারখানা বন্ধ

-

গ্যাস রেশনিং করেও পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম অবস্থা বন্দরনগরী চট্টগ্রামে। গ্যাসসঙ্কটের কারণে অধিকাংশ সময় বন্ধ রাখতে হচ্ছে চট্টগ্রামের গ্যাসনির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং রাষ্ট্রায়ত্ত সারকারখানা সিইউএফএল। তবে এবার পরিস্থিতি এতটাই নাজুক যে, গ্যাসনির্ভর সব বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও সারকারখানা বন্ধ রাখা হয়েছে। তবুও বাসাবাড়িতে রান্নার গ্যাসের সঙ্কট কাটছে না। পাশাপাশি শিল্পকারখানার উৎপাদনেও গলদঘর্ম অবস্থা।
পেট্রোবাংলার সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী চট্টগ্রামে গ্যাসনির্ভর তিনটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চারটি ইউনিট এবং রাষ্ট্রায়ত্ত সারকারখানা সিইউএফএল ও বহুজাতিক সারকারখানা কাফকো গত মঙ্গলবার পর্যন্ত বন্ধ ছিল গ্যাসসঙ্কটের কারণে।
গ্যাসের চাপ সঙ্কটে বিস্তীর্ণ এলাকার বাসাবাড়ির রান্নাবান্না প্রায় বন্ধই থাকছে প্রতিদিন। ফলে উচ্চ ভোল্টেজের বৈদ্যুতিক সামগ্রী যেমন রাইস কুকার, ইলেকট্রিক কেটলি, ইনডাকশন কুকার, ওয়াটার হিটার, মাইক্রোওভেন ইত্যাদির ব্যবহার অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। এতে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থায়ও মারাত্মক চাপের মুখে পড়েছে। কিন্তু গ্যাসসঙ্কটে আবার বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ থাকায় বিদ্যুৎ বিভাগ চাহিদানুযায়ী বিদ্যুতের যোগান দিতে পারছে না। ফলে গ্যাস এবং বিদ্যুৎ উভয়েরই ঘাটতি চট্টগ্রামের মানুষকে দারুণভাবে ভোগাতে হচ্ছে।
এদিকে এতদিন ২০০ মিলিয়ন ঘনফুটের কাছাকাছি গ্যাস সরবরাহ দেয়া হলেও বর্তমানে কিছুদিন পরপরই তা কমে যাওয়ায় পরিস্থিতি নাজুকপর্যায়ে ঠেকেছে। এর বাইরে আমদানিকৃত এলএনজি পাইপলাইনে যুক্ত হওয়ার বিষয়টিও ঝুলে আছে। তা ছাড়া এলএনজি পাইপলাইনে যুক্ত হওয়ার পর গ্যাসের বাড়তি দাম গোনার ভীতিও রয়েছে এখানকার গ্রাহকদের।
পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী গত মঙ্গলবার চট্টগ্রামের গ্যাসনির্ভর রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা চিটাগং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল), বহুজাতিক কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি (কাফকো), রাউজান তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১৮০ মেগাওয়াট উৎপাদন মতার পৃথক দু’টি ইউনিট, শিকলবাহা ৪০ মেগাওয়াট ও ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র গ্যাস সরবরাহ দিতে না পারায় শাটডাউনে (বন্ধ) ছিল।
গত মঙ্গলবার চট্টগ্রামে ১৭০.৩ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দেয়া হয়। এর মধ্যে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর ১৫০ মিলিয়ন ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে গ্যাস সরবরাহ দেয়া হয় মাত্র ৩.৫ মিলিয়ন ঘনফুট। এ ছাড়া কাফকো ও সিইউএফএল-এর ১১৫ মিলিয়ন ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে ৭.২ মিলিয়ন ঘনফুট, আবাসিক ও অন্যান্য বাণিজ্যিক গ্রাহক মিলে ১৫৯.৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দেয়া হয়।
কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানি (কেজিডিসিএল) কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, একদিকে সারা দেশের চাহিদার তুলনায় গ্যাসের সরবরাহ কম, অন্যদিকে চট্টগ্রামের লাইন অপোকৃত শেষপ্রান্তে (ডাউনস্ট্রিমে) হওয়ায় এখানে চাপ সঙ্কটও প্রবল। লাইনে যা গ্যাস আসছে তা শুরুতেই তিতাশ এবং বাখরাবাদ নেয়ার পর এদিকে আসতেই চাপ কমে যাচ্ছে। এমনিতেই কম সরবরাহ, এর ওপর চাপ সঙ্কটের মাঝে আমরা আছি। এলএনজি গ্যাস এলেই পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে তারা জানান।
পেট্রোবাংলার ২০১৪ সালে প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৬ সালে চট্টগ্রামে তথা কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানির গ্যাসের চাহিদা হবে দৈনিক ৪৪৯ মিলিয়ন ঘনফুট। ২০১৭ সালে তা বেড়ে দাঁড়াবে দৈনিক ৫১২ মিলিয়ন ঘনফুটে।


আরো সংবাদ



premium cement