৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


‘বোয়িংয়ের গুণমান নিয়ে প্রশ্ন তোলার কারণেই জন বারনেটের মৃত্যু’

‘বোয়িংয়ের গুণমান নিয়ে প্রশ্ন তোলার কারণেই জন বারনেটের মৃত্যু’ - ছবি : সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের সাবেক কর্মকর্তা জন বারনেটের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির তৈরি উড়োজাহাজের মান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করার পর আলোচনায় আসেন তিনি। এরপর তার ওপর চাপ আসতে থাকে বিভিন্ন দিক থেকে। গত ৯ মার্চ সাউথ ক্যারোলাইনার চার্লসটনে ট্রাকের ভেতরে লাশ মেলে বারনেটের। এ ঘটনার এক সপ্তাহ পরে আজ আরো চাঞ্চল্য ছড়াল তার বন্ধুর বয়ান।

বোয়িং কোম্পানিতে ৩২ বছর কাজ করেছেন জন বারনেট। ২০১৭ সালে তিনি অবসরে যান। মৃত্যুর কয়েক দিন আগেও বোয়িংয়ের বিপক্ষে করা মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন বারনেট।

সংবাদমাধ্যমে জেনিফার নামে এক মহিলা দাবি করেন, জন বারনেট তাকে বলেছিলেন,‘আমার যদি কিছু হয়, জানবে সেটা আত্মহত্যা নয়।’

জন বারনেট লাশে ক্ষত ছিল। যা দেখে প্রাথমিক তদন্তে জানানো হয়, ৬২ বছর বয়সী বৃদ্ধ‘আত্মহত্যা’ করেছেন। কিন্তু তার বন্ধু জেনিফার সেই দাবি নস্যাৎ করে দিয়েছেন। জেনিফারের কথায়,‘জন বারনেট কিছুতেই আত্মহত্যা করতে পারেন না।’

বোয়িংয়ের বিরুদ্ধে মামলা চলছে। জেনিফার জানতেন, জন বারনেট তার বয়ানের সমর্থনে আদালতের কাছে বেশ কিছু প্রমাণ দাখিল করেছেন। জন জানিয়েছিলেন, বোয়িংয়ের কর্মীদের ক্রমাগত চাপে রাখা হয়।
২০১০ সালে বোয়িংয়ের নর্থ চার্লেস্টন কারখানায় গুণমান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপক (কোয়ালিটি ম্যানেজার) হিসেবে কাজ করেছেন বারনেট। ওই কারখানাতে বোয়িংয়ের ৭৮৭ ড্রিমলাইনার তৈরির কাজ হয়ে থাকে।

২০১৯ সালে বারনেট বিবিসিকে বলেছিলেন, নির্মাণকাজ চলার সময় চাপের মুখে বোয়িংয়ের কর্মীরা অনিচ্ছা সত্ত্বেও উড়োজাহাজে নিম্নমানের সরঞ্জাম ব্যবহার করেন।

৭ ড্রিমলাইনারের জরুরি অক্সিজেন ব্যবস্থায়ও গুরুতর সমস্যা খুঁজে পাওয়ার দাবি করেছিলেন বারনেট। পরীক্ষা চালিয়ে তিনি দেখেছেন, জরুরি অবস্থায় শ্বাস গ্রহণের ক্ষেত্রে যে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, তার ২৫ শতাংশই অকার্যকর। অর্থাৎ প্রতি চারটি মাস্কের একটি কাজ না করার আশঙ্কা আছে। অর্থাৎ, কোনো জরুরি পরিস্থিতি দেখা দিলে, এক-চতুর্থাংশ অক্সিজেন মাস্ক কাজ করবে না।

বারনেট আদালতে জানিয়েছিলেন, তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টা নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছিলেন, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।

আদালতে সাক্ষ্য দেয়ার পর থেকে সংস্থাটির দিক থেকে বারনেটের ওপরে চাপ আসতে থাকে। সম্প্রতি বারনেটের সাথে দেখা হয়েছিল জেনিফারের। ওই সময়ে মামলা নিয়ে দু’জনের আলোচনা হয়।

জেনিফার সংবাদমাধ্যমকে জানান, শেষ বার যখন দেখা হয়েছিল, তিনি বারনেটকে জিজ্ঞাসা করেন তার ভয় লাগছে কি না। উত্তরে জন বলেছিলেন,‘না, আমি ভয় পাচ্ছি না। তবে আমার যদি কিছু হয়, জানবে আমি আত্মহত্যা করিনি।’

জেনিফার আরো বলেন,‘বারনেট জন কিছুতেই আত্মহত্যা করতে পারেন না। উনি জীবনকে ভালবাসতেন, প্রাণবন্ত ছিলেন।’

জেনিফারের দাবি, ওর মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করে যাচ্ছিল কেউ বা কারা। বোয়িং সম্পর্কে বারনেট জন যা ফাঁস করে দিয়েছিলেন, তা অনেকেরই পছন্দ হয়নি। জেনিফার বলেন,‘ওর মৃত্যুটাকে কায়দা করে আত্মহত্যা হিসেবে দেখানো হয়েছে।’

অবসরে যাওয়ার পর বারনেট বোয়িংয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ওই মামলায় সাক্ষ্য দেয়ার জন্য চার্লেস্টনে ছিলেন তিনি। সেখানেই তার মৃত্যু হয়েছে।

গত সপ্তাহে এ মামলায় একটি আনুষ্ঠানিক জবানবন্দি দিয়েছেন বারনেট। তা নিয়ে বোয়িংয়ের আইনজীবীরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছিলেন। শনিবার আবারও তার জিজ্ঞাসাবাদে অংশ নেয়ার কথা ছিল। তিনি উপস্থিত না হওয়ায় তার হোটেল কক্ষেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। ওই হোটেলেরই পার্কিংয়ে একটি গাড়ির ভেতর থেকে তার লাশ উদ্ধার হয়।


আরো সংবাদ



premium cement