তুরস্কে ২০১৬ সালের ১৫ জুলাইয়ের অভ্যুত্থানচেষ্টায় ন্যাটোর দ্বিতীয় বৃহত্তম সামরিক বাহিনীর অধিকারী দেশটির মাত্র ১.৫ ভাগ সদস্য জড়িত ছিল বলে জানা গেছে।
টার্কিশ জেনারেল স্টাফের প্রেস অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স ডিপার্টমেন্টের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, অভ্যুত্থানচেষ্টায় মোট ৮,৬৫১ সৈনিক জড়িত ছিল। এদের মধ্যে ১,৬৭৬ জন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশে এতে জড়িয়ে পড়েছিল। এদের ১,২১৪ জন আবার ক্যাডেট। এ খবর দিয়েছে ডেইলি সাবাহ।
ডেইলি সাবাহর ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, অভ্যুত্থানচেষ্টায় জড়িতরা ফেতুল্লাহ গুলেনের সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের সদস্য।
সামরিক বাহিনীর বিবৃতির ভাষ্যমতে, অভ্যুত্থানচেষ্টায় ২৪টি জঙ্গিবিমানসহ ৩৫টি বিমান ব্যবহৃত হয়েছিল, যা মোট বিমানের সাত শতাংশ।
এতে আরো বলা হয়, অভ্যুত্থানচেষ্টায় ৮টি অ্যাটাক হেলিকপ্টারসহ ৩৭টি হেলিকপ্টার (যা মোট সংখ্যার প্রায় ২.৭ ভাগ), ১৭২টি সাজোয়া যান, ৭৪টি ট্যাংক ব্যবহৃত হয়েছিল। বিদ্রোহীরা তিনটি জাহাজও ব্যবহার করেছিল।
অভ্যুত্থানে ২৪৬ বেসামরিক এবং নিরাপত্তা সদস্য নিহত হন।
সূত্র : ডেইলি সাবাহ
আরো পড়ুন :
৩টি হেলিকপ্টার ছুটে গিয়েছিল এরদোগানকে হত্যা করতে
তুরস্কে ২০১৬ সালের ব্যর্থ অভ্যুত্থানের সময় প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানকে হত্যা করার জন্য তিনটি সামরিক হেলিকপ্টার পাঠানো হয়েছিল। তিনি তখন দক্ষিণ-পশ্চিম তুরস্কের মারমারায় অবকাশ যাপন করছিলেন। সেখানেই তাকে হত্যা কিংবা বন্দি করার জন্য পাঠানো হয়েছিল হেলিকপ্টারগুলো।
তুর্কি দৈনিক হুরিয়াত এবং আল জাজিরা ব্যর্থ অভ্যুত্থানের বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানিয়েছে।
হুরিয়াতের খবরে বলা হয়, ফার্স্ট আর্মির কমান্ডার উমিত দান্দার শুক্রবার দিবাগত রাতে (অভ্যুত্থানের এক ঘণ্টা আগে) এরদোগানের সাথে যোগাযোগ করে অভ্যুত্থান শুরু হওয়ার বিষয়টি জানাতে পেরেছিলেন। এই খবর পেয়েই এরদোগান হোটেল ত্যাগ করেছিলেন। বিদ্রোহী সৈন্যরা যখন সেখানে পৌঁছে, তার আগেই তিনি সরে পড়েছিলেন।
অভ্যুত্থানের সময় বিদ্রোহীরা সেনাপ্রধানকে আটক করেছিল। পরে এরদোগান এই জেনারেল দান্দারকে ভারপ্রাপ্ত সেনাপ্রধান নিয়োগ করেছিলেন।
অভ্যুত্থানের আগে এরদোগানকে দান্দার বলেছিলেন, 'আপনিই আমাদের বৈধ প্রেসিডেন্ট। আমি আপনার পক্ষে আছি। এটা একটা মারাত্মক ক্যু। আঙ্কারার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। ইস্তাম্বুলে আসুন। আমি সেখানকার সড়ক এবং অন্যান্য ব্যবস্থা ঠিক করে রাখব।'
হুরিয়াত জানায়, প্রেসিডেন্ট হোটেল ত্যাগ করার আধা ঘণ্টা পর ৪০ জন বিদ্রোহী সৈন্য ঝড়ের বেগে সেখানে প্রবেশ করে। কিন্তু ততক্ষণে এরদোগান ইস্তাম্বুল রওনা হয়ে গেছেন।
হোটেলে প্রেসিডেন্টের দেহরক্ষীদলের সাথে বিদ্রোহীদের সংঘর্ষ হয়। এতে বিদ্রোহীরা পরাজিত হয়। তাদের একটি হেলিকপ্টারও বিধ্বস্ত হয়। তারা তখন পার্বত্য এলাকায় পালিয়ে যায়।
আরো পড়ুন :
অভ্যুত্থানের খবর শুনে ওজু করে নামাজ পড়ে নেন এরদোগান
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েপ এরদোগানের মেয়ের জামাই বলেছেন, ১৫ জুলাইয়ের অভ্যুত্থানের খবর শুনে তার শ্বশুর শান্তভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছিলেন। কোনো ধরনের অস্থিরতা প্রকাশ পায়নি তার আচরণে। তিনি প্রথমেই ওজু করে নামাজ পড়ে নেন। তিনি দৃঢ়ভাবে জানিয়েছিলেন, তার এখনই ইস্তাম্বুলে ফেরা দরকার।
অভ্যুত্থানের সময় এরদোগান ছিলেন কৃষ্ণসাগরীয় মারমারিস নগরীতে। তার সাথে তার স্ত্রী, মেয়ে, মেয়ের জামাই, নাতি-নাতনিরা ছিলেন।
মেয়ের জামাই বেরাত আলবেরাক শীর্ষস্থানীয় নিউজ নেটওয়ার্ক তুর্কোভাজ মিডিয়াকে অভ্যুত্থানচেষ্টার সময়কার অবস্থা জানান।
আলবেরাক বলেন, প্রেসিডেন্ট এরদোগান পুরো রাত ছিলেন শান্ত ও সংযত। তিনি দ্রুত বিমানযোগে ইস্তাম্বুল ফিরতে চাইছিলেন।
তিনি বলেন, তিনি দৃঢ়তার সাথে নেতৃত্ব দেন।
তিনি বলেন, ইস্তাম্বুল যদি অভ্যুত্থানকারীদের হাতেই থেকে যেত, সেক্ষেত্রে এরদোগানের কাছে বিকল্প ছিল চারটি নগরী : বদরাম, দালামান, ইজমির ও আইদিন। এরদোগান একেবারে শেষ মুহূর্তে তার গন্তব্য সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
আলবেরাক বলেন, বলেন, বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে হুঁশিয়ারি পেয়ে আমরা সরকারি নির্বাহীদের সাথে সাথে যোগাযোগ করি। আমরা প্রথমে কথা বলি প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিমের সাথে। সময় অতিক্রমের প্রেক্ষাপটে আমরা বুঝতে পারি, এটা একটা অভ্যুত্থানচেষ্টা। আমরা এটা রাত সাড়ে ৯টা থেকে ১০টার (স্থানীয় সময়) মধ্যে বুঝতে পারি।
তিনি গোয়েন্দা বিভাগের দুর্বলতার কথাও জানান।
তিনি বলেন, আমাদের ওপর দিয়ে তিনটি হেলিকপ্টার পর্যবেক্ষণমূলক টহলে ছিল। আমরা একইসাথে জাতীয় মিডিয়াগুলোতে ফোন করতে থাকে, কী ঘটেছে তা জানতে। আমরা ফোনের মাধ্যমেই কেবল সরাসরি সম্প্রচার করতে সক্ষম হয়েছিলাম।
তিনি বলেন, এরদোগান ওজু করে নামাজ পড়ে নেন। তারপর তিনি হেলিকপ্টারের দিকে হাঁটতে শুরু করেন।
তিনি বলেন, জঙ্গিবিমানগুলো আক্ষরিকভাবেই আমাদের ৫০ মিটার দূর দিয়ে উড়ছিল। আমরা কাউকে কিছু জানান না দিয়ে অনেকটা ভূতের মতো ইস্তাম্বুলে অবতরণ করি।