কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের কালিটি চা বাগানে লছমনিয়া রবি দাস (৪৫) নামক এক চা শ্রমিক মহিলা পিকআপ ভ্যানের চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা গেছেন। স্থানীয় ২ ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা ব্লাডমানি প্রদানের মাধ্যমে বিষয়টি আপোষ নিষ্পত্তি করা হয়। এ নিয়ে চা শ্রমিকদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
স্থানীয় লোকজন জানান, বৃহস্পতিবার সকালে বাগানের টিলাক্লার্ক বলরাম অলমকি নিজের বসতঘরের কাজের জন্য ব্রিকফিল্ড থেকে ইট কিনে পিকআপ যোগে আনছিলেন। ইট ভর্তি ঐ ভ্যান (ঢাকা মেট্রো-ন ১৫-৬৬১৪) গাড়ীটি বাগানের নতুন লাইন এলাকায় গিয়ে ইট আনলোড করার জন্য দাড়ায়। এসময় বাগানের শ্রমিক মৃত শ্রীজন রবিদাসের স্ত্রী লছমনিয়া রবিদাস ফাড়ি রাস্তা থেকে মেইন রাস্তায় আসার সময় পিকআপ ভ্যানের চালক হঠাৎ গাড়ীটি ব্যাক করতে গিয়ে লছমনিয়ার উপরে চাকা তুলে দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই শ্রমিক মহিলার মৃত্যু হয়। বিক্ষব্ধ শ্রমিকরা গাড়ীটি জব্দ করেন এবং চালক রুমেলকে আটক করে স্থানীয় মেম্বার, চেয়ারম্যান এবং পুলিশকে খবর দেন।
নিহতের দেবর জানান, আমরা চেয়েছিলাম আইনের আশ্রয় নিতে। কিন্তু বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি শম্ভু রবিদাস আমাদেরকে চাপ প্রয়োগ করে স্ট্যাম্পে দস্তখত নেয়। পরে বলে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকায় নাকি আপোষ মীমাংষা করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, নিহতের একমাত্র ছেলে লালন রবিবাসকে ৪ বছর পূর্বে কালিটি বাগানের ট্রাক্টর চাপা দিলে তার মৃত্যু ঘটে। সে ক্ষতিপূরন এখনও বাগান কর্তৃপক্ষ দিচ্ছেনা। বাগানের ম্যানেজারের কাছে আমার ভাবী শত শতবার গেলেও ম্যানেজার কর্ণপাত করেনি।
তিনি আরও বলেন, লছমনিয়া রবি দাসকে গাড়ী চাপা দিয়ে মৃত্যুর ঘটনায় তার আর কোন বংশই রইল না। এটি খুবই হ্রদয় বিদারক ঘটনা।
বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি শম্ভু রবিদান বলেন, আপোষ মীমাংষার বিষয়টি পত্রিকায় না লিখার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, নিহত মহিলার তো কেহ আর নেই। তাই কে ঘাটাঘাটি করবে। এরজন্য আমরা আপোষ মীমাংসা করে দিয়েছি।
আপোষ নিষ্পত্তির বিষয়টি স্বীকার করে কর্মধা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম এ রহমান আতিক বলেন, পিকআপ ভ্যানের মালিক নিহতের পরিবারকে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা দেবেন। নিহত লছমনিয়া রবি দাসের স্বামী সন্তান না থাকায় সেই টাকায় বাগান পঞ্চায়েত নিহতের শেষকৃত্যে ও বাগানে একটি মন্দির নির্মাণ কাজে ব্যয় করা হবে। আর কোন অভিযোগ না থাকায় থানা পুলিশকে অবগত করে লাশের সৎকারের সিদ্ধান্ত হয়।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাওয়া কুলাউড়া থানার এসআই দিদার জানান, নিহতের পরিবারের কোন অভিযোগ না থাকায় এবং পঞ্চায়েতসহ গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ নিহতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিয়ে লিখিতভাবে আপোষ মীমাংসা হওয়ায় পুলিশ আর হস্তক্ষেপ করেনি।