২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভারতে ট্রেন দুর্ঘটনায় আমি বেঁচে গেলেও অনেকে মারা গেছে

এই দুর্ঘটনা ঘটেছে তিনটি ট্রেনের মধ্যে, যার মধ্যে একটি ট্রেন দাঁড়িয়ে ছিল। - ছবি : বিবিসি

ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় ওড়িশা রাজ্যে শুক্রবার রাতে ভয়াবহ এক ট্রেন দুর্ঘটনা হয়েছে। এটিকে দেশটিতে এই শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা বলে বর্ণনা করা হচ্ছে। দু’টি যাত্রীবাহী এবং একটি মালবাহী ট্রেন এই দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল।

কর্মকর্তারা বলছেন, শালিমার-চেন্নাই করোমান্ডেল এক্সপ্রেস ট্রেনটি বালাসোর জেলার কাছে লাইনচ্যূত হয়ে একটি দাঁড়িয়ে থাকা মালবাহী ট্রেনকে ধাক্কা দেয়। এতে ট্রেনটির কয়েকটি বগি উল্টো-পাশের ট্রেন লাইনের ওপর গিয়ে পড়ে।

ওই লাইন দিয়ে আসছিল আরেকটি দ্রুত গতির যাত্রীবাহী ট্রেন ‘হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস’। এটি ইয়াশভান্তপুর থেকে হাওড়ার দিকে যাচ্ছিল। দুর্ঘটনায় ওই ট্রেনেরও অনেক বগি উল্টে যায়।

বিবিসি দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী দু’জন স্থানীয় গ্রামবাসী এবং একজন আহত যাত্রীর সঙ্গে কথা বলেছে, যিনি করোমান্ডেল এক্সপ্রেসে ভ্রমণ করছিলেন।

গিরিজা শংকর রাঠ
মালবাহী ট্রেনটি একটি ভিন্ন লাইনে স্থির দাঁড়িয়ে ছিল। করোমান্ডেল এক্সপ্রেস লাইনচ্যূত হলো এবং এরপর মালবাহী ট্রেনটির সাথে সংঘর্ষ হলো।

তখন চারিদিকে বিশৃঙ্খলা। অন্যদিক থেকে আসছিল আরেকটি যাত্রীবাহী ট্রেন ‘শালিমার এক্সপ্রেস’। এটি পেছন থেকে করোমান্ডেল এক্সপ্রেসকে ধাক্কা দিল। সেটির দুটি বগি লাইনচ্যূত হলো। একটা বিকট শব্দ হয়েছিল। চারিদিকে তখন কেবল ধোঁয়া।

লোকজন তখন দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করছ। তীব্র বিশৃঙ্খলা। আমি লাইনের খুব কাছাকাছি ছিলাম এবং দৌড়ে দুর্ঘটনাস্থলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। আমরা আটকে পড়া যাত্রীদের টেনে বের করা শুরু করলাম। আমরা কিছু যাত্রীকে জীবিত উদ্ধার করতে পারলাম, কিছু লাশও বের করতে পারলাম।

চারিদিকে যে কত আহত মানুষ। আমরা বুঝতে পারছিলাম না কিভাবে তাদের বের করব। যখন উদ্ধারকর্মীরা এসে হাজির হলো, তখন কাজটা একটু সহজ হলো। সারারাত ধরে এই উদ্ধারকাজ চলেছে। আমার মাথা যেন এখনো ঘুরছে।

টুটু বিশ্বাস
আমরা একটা বিকট আওয়াজ শুনেছিলাম। আমরা যখন ঘর থেকে বেরিয়ে বাইরে আসলাম, দেখি একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে। আমি দেখলাম মালবাহী ট্রেনটা আরেকটা ট্রেনের ওপর উঠে গেছে।

আমি যখন দুর্ঘটনাস্থলে গেলাম, দেখি বহু মানুষ আহত, বহু মানুষ মারা গেছে। একটা ছোট্ট বাচ্চা কাঁদছিল। ওর বাবা মা হয়তো মারা গেছে। এর একটু পর বাচ্চাটাও মারা গেল।

বহু মানুষ পানি চাইছিল। আমি যত মানুষকে দেয়া সম্ভব, তাদের পানি এনে দিলাম পান করার জন্য। আমাদের গ্রামের মানুষরাও এখানে এসেছিল। তারাও যতটা সম্ভব মানুষকে সাহায্য করার চেষ্টা করল। পুরো ব্যাপারটা ছিল খুবই ভয়ংকর।

মুকেশ পণ্ডিত
ট্রেনটা যখন ধাক্কা খেল, তখন আমি ট্রেনেই ছিলাম। এরপর ট্রেনটা লাইনচ্যুত হলো। একটা বিকট জোরে শব্দ হয়েছিল, তারপর ট্রেন উল্টে গেল। আমি ভেতরে আটকে পড়েছিলাম। আধাঘণ্টা পর স্থানীয় লোকজন এসে আমাকে উদ্ধার করে।

আমাদের সব জিনিসপত্র বাইরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল। আমি কিছুই খুঁজে পাইনি। আমি বেরিয়ে এসে মাটির ওপর বসে পড়লাম। আমার গ্রাম থেকে যে চারজন ওই ট্রেনে যাচ্ছিল, তারা বেঁচে গেছে। কিন্তু বহু মানুষ আহত হয়েছে। অনেকে এখনো নিখোঁজ।

আমি ট্রেনের যে বগিতে ছিলাম, সেখানে অনেক মানুষ মারা গেছে। যারা গুরুতর আহত হয়েছিল, তাদের হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।

(রিপোর্টিং এ সহায়তা করেছেন বালাসোর থেকে সুব্রত কুমার পাটি, ছবি তুলেছেন হেমন্ত বেহারা)

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement