২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


রমজানে দ্রব্যমূল্য

রমজানে দ্রব্যমূল্য - প্রতীকী ছবি

রমজানের মাত্র কয়দিন বাকি। প্রতিবারই রমজান এলে বাজারে এক অস্থির অবস্থা সৃষ্টি হয়। এবারো তার ব্যতিক্রম নেই। বাজারমূল্যের ব্যাপারে প্রতিনিয়ত দেশের জাতীয় বিভিন্ন দৈনিকে বিভিন্ন ধরনের হেডলাইন মুদ্রিত হচ্ছে যার কিছু শিরোনাম হচ্ছে- মধ্যবিত্তের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে, নি¤œবিত্তরা মাছের পরিবর্তে মাছের কাঁটা কিনছে, আবার কেউ কেউ মুরগির গোশতের পরিবর্তে পা ও চামড়া কিনছে। ডিমের পরিবর্তে ভাঙা ডিম কিনছে কিছুটা সাশ্রয়ের আশায়। ডিমের দোকানের সামনে দাঁড়ালে এমন দৃশ্য প্রায়ই চোখে পড়ে। টিসিবির প্রতিবেদনে একই চিত্র দেখা যায়। বাজারের মূল্যবৃদ্ধির আগুনে পোড়া মানুষের হতাশার চিত্র ১৩ ফেব্রুয়ারি মানবজমিনের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। ১৪ ফেব্রুয়ারি সংখ্যায় ডেইলি স্টার জানিয়েছে- চাল, ডাল, আটা, তেল, সবজি, মাছ, গোশত ও রমজানে ব্যবহৃত অন্যান্য দ্রব্যাদির মূল্যবৃদ্ধির হালচাল। বাজারের দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতির সাথে তাল মেলানের চেষ্টায় বেশির ভাগ মানুষের সঞ্চয় এখন তলানিতে।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশে-ক্যাবের সভাপতির দৃষ্টিতে ব্যবসায়ে অতিরিক্ত মুনাফার প্রবণতার ফলে পণ্যমূল্য বাড়ছে বাজারে। অবশ্যই সরবরাহ পরিস্থিতিও মূল্যবৃদ্ধির আরেকটি কারণ বলে তিনি উল্লেখ করেছেন। অস্বাভাবিকভাবে দ্রব্যের দাম বেড়ে যাওয়ার ফলে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচের ওপর চাপ বেড়েছে। ফলে এসব পরিবারের সন্তানাদির লেখাপড়া হুমকির মুখে। আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের ব্যতিক্রমী মূল্যমানের ওপর ব্যবসায়ীরা দোষ চাপাচ্ছেন। তাদের এ বক্তব্য ধর্তব্যের পর্যায়ে পড়ে না। একই পরিস্থিতিতে যখন অন্যান্য দেশে দ্রব্যমূল্যের এ ধরনের বৃদ্ধি দেখা যায় না, সেখানে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম কেন? ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রেস এক্সপ্রেসে প্রকাশিত টিসিবির ভাষ্য অনুযায়ী- চাল, সবজি ও মাছের মূল্য যথাক্রমে ২৪ শতাংশ, ১২ শতাংশ এবং ৩০ শতাংশ বেড়েছে। অপর দিকে পারিবারিক ব্যয় নির্বাহ বেড়েছে ১৩.৭২ শতাংশ। এটি রমজানে আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। অবশ্য কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, বাংলাদেশের দ্রব্যমূল্য তুলনামূলকভাবে অন্য দেশের চেয়ে ভালো। নতুন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী মাত্র কিছু দিন আগেও এই বলে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে, বাজারের সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য যেন না বাড়ে। তার ব্যবস্থা নিচ্ছেন। কিন্তু বাস্তবে বাজারে এর কার্যকর প্রভাব লক্ষ করা যাচ্ছে না।

সব জনগোষ্ঠীর জন্য নিরাপদ খাদ্য এবং পুষ্টি সরবরাহের নিমিত্তে ২০২০ সালে জাতীয় খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নীতিমালা ঘোষিত হয়। এ নীতিমালায় নিরাপদ এবং পুষ্টিকর খাবারের যৌক্তিক মূল্যে নিরবচ্ছিন্নভাবে সরবরাহের কথা বলা হয়। ‘সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে যৌথভাবে এই নীতিমালা কার্যকর করার কথা থাকলেও বেসরকারি উদ্যোক্তারা এ ক্ষেত্রে অনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে বাজারমূল্য, সরবরাহ ও গুদামজাত করার বিষয়টি নিজেদের কব্জায় নিয়েছেন। ফলে গুটি কয়েক অসাধু চক্রের হাতে বাংলাদেশের বাজার ব্যবস্থাপনা আজ জিম্মি। তাদের তৎপরতা দেখে মনে হয় কর্তৃপক্ষও এদের কাছে অসহায়, এরা ফ্রাংকেনস্টাইনের মতো গোটা দেশকে গিলে খেতে চাচ্ছে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অসহায় অবস্থার সুযোগে তারা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের প্রাক্কালে নিরাপদ খাদ্য ও খাদ্য নিরাপত্তার প্রধান অন্তরায় হিসেবে সিন্ডিকেট ও খাদ্যে ভেজালকে চিহ্নিত করা হয়েছিল। কিন্তু আজো অবস্থার উন্নতি হয়নি; বরং ধারাবাহিকভাবে অবনতি হয়েছে।

১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫গ এর (৬) ধারায় যেকোনো পণ্যে ভেজাল দেয়ার অপরাধ প্রমাণ হলে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের বিধান থাকলেও শাস্তির নজির দৃশ্যমান নয়। মাঝে মধ্যে কিছু অর্থ জরিমানা করা হয়। ওই পর্যন্তই শেষ! ফলে শাস্তির কোনো প্রভাব ভেজালের ক্ষেত্রে পড়েনি। তেমনিভাবে খাদ্য মজুদের ক্ষেত্রেও শাস্তির বিধান নিশ্চিত হয়নি। দেশের জনগণের সুস্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাজার ব্যবস্থাপনাকে ঢেলে সাজানো প্রয়োজন। প্রয়োজন সঠিক তথ্য। নইলে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশকে লাখ লাখ টন চাল আমদানি করতে হবে কেন? কেন বাম্পার ফলনের পরও আলু আমদানি করতে হবে? এ বিষয়টিও খতিয়ে দেখা দরকার। অভ্যন্তরীণ উৎপাদন না বাড়িয়ে কেবল আমদানির ওপর নির্ভর করলে পরিণতি সুখকর হবে না। সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনা, কার্যকর তত্ত্বাবধান ও আইনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিতের মাধ্যমে সরকার দ্রব্যমূল্যের পাগলাঘোড়াকে নিয়ন্ত্রণ করবে, এমনটিই সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা।

লেখক : চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ
Email-shah.b.islam@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement
রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা রুখতে ইউক্রেনকে প্যাট্রিয়ট দেবে যুক্তরাষ্ট্র আইনগত সহায়তা পাওয়া করুণা নয় অধিকার : আইনমন্ত্রী টিউবওয়েলের পানি খেয়ে আতঙ্কে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অসুস্থ নারী আম্পায়ার নিয়ে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে আসলে কী ঘটেছিল? কোরবানির জন্য পশু আমদানির পরিকল্পনা নেই : প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আশুলিয়ায় নারী পোশাকশ্রমিক নিহত, স্বামী গ্রেফতার জাতিসঙ্ঘের ত্রাণকর্মীদের বিরুদ্ধে ইসরাইলি অভিযোগ প্রত্যাখ্যান ৭ খুন মামলার রায় কার্যকরের দাবি পরিবার ও আইনজীবীদের জামালপুরে শ্রেণিকক্ষে ফ্যান খুলে পড়ে শিক্ষার্থী আহত নিজ নিজ ম্যাচে জয়ী হয়ে লা লিগায় শীর্ষ চারের আরো কাছাকাছি এ্যাথলেটিকো ও জিরোনা নাগরপুরে ট্রাক্টর-সিএনজির মুখোমুখি সংঘর্ষে যুবক নিহত

সকল