০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`


সমকালীন সঙ্কটের স্বরূপ

সমকালীন সঙ্কটের স্বরূপ - নয়া দিগন্ত

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার পাশাপাশি চিন্তা চৌবাচ্চা (থিংক ট্যাংক) ও সুশীলসমাজের কর্মীদের পক্ষ থেকে জাতীয় বাজেটের প্রস্তুতি, প্রস্তাব এবং বাস্তবায়ন ঘিরে ব্যাপক আলোচনা-পর্যালোচনার যে প্রবৃদ্ধি (যদিও জিডিপিতে এ প্রবৃদ্ধি প্রতিফলিত হচ্ছে না!) ঘটছে যা ইতিবাচক। আরো লক্ষণীয় যে, বাজেট নিয়ে রাজনীতিতে বিশেষ করে ক্ষমতাশীন ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে গতানুগতিক প্রশংসা ও কূট সমালোচনা বরং ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। দেখার বিষয়, রাজনৈতিক অর্থনীতি পর্যায়ক্রমে স্রেফ অর্থনীতিমুখী হতে চাইছে। একই সাথে বাংলাদেশের জাতীয় উন্নয়ন ভাবনা বা দর্শন (পরনির্ভরতা কমিয়ে স্বনির্ভরতা অর্জন, আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে স্বয়ম্ভরতাসহ রফতানিমুখী হওয়া, স্থানীয় শিল্পোদ্যোগ সুরক্ষা দিয়ে বিদেশীদের সাথে প্রতিযোগিতায় টেকসইকরণ, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান) পরিবর্তনের সূচনাও পরিলক্ষিত হচ্ছে। কাগজ-কলমে অর্থনীতির আত্মসম্মান বৃদ্ধিসহ বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন পর্যালোচনা ক্রমবর্ধমান আমজনতার সচেতনতার বিষয়ে পরিণত হচ্ছে এটি যেমন ইতিবাচক দিক আবার বাজেট প্রাক্কলন এবং বাস্তবায়ন সিদ্ধান্ত প্রদানের নির্দেশনা উপর থেকে আসছে এটি বিপরীতধর্মী প্রবণতা। বড় দাগে ব্যয় পরিকল্পনা, উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ গ্রহণ, বর্জন ও অর্জনের সিদ্ধান্ত কোন পর্যায়ে কেন ও কিভাবে গৃহীত হয় তা জানাতে তথ্য অধিকার আইনও অসহায়। বিআইডিএসের বার্ষিক সম্মেলনে উঠে এসেছে মোক্ষম কথাটি ‘সরকার নয় জনগণই উন্নয়নের ক্ষমতার উৎস’। আমজনতার জন্য উন্নয়নকে লক্ষ্যভেদী করার কথা থাকলেও লক্ষ্য ভেদ করে আয়বৈষম্য বাড়ানোর হেতুতে পরিণত হচ্ছে, অথচ কৃচ্ছ্রসাধন, কর রাজস্ব প্রদান ও কর্ম সম্পাদনে সম্পৃক্ত হতে হচ্ছে জনগণকে।

সমালোচনা হলেও এবং আমজনতা হতাশ হলেও রাজনৈতিক বাহবা লাভের জন্য এ দেশে বাজেট ভারী, অত্যন্ত ‘উচ্চাভিলাষী’ হয়ে ওঠে। ব্যয় বাজেটের আকার বৃদ্ধি ভোক্তা সন্তুষ্টি এবং বিকাশের স্তর, ভোটারদের খুশি করার জন্য একটি উদ্যমী প্রচেষ্টা ক্রয় বৃদ্ধির স্তর ব্যাখ্যা করা হয় বাজারে আধিপত্য বিস্তারের জন্য। কিন্তু বাস্তবে তা কি হচ্ছে? বাজেটের আকার বৃদ্ধি আবশ্যক, মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদায় পৌঁছনোর জন্য উচ্চাকাক্সক্ষী করা হচ্ছ অর্থনীতি প্রসারিত হওয়ার স্বার্থে সরকারি ও বেসরকারি উভয় থেকে আরো বিনিয়োগ প্রয়োজন, সেটি দরকারও। তবে সেক্টর ও অর্থনৈতিক গতিশীলতা বজায় রাখার জন্য উন্নয়ন ব্যয় বৃদ্ধি করা হলেও, তা জিডিপিতে যোগ্য প্রকাশ ও প্রচার পাচ্ছে না তথা অবদান রাখতে পারছে না। রাম রহিমের আয় না বাড়লেও উচ্চমূল্যে নমিনেশন পেপার কেনার হিড়িক, শুধু টিকে যাওয়া প্রার্থীদের নগদ টাকা, স্থাবর অস্থাবর সম্পদ বৃদ্ধির পরিসংখ্যান দেখে, জেনে ও শুনে বোঝা যায় আলাউদ্দিনের চেরাগ কার হাতে। কর জিডিপি রেশিও কেন বাড়ে না তা বোঝানোর জন্য বেশিদূর যেতে হয় না।

নীতি বা বাজেট (অর্থবিল মাধ্যমে) যেকোনো রাজস্ব ব্যবস্থা পদ্ধতিগত পরিবর্তন হঠাৎ ঘটা উচিত নয়, এটি শুরু করা উচিত যখন কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের এ সম্ভাব্য পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত হয়। কোনো পরিবর্তন যখন স্টেকহোল্ডারের দ্বারা প্রাথমিক পর্যালোচনার একটি নতুন ট্যাক্স বা দায়িত্ব এটি ভিত্তিক হতে হবে মনোরম। এ বছর, নতুন ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক আইন প্রবর্তনে উদ্যোগ ব্যবসায়িক সম্প্রদায়ের থেকে একটি বিক্ষোভ যাকে জাহির, মনে হচ্ছে যে কিছু বিষয়ে মতপার্থক্য সিদ্ধান্তসমূহ ছিল এখনো সমাধান করা, বাস্তবায়ন-ক্ষমতা সেরা বিন্দু কোনো শুল্ক বা কর আইন প্রবর্তনের আগে চিন্তা করা হবে, ফিটিং মানসিকতা উভয় শেষ এটি তাদের উপর প্রয়োগ করা হবে উন্নত করা। তারা মানসিকভাবে প্রস্তুত করার সুযোগ পান। ফলে, তা বাস্তবায়ন করা সহজ। বাজেট একটি খুব ছোট অংশ, পরিসংখ্যান, অটোমেশন, ডাটাবেস, নির্মাণ বা গবেষণা প্রতিষ্ঠানে ব্যয় করা যেতে পারে। কর্তৃপক্ষ কোনো প্রয়োজনীয় তথ্য ও পরিসংখ্যানের ওপর সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার আছে যখন। বিভিন্ন শিল্প বণিক সমিতি এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান ডাটাবেস নির্মাণ করতে পারেন। নীতিনির্ধারকরা পরিসংখ্যান প্রেক্ষাপটে তাদের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত পুনর্বিচারে যথেষ্ট হবে না যদি সঠিক তথ্য পরিসংখ্যান না থাকে।

অতএব, বাজেট বরাদ্দের বর্তমান প্রেক্ষাপটে, উন্নয়নশীল অর্থনীতির বাংলাদেশের মতো এ সত্য মনের মধ্যে বহন করা আবশ্যক যে, এটি অর্থনৈতিক আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন ছাড়া স্বাধীনতা বিশুদ্ধ হয় না। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে অন্যান্য ইস্যু এগিয়ে উন্নয়ন কৌশল পরিকল্পনা অনুন্নত দেশে, যেখানে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার আকিঞ্চন আকাক্সক্ষা অক্লান্ত প্রচেষ্টা উচ্চারিত হচ্ছে এবং আন্দোলন অব্যাহত থাকছে অর্থনৈতিক বিবেচনার মুক্তির অনুষ্ঠানে গণতন্ত্রায়নের একটি উপায় হিসেবে। এশিয়া এবং বিশ্বের সংস্কৃতি ও সভ্যতার বিকাশের, দর্শন ও বিজ্ঞানের গবেষণায়, সেই সাথে সামরিক ক্ষমতায় যে অবদান ছিল। তা ইউরোপ, এশিয়ার সমৃদ্ধির বিস্তারে প্রতিশ্র“তিবদ্ধ হয়। ইউরোপীয় শিল্প বিপ্লব মার্কিন আটলান্টিক উপকূলজুড়ে আমেরিকা শিল্প বিপ্লবের সাথে গত শতাব্দীর মধ্যে, প্রযুক্তি অর্থনৈতিক শক্তি প্রয়োগের ঐশ্বর্য উন্নীত করা হয়। বিশ্বের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি সেই সাথে তার সামরিক ও রাজনৈতিক পরাশক্তির সাথে যুক্ত পরিচিতি পৌঁছানো, অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিবেশে তার দৃঢ় অবস্থান স্থায়িত্ব এবং স্থিতিশীলতার ওপর নির্ভর করে।
মুক্তবাজার অর্থনীতি এবং আরো উদারীকরণের পদক্ষেপ বিস্তার আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কর্মসূচি দেশের লক্ষ্যে যে অর্থনৈতিক সংস্কারের পাশাপাশি তার বৈশ্বিক সম্পদ এবং সুযোগ অবশ্যই রাষ্ট্রীয় সুযোগ সবার জন্য খোলা, স্বচ্ছতা ও সুশাসন সংস্কারের একটি বায়ুমণ্ডল উপাধি অনুকূল তৈরি করার জন্য এই কল, আসলে, জনগণের ক্ষমতায়নের জন্য নিবেদিত হওয়া উচিত।

সঞ্চয় ও বিনিয়োগ বিকাশ জাতীয় অর্থনীতিতে উৎপাদনে অবিসংবাদিত ভূমিকা রাখে। মোট প্রত্যাশিত সঞ্চয়ের এবং শিল্পনীতি উন্নয়নে বিনিয়োগ শিল্পের মধ্যে, বিষয়টি বারবার সঞ্চয় ও বিনিয়োগ প্রত্যাশা করে। কিন্তু অর্থনীতি, কৃষি, সামাজিক খাতে যে জনগণের মৌলিক অধিকার চিন্তা ও পরিকল্পনা জাতীয় অর্থনীতির বিকাশে তার কাক্সিক্ষত দৃষ্টি সব উৎপাদনশীল খাতে দেশের সার্বিক সঞ্চয়ের সামগ্রিক উন্নয়ন ও বিনিয়োগের ওপর নির্ভরশীল হয় প্রাণশক্তি বিবেচ্য বিষয়। দারিদ্র্য হ্রাস কৌশলপত্র প্রোগ্রাম বন্ধ করতে প্রস্তুত করা হয়েছে অথবা যদি সামাজিক দারিদ্র্য কাটিয়ে ওঠা না যায় তাহলে স্থায়ীভাবে দারিদ্র্য এবং তৃণমূল পর্যায়ে সংরক্ষণ অভ্যাস টিকবে না। বিকাশ প্রয়োজন আউট সেখানে রাতারাতি অথবা অভ্যাস যে সঞ্চয়ী পরিবেশে পাঠানো অবধারিত এবং প্রকরণ চাই, সেভিংস উন্নয়নে উল্লেখ্য শিল্পে না শুধু সর্বত্র বিনিয়োগ করা হবে। পুঁজিবাদী মুক্তবাজার অর্থনীতিতে, ভর্তুকি ও অন্যান্য সুবিধা যে শিল্প উন্নয়ন উদ্যোগের একটি সংমিশ্রণ হয় দৃষ্টিকোণ, কিন্তু যে উন্নয়ন প্রচেষ্টায় তাদের সম্প্রদায়ের মঙ্গল কামনা, শিক্ষা যেমন জাতির জন্য একটি প্রধান বিনিয়োগ, শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষা খাতে জবাবদিহির অনুপস্থিতিতে, সর্বত্র অব্যস্থাপনায় বেশির ভাগ বরাদ্দ বৃথা হতে পারে। ঔপনিবেশিক আমলে শিক্ষার জন্য অপর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ ছিল, সেখানে বৈষম্যের অভিযোগ ছিল। নীতিনৈতিকতা বোধ বিশ^াসে আত্মত্যাগের শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার বিপরীতে বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবে ক্রমবর্ধমান পাঠ পরিশ্রমী ও দক্ষজনবল সৃষ্টির অনিবার্যতাকে পর্যুদস্ত করছে। কারিগরি শিক্ষা থেকে শিল্প শ্রমিক বের হয়ে না এলে সৃষ্ট স্বল্পমেয়াদি শ্রমিকদের বর্ধিত বেতন ব্যবহার গার্মেন্টস শিল্প, এটি মনে হচ্ছে শান্তিতে নেই। অনেক প্রয়োজনীয় শিক্ষা খাতে অনলস, উৎসাহী, সব স্তরে পরিশ্রমী এবং দক্ষ জনশক্তি বিনিয়োগের স্পষ্টতা বৃদ্ধি করতে হবে। উন্নত করলে সিদ্ধি আসবে। শিক্ষা খাতে অপরিকল্পিত বিনিয়োগ উৎপাদনশীল চিন্তাবিদ তৈরি হবে না, আইনপ্রণেতা রাজনীতিবিদ তো দূরের কথা।

লেখক : সাবেক সচিব এবং
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান


আরো সংবাদ



premium cement