২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
অন্য দৃষ্টি

সরকারের ভরসা বলপ্রয়োগ

সরকারের ভরসা বলপ্রয়োগ - নয়া দিগন্ত

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পুরনো নিয়মে অগ্রসর হচ্ছে সরকার। এই নীতি হলো, ‘অঘটন ঘটাও’ সামনে এগিয়ে যাও। আগের গুরুতর ইস্যুর সমাধানের কোনো প্রয়োজন নেই। নতুন ইস্যু পুরাতন ইস্যুর কবর রচনা করবে। এই নীতির প্রয়োগে এ যাবৎ সরকারের কোনো ব্যর্থতা দেখা যায়নি। এই নীতি অনুসরণ করে সরকার উত্তরোত্তর শক্তিশালী হয়েছে, এমনটাই দেখছে জনগণ। বিএনপিকে মিছিল সমাবেশ করার কিছু সুযোগ দিয়েছিল সরকার। বেপরোয়া শক্তি প্রয়োগ করে মাঠ থেকে তাদের খেদিয়ে দেয়া হয়েছে আবার। দলটির সব শীর্ষ নেতা এখন জেলে। তাদের মাঠের কর্মসূচি এখন এক প্রকার নিষিদ্ধ। দলীয়প্রধান কার্যালয় সিলগালা। অপর রাজনৈতিক দল জামায়াতের ওপর এই কূটকৌশল আগেই প্রয়োগ করা হয়েছিল।

২৮ অক্টোবর সহিংসতার সব দায় বিএনপির ওপর চাপানো হয়েছে। এর আগে থেকেও অসংখ্য মামলা তাদের ঘাড়ের ওপর ছিল। এখন শাস্তির রায় হয়ে যাচ্ছে। যাদের বিরুদ্ধে রায় হওয়ার মতো মামলা নেই, তাদের জন্য রয়েছে প্রধান বিচারপতির বাসায় হামলা, হাসপাতালে, গাড়িতে আগুন দেয়া, পুলিশ হত্যার মতো গুরুতর অভিযোগ। কত বড় অপরাধী হলে এমন জঘন্য কর্ম করতে পারে! প্রধান বিচারপতির বাসার সামনে নিয়মিত পুলিশ পাহারা থাকে। বিএনপির মহাসমাবেশের দিন নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদারে পুলিশের সংখ্যা আরো বাড়ানোর কথা। এই অবস্থায় বিএনপির লোকেরা কিভাবে তার বাসায় আক্রমণ করল? নিরাপত্তারক্ষায় নিয়োজিত পুলিশেরা সেই সময় কোথায় ছিল? সেদিন দাঙ্গা পরিস্থিতি মোকাবেলায় অতিরিক্ত পুলিশ নিযুক্ত ছিলেন, ঘটনার সময় তারা কী করছিলেন? এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার কোনো প্রয়োজনীয়তা দেখা গেল না।

পুলিশ হাসপাতালে আগুন দেয়া হলো, সেখানে থাকা গাড়িও জ্বালিয়ে দেয়া হলো। বিএনপি গত এক বছর এই এলাকায় অগণিত সমাবেশ করেছে। তাদের সমাবেশে পুলিশ ও সরকারি দলের লোকেরা আগেও হামলা করেছে। ক্ষুব্ধ হয়ে কখনো হাসপাতালে আক্রমণ করতে এর আগে তাদের দেখা যায়নি। সমাবেশস্থলের আশপাশে আরো হাসপাতাল রয়েছে। রয়েছে আরো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, সেগুলো বাদ দিয়ে ‘পুলিশ হাসপাতালে’ আক্রমণ করা ছিল বিস্ময়কর। সেদিন এক পুলিশ হত্যা নিয়ে রহস্য আরো ঘনীভূত হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এক ছাত্রদল নেতা তাকে মাথায় চাপাতি দিয়ে আঘাত করে হত্যা করেছে। ওই পুলিশের মাথায় তখন হেলমেট কোথায় ছিল? তার সহযোগী পুলিশেরা তখন কোথায় ছিলেন? এই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ নেই কেন? ঘটনার দিন সহিংসতা কিভাবে শুরু হলো, তা নিয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া গেল না। দুই পক্ষের মধ্যে শুরু হওয়া বচসা থেকে ছড়িয়ে পড়া মারামারির সব দায় এসে পড়ল এককভাবে বিএনপির ঘাড়ে। ভিডিও দেখে লগি বৈঠা বহনকারী যুবকদের শনাক্ত করা হয়েছে কি? সেদিন লগি-বৈঠা বহনে নিষেধাজ্ঞা ছিল। এসব প্রশ্নের উত্তর জানা, সরকার ও পুলিশের কাছে একেবারে গুরুত্ব পায়নি।

ঘটনার পূর্বাপার বিশ্লেষণ করলে এটা বুঝতে অসুবিধা হয় না, সেদিন পুলিশের জন্য একটি অজুহাত দরকার ছিল, যাতে করে শান্তিপূর্ণ একটি সমাবেশ ভণ্ডুল করে দেয়া যায়। এরপর দেখা গেছে, বলপ্রয়োগের পুরনো কূটকৌশল। পুরানা পল্টনে একটি যুদ্ধাবস্থা তৈরি করা হয়েছে যাতে দশ লাখ মানুষের বিশাল জমায়েতকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়া যায়। এজন্য প্রয়োগ করা হয়েছে সাউন্ডগ্রেনেড। উচ্চমাত্রার শব্দ তৈরিকারী এই গ্রেনেড চার্জের ফলে শুধু আশপাশে নয় দূর-দূরান্তের সুস্থ মানুষও স্বাভাবিক থাকতে পারে না। সাথে ছিল মুহুর্মুহু টিয়ার শেল। এই টিয়ার শেল নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এতে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পদার্থের মিশ্রণ নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বহুগুণে বেশি ছিল। এর ঝাঁজে মানুষ দম বন্ধ হয়ে মারা যেতে পারে। সেদিনের ঘটনায় কয়েকজন বিএনপি কর্মীর প্রাণ গেছে।

সাঁড়াশি আক্রমণ করে সমাবেশ ভণ্ডুল, উচ্চমাত্রার সাউন্ডগ্রেনেড, স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর টিয়ার শেল এবং এতে প্রাণ হারানো বিএনপি কর্মীদের নিয়ে কোনো আলোচনা নেই। একটি সত্যিকার গণতান্ত্রিক দেশ হলে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও নাগরিক হত্যার জন্য পুলিশকে জবাবদিহি করতে হতো। এজন্য গঠিত হতো শক্তিশালী তদন্ত কমিশন। এর কিছুই করা হয়নি। উল্টো ঘটনার শিকার বিএনপির উপর সব দায়িত্ব চাপিয়ে শাস্তি দেয়া শুরু হয়ে গেছে। যেখানে এসব অপরাধ সরকারি দল এমনকি পুলিশ নিজেরাই করতে পারে এমন অভিযোগ বিরোধীরা করছে, নিরপেক্ষ সংস্থাগুলোও একই ইঙ্গিত দিচ্ছে।
পুলিশ দিয়ে শক্তি প্রয়োগের অপরিণামদর্শী খেলা এখন পর্যন্ত সফল প্রয়োগ করে যাচ্ছে সরকার। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এটি অগ্রহণযোগ্য হলেও চালানো যাচ্ছে। জবাবদিহিতার কোনো প্রয়োজন অনুভব করছে না সরকার। দেখার বিষয়, এই অন্যায্য ব্যবস্থা শেষ পর্যন্ত কিভাবে থামে। প্রতিটি বিষয়ের একটি পরিণতি আছে।

jjshim146@yahoo.com

 


আরো সংবাদ



premium cement