২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কম্বোডিয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে!

কম্বোডিয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে! - নয়া দিগন্ত

কম্বোডিয়ার সরকারবিরোধীরা ভোটাধিকার হারিয়েছেন। দেশটিতে এতদিন ধরে প্রহসনের যে নির্বাচন চলছিল, সেই নির্বাচনেও অংশগ্রহণ হতে বিরোধীদের এবার বঞ্চিত করে দেয়া হয়েছে। আমরা তাদের চেয়ে একটু এগিয়ে আছি। ভোটে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ কিছু ক্ষেত্রে আমাদের রয়েছে। তবে আমরা জয় পেতে পারব না! এই প্রক্রিয়ায় একদিন দেখা যাবে, বিরোধীদের জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণের অধিকার কম্বোডিয়ার মতোই কখনো কেড়ে নেয়া হতে পারে। বর্তমান পরিস্থিতি তার আভাস দেয়, হয়তো এখন কেবল সময়ের ব্যাপার। স্বৈরশাসকরা এভাবেই তাদের চূড়ায় ওঠে। এ ধরনের একটি নির্বাচন আয়োজন করে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কম্বোডিয়ান পিপলস পার্টির নেতা স্বৈরশাসক হুন সেন নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছেন। চার দশক ধরে চেপে বসা এই ডিকটেটর জয়ের আনন্দের ঢেঁকুর তুলতে পারেনি। আমেরিকা তার ক্ষমতাবিত্তের প্রধান ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে স্যাংশন দিয়েছে।

স্যাংশন খাওয়া হুন সেন ক্ষমতা তার ছেলে হুন মানেতের হাতে তুলে দিতে যাচ্ছেন। ক্ষমতা তিনি ছেলের হাতে তুলে দেয়ার জন্য আগে থেকে মনস্থির করেছেন, না নিষেধাজ্ঞা পাওয়ার পর তড়িঘড়ি এটা করতে যাচ্ছেন নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না। সরকারের প্রধান ব্যক্তি ও তার সহযোগীরা যদি সুপার পাওয়ার আমেরিকার তালিকায় নিষিদ্ধ হন তাতে ব্যক্তি হিসেবে হুনসেন গোষ্ঠী পশ্চিমা দুনিয়ায় অচ্ছুত হয়ে যাবেন। এ জন্য তার দেশকে নানা বিধিনিষেধের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। তবে তার ছেলে মানেতের রয়েছে আমেরিকার সাথে সম্পর্ক। তিনি স্নাতকোত্তর পড়াশোনা করেছেন নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার একটি পিএইচডি ডিগ্রিও রয়েছে আমেরিকার ব্রিসটল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের মিলিটারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তার স্নাতক ডিগ্রি রয়েছে। নব্য একনায়কদের এই প্রবণতা খুব বেশি। তারা শাসনব্যবস্থা হিসেবে রাশিয়া ও চীনকে বেছে নেন। বাদবাকি অন্য সব কিছুর জন্য তারা পশ্চিমাদের পছন্দ করতে চান। এমনকি মানুষ হত্যা করে নিজের দেশকে শ্মশান বানিয়ে দিলেও নিজেদের রিটায়ার্ড লাইফটি তারা পশ্চিমে সুখে শান্তিতে কাটাতে চান। কিংবা ক্ষমতাবৃত্ত থেকে ছিটকে পড়লে তারা পশ্চিমে যেতে চান। নিরাপদ দেশ হিসাবে তারা চীন রাশিয়াকে বেছে নেন না।

বাবাসহ পুরো শাসকগোষ্ঠী স্যাংশন খেলেও সরকার প্রধান হিসেবে হুন মানেতের যুক্তরাষ্ট্রে শুধু প্রবেশ নয়, সুসম্পর্ক গড়ে তোলার সুযোগও থাকবে। হুন সেন সম্ভবত পুত্রের আমেরিকা প্রীতিকে কাজে লাগাতে চান। তবে বিরোধীরাও তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পেতে যুক্তরাষ্ট্রের মুখাপেক্ষী হয়েছে। আপাতত সবাই সুপার পাওয়ার আমেরিকার দিকে তাকিয়ে আছে। আমাদের দেশের পরিস্থিতি কি এর সাথে এককাতারে মিলে যায়? আমাদের স্তব্ধ হয়ে যাওয়া রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আমেরিকা ইতোমধ্যে নরম বাতাসের দোলা দিয়েছে। ঘরে বসে যাওয়া বিরোধী দল রাস্তায় নেমে ক্ষোভ প্রকাশ করছে। গুম খুন বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হওয়া মানুষের পরিবার কথা বলতে শুরু করেছে। যে খুন গুমের সূত্র ধরে দেশে দম বন্ধ হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে খামোশ এসেছে একটি স্যাংশনের সূত্র ধরে। নাগরিকদের কান্না দুঃখ শোক কোনো কিছুকে সরকার আমলে নেয়নি। আমলে নিয়েছে আমেরিকার স্যাংশন। দেশটি হয়তো চাইছে এবার বাংলাদেশকে গণতন্ত্রের ধারায় ফেরাতে। সে জন্য তারা আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে অগ্রিম পদক্ষেপ নিচ্ছে। কম্বোডিয়ার শাসকদের বিরুদ্ধে যে কঠোর স্যাংশন নির্বাচনের পরে দিয়েছে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সেটা নির্বাচনের আগেই দেয়ার লক্ষণ ফুটে উঠতে যাচ্ছে!

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের বৈশ্বিক দুর্নীতি দমন বিভাগের সমন্বয়ক রিচার্ড নেফিউ ঢাকায় সফর করে গেছেন। তিনি মূলত একজন স্যাংশন বিশেষজ্ঞ। আর্ট অব স্যাংশন নামে তার একটি পুস্তক রয়েছে। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা হারিয়ে গেছে দুর্নীতি, অর্থ পাচার ও মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের হাতে। গড়ে ওঠা একটা অশুভ চক্র সব কিছুর ওপর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারলেই এ দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরে পাওয়া যাবে, আশা করা যায়। নেফিউ মন্তব্য করেছেন ‘দুর্নীতি দমনে স্যাংশন একটি হাতিয়ার’। নেফিউকে অন্যান্য সাধারণ আমেরিকান সরকারি কর্মকর্তার মতো দেখা গেল না। তার মাথায় ঝাঁকড়া চুল। ঘনকালো দীর্ঘ চুল পিঠ পর্যন্ত নেমে গেছে। তীক্ষ্ণ দুটো চোখ। গোঁফ দাড়ি মিলিয়ে তার সামগ্রিক চেহারা হুবহু ইংরেজ লোককাহিনীর রবিনহুডের মতো। প্রচলিত আছে রবিনহুড ছিলেন দক্ষ তীরন্দাজ ও অসিযোদ্ধা। তিনি ধনী ও লুটেরা শ্রেণীর যম ছিলেন। সম্পদ লুণ্ঠনকারী ও খুনিদের শায়েস্তা করে গরিব অধিকার বঞ্চিতের রক্ষা করতেন। তার বীরত্বগাথা লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ে। পরে সেটা ইংরেজি সাহিত্যের জায়গা করে নেয়। এই চরিত্রটিকে নিয়ে বহু নাটক সিনেমা রচিত হয়েছে। রবিনহুডকে উপজীব্য করে নির্মিত ইংরেজি সিরিয়াল বাংলাদেশে জনপ্রিয় হয়েছে।

বৈশ্বিক দুর্নীতি দমন বিভাগের সমন্বয়ক রিচার্ড নেফিউর বাংলাদেশ সফর ও সংশ্লিষ্টদের সাথে সাক্ষাৎ ও ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্যাংশন একটি টুল’ হিসেবে মন্তব্য আমাদের দেশে বড় আলোচনার বিষয় হয়েছে। আমাদের দেশ থেকে বছর প্রতি প্রায় এক লাখ কোটি টাকা করে পাচার হয়ে যাওয়ারও খবর আছে। এর সাথে বাংলাদেশের ব্যাংক লুট, পণ্যমূল্যের সিন্ডিকেট ও উন্নয়ন কর্মে হরিলুটের সম্পর্ক রয়েছে। দুর্নীতির মহামারীতে জনগণ পিষ্ট অসহায়। তারা কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছে না এই কঠিন অবস্থা থেকে মুক্তির। নেফিউ ইতোমধ্যে জানাচ্ছেন বাংলাদেশের মুদ্রাপাচার ও দুর্নীতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই কাজ করছে। এই খবরে দেশের মানুষ উৎফুল্ল। তারা চায়, নিজেরা ব্যর্থ হলেও শক্তিমান কেউ লুটেরাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক।

ভোটের অধিকার হারিয়ে কম্বোডিয়ার বিরোধী দল কোনো প্রতিরোধ করতে পারেনি। কেউ কেউ ব্যালট পেপার ছিঁড়ে বাক্সে ঢুকিয়ে অভিনব কায়দায় প্রতিবাদ জানিয়েছে। তবে হুনসেন সরকার এই প্রতিবাদকারীদেরও খুঁজে বের করার অভিযান চালাচ্ছে। আমেরিকা ব্যাপক স্যাংশনের পাশাপাশি সে দেশে তাদের সহয়তা কার্যক্রমও প্রত্যাহার করেছে। এ অবস্থায় দেশটির বিরোধী নেতারা আমেরিকার কাছে আরো শক্ত প্রতিকার চাইছে। সাবেক পার্লামেন্ট সদস্য, অন্যতম বিরোধী দল রেসকিউ পার্টির নেতা মু সোচুয়া এ নিয়ে আলজাজিরায় নিবন্ধ লিখেছেন। সেখানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি আবেদন জানিয়েছেন, তার দেশের মাফিয়া সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ ও তাদের সম্পদ জব্দের জন্য। নির্যাতিত মানুষেরা যখন ব্যর্থ হয়ে যায়, তারা এমন সূত্র থেকে সাহায্য পেতে শুরু করে যা আগে ধারণা করা যায় না। বিশ্বের বহু জায়গায় এমনটি হয়। যেখানেই কম্বোডিয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। সেখানেই স্যাংশনের ফাঁদে পড়ার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেয়া যায় না।

jjshim146@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement
হামাস ও ফিলিস্তিনি গ্রুপগুলোর মধ্যে ঐক্য আলোচনার আয়োজন করছে চীন গফরগাঁওয়ে রাজিব হত্যা মামলার আসামি গ্রেফতার ও বিচার দাবি লক্ষ্মীপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ আটক টিভিতে বিব্রতকর সাক্ষাৎকারের পর অবস্থান পাল্টালেন বিএনপি নেতা শ্বশুরের ঘর থেকে যুবকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রির কাছে আচরণবিধি লঙ্ঘন ও উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদানে অধ্যক্ষ-চেয়ারম্যান গ্রেফতার আবারো পিএমএল-এনের সভাপতি হচ্ছেন নওয়াজ শরিফ বিষখালী নদী থেকে ২২ ঘণ্টা পর নিখোঁজ জেলের লাশ উদ্ধার ৩ জেলায় বয়ে যাচ্ছে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ ছত্তিশগড়ে ২৯ জন মাওবাদী নিহত হওয়ার পর এলাকায় যে ভয়ের পরিবেশ

সকল