২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ন্যাটো সম্প্রসারণ ও এরদোগানের কূটনীতি

ন্যাটো সম্প্রসারণ ও এরদোগানের কূটনীতি - ছবি : সংগৃহীত

তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগান ঘোষণা করেছেন, ফিনল্যান্ড ও সুইডেনকে ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে তুরস্কের কোনো ‘ইতিবাচক চিন্তা’ নেই। শীতল যুদ্ধের সময়ও যে দু’টি দেশ নিরপেক্ষ ছিল, সে দু’টি এখন যুদ্ধের ডামাডোলের মাঝে ন্যাটো জোটে তরী ভিড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ন্যাটোর সেক্রেটারি জেনারেল জেনস স্টোলটেনবার্গও বললেন, ফিনল্যান্ড ও সুইডেন কোনো সমস্যা ছাড়াই দ্রুত জোটে আসবে। রাশিয়ার আপত্তি সত্তেও, ৩০ জুন মাদ্রিদ শীর্ষ সম্মেলনের আলোচ্যসূচিতে দুই দেশের সদস্যপদ অ্যাজেন্ডায় থাকছে। ইউক্রেন সঙ্কট ছাড়াও, ন্যাটোর নতুন সম্প্রসারণ পাশ্চাত্য ও রাশিয়ার মধ্যে উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলেছে। ফিনল্যান্ড এবং সুইডেনের ন্যাটোতে যোগদানে ইউরোপীয় নিরাপত্তা কাঠামোতে এক নতুন অধ্যায় শুরু হবে, যা মস্কোর জন্য আরো একটি দুঃস্বপ্নের সৃষ্টি করবে। সীমান্তের দেশ ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দিচ্ছে এমন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করেছিল, মস্কো জানায়, যেসব দেশ ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দেবে তারাও আক্রমণের টার্গেট হবে।” নিরপেক্ষ ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের ন্যাটো জোটে যোগদান, রাশিয়ার যুদ্ধ পরিধিকেও বিস্তৃত করতে পারে।

এরদোগান আওয়াজ তুলেছেন যে, এই ইস্যুটি বিশ্ব রাজনীতিতে এক ‘হট-টপিক’ হয়ে উঠেছে। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘আমাদের পূর্বসূরিরা গ্রিস ও ন্যাটোর বিষয়ে ভুল করেছে। আপনারা জানেন, ন্যাটোর সহায়তায় গ্রিস তুরস্কের সাথে কেমন আচরণ করছে। আমরা চাই না, এটা ঘটুক। দুর্ভাগ্যবশত, স্ক্যান্ডিনেভিয়ার কিছু দেশ সন্ত্রাসী সংগঠনের গেস্ট হাউজের মতো। পিকেকে এবং ডিএইচকেপি-সির (বিপ্লবী পিপলস লিবারেশন ফ্রন্ট) মতো গোষ্ঠীগুলো সুইডেনে অবস্থান করছে। নিশ্চয়ই তাদের মধ্যে কেউ কেউ তাদের সংসদেও আছেন।’ এরদোগানের এই বক্তব্য পশ্চিমা রাজধানীগুলোতে অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ কেউ এমনও বলছেন যে, তুর্কি মনোভাব ন্যাটোর সংহতিকে হ্রাস করছে এবং রাশিয়ার স্বার্থকে রক্ষা করছে। প্রকৃত সত্য হলো, তুরস্ক ন্যাটোর সংহতির অন্যতম শক্তিশালী সমর্থক ও বড় সামরিক শক্তির জোগানদাতা। অনেকেই না পারছেন হজম করতে, না পারছেন বাদ দিতে। এরদোগান ছাড়াও আরো দুই বিশ্বনেতা এই অন্তর্ভুক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন।

ক্রোয়েশীয় প্রেসিডেন্ট জোরান মিলানোভিচ ৩ মে বলেছেন, তিনি মাদ্রিদ ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের প্রবেশে বাধা দেবেন, দুই দেশের সম্ভাব্য ন্যাটোর অন্তর্ভুক্তির বিরোধিতা করবেন। তিনি বলেন, ‘আমি শয়তানের মতো পক্ষে ভোট দেয়া প্রতিটি সংসদ সদস্যের পাপী আত্মাকে তাড়া করব।’

ইতালীয় ক্ষমতাসীন জোটের দল লেগার নেতা মাত্তেও সালভিনি এই দুই দেশের ন্যাটোতে যোগদান ও ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। মস্কো বারবার ইউক্রেনের জন্য অস্ত্র সরবরাহের বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলোকে সতর্ক করেছে, যুক্তি দিয়েছিল যে, এটি কেবল সঙ্ঘাতকে স্থায়ী করবে এবং একটি দ্রæত ক‚টনৈতিক সমাধানকে বাধাগ্রস্ত করবে। মাত্তেও সালভিনি আরো বলেন, ‘এখন নয়। শান্তি অর্জনের প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করে এমন সব কিছুকে অপেক্ষমাণ তালিকায় রাখা উচিত।’ অর্থনৈতিক উন্নয়নমন্ত্রী জিয়ানকার্লো বলেন, রাশিয়ার সীমান্তের কাছে অবস্থিত দু’টি নতুন দেশের ন্যাটোতে যোগদান ‘অবশ্যই ইউক্রেনীয় দ্বন্দ্বের সময়কাল হ্রাস করতে সহায়তা করবে না।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লুইগির মতে, ‘রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর সুইডেন ও ফিনল্যান্ড সুর পাল্টায়। কেননা বাঁশি আরেকজনের হাতে।’

ইতালির মাত্তেও সালভিনি ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠানোর বিরুদ্ধে। তিনি যুক্তি দেখিয়েছেন, এটি সঙ্ঘাত বন্ধ করতে সহায়তা করবে না।
তিনি বলেন, ‘সঙ্ঘাতের শুরুতে অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তা পাঠানো এক জিনিস, এখন এটি করা অন্য জিনিস। শান্তি অর্জন করতে হবে এবং অস্ত্র পাঠিয়ে কোনো লাভ হবে না।’

মস্কো বারবার ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করার জন্য পশ্চিমা দেশগুলোকে অনুরোধ করেছে। পুতিন বলেছেন, বধিরের কানে এই আওয়াজ পৌঁছায় না; এর ফলাফল হবে কঠিন ও কঠোর। মস্কো পশ্চিমারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে একটি হাইব্রিড যুদ্ধ শুরু করছে ও অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করার জন্য ইউক্রেনকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে, এতে ওরা সফলকাম হবে না।

ক্রেমলিন ইতোমধ্যে বলেছে, ফিনল্যান্ড এবং সুইডেনের ন্যাটোতে প্রবেশকে একটি হুমকি হিসেবে দেখা হবে। রাশিয়ান কর্মকর্তারা বলেছেন, এই দেশগুলোকে ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্ত করা কেবল ইউরোপকে নিরাপদ করতে ব্যর্থ হবে না, বরং ন্যাটোর সদস্যপদ এই জায়গাগুলোকে সঙ্ঘাতপূর্ণ অঞ্চল ও শত্রুর অংশে পরিণত করবে এবং বড় ঝুঁকির সম্মুখীন হবে।

ক্রেমলিন সামরিক-প্রযুক্তিগত সতর্কতা আকারে ‘প্রতিশোধ’ নেয়ারও হুমকি দিয়েছে এবং বাল্টিক সাগরে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনের ইঙ্গিত দিয়েছে। ওয়ার বিশ্লেষকরা রায় দিয়েছেন, বাল্টিক সাগরের নিয়ন্ত্রণ যে নিতে পারবে সে ইউক্রেন যুদ্ধে জয়ী হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য, ফিনল্যান্ড এবং সুইডেনের সদস্যপদকে সমর্থন করেছে, তুরস্ক তার উদ্বেগগুলো ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে। ফলে দুই দেশের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে কূটনৈতিক অঙ্গন খুবই উত্তপ্ত।

ন্যাটোয় যোগ দিলে প্রতিবেশী ফিনল্যান্ডকে ধ্বংস করতে ‘এক মিনিটও লাগবে না’। ১৪ মে এমনই হুঁশিয়ারি দিলেন পুতিনের সহযোগী অ্যালেক্সি জুরাভলিয়ভ। এই কাজের জন্য রাশিয়ার অত্যাধুনিক আন্তঃমহাদেশীয় পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র, রাশিয়ান ভাষায় সারমাত বা শয়তান-২ ব্যবহার করা হবে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে পাশ্চাত্যের দেশগুলোর যুদ্ধংদেহী ঐক্যে তিক্তবিরক্ত হয়েই এমনটা ঘোষণা করেছেন পুতিন। রাশিয়া আরো জানায়, কালিনিনগ্রাদ থেকে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র ও সারমাতের মাধ্যমে ২০০ সেকেন্ডে ব্রিটেন ও ১০ সেকেন্ডে ফিনল্যান্ড গুঁড়িয়ে দেয়া যায়। গত এপ্রিলে বাল্টিক সাগরে সারমাত হাইপারসনিক অস্ত্র সফল উৎক্ষেপণ করেছিল মস্কো। এরপর থেকেই রাশিয়ার তরফে পরমাণু হামলার আশঙ্কা জোরালো হয়েছে। ইতোমধ্যেই ফিনল্যান্ডে রাশিয়া ১৪ মে থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও সফলভাবে হাইপারসনিক অস্ত্রের পরীক্ষা সম্পন্ন করল মাত্র ক’দিন আগে। এই অস্ত্রটি শব্দের চেয়ে পাঁচগুণ বেশি দ্রæত ছুটতে পারে বিধায় দ্রæত গতির কারণে শনাক্তকরণ এবং ঠেকানো কঠিন।

ন্যাটোর বিপরীতে রাশিয়াও সামরিক জোট গঠন করে সদস্য বাড়ানোর চেষ্টা করছে। রাশিয়ার জোটে রয়েছে বেলারুশ, আর্মেনিয়া, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান ও তাজিকিস্তান।এই দেশগুলো সামরিক জোট ‘কালেক্টিভ সিকিউরিটি ট্রিটি অরগানাইজেশন’-এর (সিএসটিও) অন্তর্ভুক্ত। নরডিক দেশগুলোতে ন্যাটো কেমন সামরিক শক্তি বিস্তার করে তার ওপর ভিত্তি করে রাশিয়া ব্যবস্থা নেবেÑ এমন ঘোষণা দিয়েছে। ইতোমধ্যে ইউরোপের ভেতরে রুশ ছিটমহল কালিনিনগ্রাদে পরমাণু অস্ত্র ও হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপন করা হয়েছে বলে বিভিন্ন মহল সংবাদ প্রচার করেছে।

ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর প্রথম দিকে প্রেসিডেন্ট পুতিন বাকি বিশ্বকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন, রাশিয়া একটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশ এবং তার পারমাণবিক অস্ত্রসম্ভারকে প্রস্তুত রেখেছেন। যুদ্ধক্ষেত্রে রুশ সেনাবাহিনীকে স্বল্পমাত্রার ট্যাকটিকাল পরমাণু অস্ত্র প্রথম ব্যবহার করার অধিকার ইতোমধ্যেই দেয়া হয়েছে। শত্রæপক্ষ থেকে তেমন অস্ত্র ব্যবহারের জন্য রুশ সেনাবাহিনীকে অপেক্ষা করতে হবে না। গত ৭৭ বছরে কোনো যুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার হয়নি এবং রাশিয়া জানে, তেমন অস্ত্র ব্যবহার নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বে ব্যাপক ভীতি রয়েছে। ন্যাটো জোটে ঢুকতে চাওয়ায় ইউক্রেনে আগ্রাসন চালিয়েছে রাশিয়া; এবার ফিনল্যান্ড অথবা সুইডেনের ক্ষেত্রে এ ধরনের ব্যবস্থা ক্রেমলিন নেবে কি না সেটি এখনো পরিষ্কার নয়। তবে, সাবেক রুশ প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেছিলেন, ফিনল্যান্ড এবং সুইডেন ন্যাটোতে যোগ দিলে কালিনিনগ্রাদের ছিটমহল থেকে পারমাণবিক অস্ত্র এবং হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার হতে পারে। এই ভয়ে ফিনল্যান্ডের মধ্যেই মাটির নিচে ৫০০ হেভি বাঙ্কার তৈরি করেছে। ফলে সাধারণ জনগণ ভীতির মধ্যে দিন অতিবাহিত করছে। শান্তির পথে হাঁটতে গিয়ে অশান্তির কালোমেঘে ছেয়ে গেছে পুরো ফিনল্যান্ড। এদিকে অস্ট্রিয়া ন্যাটো জোটে ঢুকবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে।

তুরস্ক ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের সদস্যপদের অনুরোধে ভেটো দেবে কি না তা এখনো স্পষ্ট নয়। তুরস্ক পিকেকের প্রতি স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি ও গুলেনিস্ট টেরর গ্রæপকে অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করে। তা ছাড়া এ বিষয়টি ন্যাটো জোটের চেতনার সাথেও সম্পর্কযুক্ত নয়। পিকেকে’কে আশ্রয় দেয়া একটি দেশের কিছু দুঃসাহসিক মন্তব্য তুরস্ককে খুব অসন্তুষ্ট করেছে। ন্যাটোর অন্যতম প্রধান সদস্য, যারা সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেয়, তুরস্ক যুক্তিসঙ্গতভাবে সেই সব দেশকে, যাদের নীতি তুর্কি নিরাপত্তা স্বার্থকে আঘাত করে, তাদের এই নীতি পরিবর্তন করার জন্য অনুরোধ করতে পারে।

অভিযোগের সুরে জুরাভলিয়ভ বলেন, ফিনল্যান্ডকে ন্যাটোয় যোগদান করতে জোর করছে ব্রিটেন এবং আমেরিকা। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা নিয়েও উষ্মা প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, ‘আমেরিকা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঘটানোর সবরকম প্রয়াস চালাচ্ছে। পরমাণু যুদ্ধ না হলেও পুরো ইউরোপকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যেতে প্ররোচিত করছে। এভাবেই নিজেদের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান চাইছে আমেরিকা।’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘আক্রমণাত্মক’ উপায়ে ন্যাটোর স¤প্রসারণ কৌশলকে ব্যবহার করছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইডেনের উচিত ইউক্রেন বাদ দিয়ে দেশের ভেতর অস্ত্র ব্যবহার নীতিকে শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করা।

আফগানিস্তানে সোভিয়েত দখলদারির সময়ে বিমান ধ্বংসের জন্য আমেরিকা আফগান মুজাহিদিনদের জ্যাভেলিন ও এনএল ট্যাংকবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র, স্ট্রিংগার এবং স্টারস্ট্রিক বিমানবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েছিল। ইউক্রেন এখন এসব অস্ত্র চাইছে।

এখন পর্যন্ত পশ্চিমা জোট ও ৩০টিরও বেশি দেশ ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দিয়েছে। তাদের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেয়া সাহায্যের পরিমাণ ১০০ কোটি ডলারের মতো। যুক্তরাষ্ট্র একাই দিয়েছে ১৭০ কোটি ডলারের অস্ত্র-সরঞ্জাম। ব্রিটেন তাদের তৈরি সহজে বহনযোগ্য স্টারস্ট্রিক বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দিয়েছে। স্লোভাকিয়া ইউক্রেনে এস থ্রি হানড্রেড, এস-৩০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পাঠিয়েছে। অবশ্য রুশরা, মোতায়েনের আগেই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে পুরো ‘সিস্টেম’ তছনছ করে দিয়েছে, বহু অস্ত্রের ডিপো জ্বালিয়ে দিয়েছে। ইউক্রেনীয় রাষ্ট্রপতি জেলেনস্কি যিনি পূর্বশর্ত ছাড়া কোনো শান্তি বৈঠকে নারাজ তিনি চিৎকার করে বলছেন, ‘যুদ্ধ বন্ধ করুন, রাশিয়ার দখলকৃত জায়গা ফেরত দেয়ার দরকার নেই!’

পশ্চিমা দেশের সরকারগুলোর মধ্যে একটি ভয় কাজ করছে, চাপে পড়লে রাশিয়া হয়তো স্বল্পমাত্রার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে এবং তা যদি হয়Ñ তাহলে যুদ্ধ ইউক্রেনের সীমান্ত ছাড়িয়ে ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ার বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি হবে। ফিনল্যান্ড ও সুইডেনকে হুঁশিয়ারি তো দেয়াই আছে।

ন্যাটো স¤প্রসারিত হলে মস্কো সেটা কোনোমতে সহজভাবে নেবে না। ওই দু’টি দেশকে যাতে সহজে ও খুব তাড়াতাড়ি আক্রমণের থাবার মধ্যে আনা যায় সে জন্য মস্কো উত্তর মেরুর বিশাল জনমানবশূন্য স্থানে উচ্চ প্রযুক্তির পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র জমা করেছে। ফ্রান্জ জোসেফ ল্যান্ড নামের জায়গাটিতে আছে রাশিয়ার অত্যাধুনিক সামরিক ঘাঁটি। উত্তর মেরু নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে রাশিয়ার সম্পর্কে বাড়তি উত্তেজনার উৎস এই ঘাঁটি। যুক্তরাষ্ট্র আবারো মস্কোর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে যে, মস্কো উত্তর মেরু অঞ্চলে ‘সামরিকায়ন’ করছে।

রাশিয়ার মারমানস্ক থেকে উত্তর মেরুর কাছে আলেক্সান্ড্রা দ্বীপে ফ্লাইট পৌঁছাতে সময় লাগে দুই ঘণ্টা। সারা বছরই সব ধরনের বিমান এই বন্দরে নামতে পারে। মে মাসের মাঝামাঝিতেও ঘন তুষারপাত হয়, তুষারের শুভ্রতা ছাড়া আর কিছুই দেখা যায় না। শীতকালে এখানে তাপমাত্রা নেমে যায় মাইনাস ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এখানে লুকানো আছে অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র। রাশিয়ার বাস্টিয়ন মিসাইল লঞ্চার বা ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ যন্ত্রটির ফায়ারিং মেকানিজম সবসময় ঊর্ধ্বমুখী করে রাখা আছে এখানে। রুশ পারমাণবিক সাবমেরিনগুলো বরফ কেটে সহজেই উত্তর মেরুর দিকে চলে যেতে পারে!

রাশিয়ার এসব সামরিক মহড়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটো বেশ চিন্তিত। কারণ স্নায়ুযুদ্ধের পর উত্তর মেরুতে রাশিয়ার এরকম ব্যাপক সামরিক উপস্থিতি আর দেখা যায়নি। ১৯৯০-র দশকের শুরুতে সোভিয়েত ইউনিয়ন যখন ভেঙে যায়, তখন রাশিয়া যেসব এলাকা ত্যাগ করে চলে এসেছিল, সেসব জায়গাতেই এখন ফিরে এসে সামরিক শক্তি বাড়াচ্ছে।

ব্রিটেনের অবসরপ্রাপ্ত সামরিক অধিনায়ক বিবিসিকে বলেছেন,‘যদি কৌশলগত লক্ষ্য অর্জনই মূল লক্ষ্য হয়, তাহলে এই সঙ্ঘাতের চূড়ান্ত পরিণতির বিষয়টি মাথায় নিয়ে এগোতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা যেটা অর্জনের চেষ্টা করছি তা হলো তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঝুঁঁকি এড়িয়ে ইউক্রেনকে ও পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোকে যতটা সাহায্য করা যায়। কিন্তু সমস্যা হলো পুতিন আমাদের চেয়ে অনেক বড় জুয়াড়ি।’
টোবিয়াস এলউড এমপি এমন কথার সাথে একমত। ‘রাশিয়া খুব সফলভাবে তাদের হুমকি কাজে লাগায়। আমরা ভয় পেয়ে যাই। পুরো পরিস্থিতিকে আমাদের মতো করে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা আমরা হারিয়ে ফেলেছি। তিনি একাই ইউরোপ আমেরিকার এতগুলো নেতাদের সাথে লড়ে বিশ্বের শীর্ষ নেতার স্থান দখল করে রয়েছেন।’
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব ও গ্রন্থকার


আরো সংবাদ



premium cement
‘রাফা হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরাইলি সেনারা’ ৪৬তম বিএসএস প্রিলি পরীক্ষা : শুরুতেই স্বপ্নভঙ্গ ৮১ শিক্ষার্থীর মরুর উষ্ণতায় ক্ষতির মুখে কৃষি ছেলেদের কারণে বিপাকে মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির দুই বিভাগে বৃষ্টি হতে পারে ফ্রান্স, ব্রাজিল ও প্যারাগুয়ে সফরে যাচ্ছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ড সফরকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে মাইলফলক বললেন প্রধানমন্ত্রী লালমনিরহাটে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী যুবক নিহত এখনো শেষ হয়নি বিতর্কিত আউটের রেশ, ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ মুশফিকের ‘ফ্রি ভিসার গল্প’ আর শূন্য হাতে ফেরা লাখো শ্রমিক নোয়াখালীতে প্রবাসীর স্ত্রীর ব্যক্তিগত ছবি দেখিয়ে চাঁদা আদায়

সকল