প্রথমে কুরআন কারিমের সূরা আদ্ দাহারের ৮ নম্বর আয়াত উল্লেখ করছি। আয়াতে বলা হয়েছে, ‘এরা (সৎকর্মশীলরা) শুধু আল্লাহ তায়ালার ভালোবাসায় মিসকিন, এতিম ও কয়েদিদের খাবার দেয় (সূরা ৭৮,আয়াত ৮)। এখানে ‘খাবার দেয়া’ অর্থ শুধু খাবার দেয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা ঠিক হবে না। বরং এর অর্থ হচ্ছে, সর্ব উপায়ে কয়েদিদের সাহায্য করা। এখন আমরা ইসলামে কয়েদির অধিকার নিয়ে আলোচনা করছি।
‘কয়েদি’ মানে বিশেষ করে যারা জেলে আটক আছেন। জেলে যারা থাকেন তারা দুই ধরনের; এক ধরনের হচ্ছেন তারা- যাদের বিচার এখনো সমাপ্ত হয়নি। আরেক দল হচ্ছেন তারা- যাদের বিচার হয়েছে এবং যারা দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে জেলে আছেন। তাদের সবাইকে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সহায়তা করা উচিত। মনে রাখতে হবে যারা ভুল করেছেন বা যারা অপরাধ করেছেন তাদেরও মানবাধিকার আছে। সুতরাং আমরা মনে করি, এ বিষয়টি আমাদের সবারই পূর্ণরূপে উপলব্ধি করা দরকার।
আমাদের দেশে বানোয়াট ও মিথ্যা মামলার কারণেই অনেক মানুষকে জেলে যেতে হয়। যারা জেলখানায় আটক আছেন তাদের মধ্যে অনেকে এ ব্যাপারে আপিল করতে পারেন না। কারণ তাদের অর্থ নেই। এমনকি উকিল ধরার মতো অর্থও তাদের কাছে থাকে না। কুরআনের সূরা দাহারের আয়াতের আলোকে এসব লোককে সাহায্য করা আমাদের একটি বড় কর্তব্য।
যারা বন্দিজীবন কাটাচ্ছেন তারা অতি প্রয়োজনীয় জিনিসও অনেক সময় পান না। এ সমস্যার সমাধান করাও আমাদের কর্তব্য। মনে হয়, আমরা চাইলে কুরআনের আয়াতের আলোকে যারা কয়েদি হিসেবে আছেন তাদের অসুবিধাগুলো দূর করা সম্ভব। যারা দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে জেল খাটছেন তাদের আর্থিক অসুবিধাগুলো দূর করার চেষ্টা করতে পারি। যারা অর্থের অভাবে আপিল করতে পারছেন না তাদের সহযোগিতা দিতে পারি।
এ ছাড়াও কিছু কয়েদি আছেন যারা জরিমানার অর্থ পরিশোধ করতে না পারায় বছরের পর বছর জেল খাটছেন; কিন্তু মুক্তি পাচ্ছেন না। এসব জরিমানা পরিশোধ করার জন্য আমরা যদি সাহায্য করতে পারি, তাহলে এটা হবে বড় ধরনের একটা উপকার। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, আল্লাহ তায়ালা নিশ্চয় বিনা কারণে কয়েদিদের (আসির) সাহায্য করার কথা বলেননি। বিষয়টি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা কুরআনের অনেক বক্তব্যকে ভালো করে বোঝার কিংবা সংশ্লিষ্ট প্রতিকারের চেষ্টা করি না।
এখন কুরআনের আরেকটি আয়াতের কথা বলব যেখানে বন্দীদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কুরআনুল কারিমের সূরা তওবার ৬০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, জাকাত হচ্ছে ফকির-মিসকিনদের জন্য, তাদের জন্য যারা গোলাম হয়ে আছে (ফির-রেকাব), তাদের জন্য যারা ঋণগ্রস্ত আল্লাহ তায়ালার পথে ইত্যাদি। ওই সময়ে যখন আয়াত নাজিল হয়েছিল, তখনকার পরিপ্রেক্ষিতে গোলাম ছিল তৎকালীন দাস-দাসীরা। আল্লাহ তায়ালা তাদের মুক্ত করার কথা বলেছেন জাকাতের অর্থ ব্যয়ের মাধ্যমে। এখন দাস-দাসী নেই, এখন ফির-রেকাব বলতে বুঝাবে কয়েদিরা যারা জেলে আটকে পড়ে আছেন। সুতরাং এ আয়াতেও দেখা যায়, যারা আর্থিকভাবে দুর্বল তাদের ফকির হিসেবেও সাহায্য করা যায় অথবা ঋণগ্রস্ত হিসেবে সাহায্য করা যায় অথবা ফির-রেকাবের খাত থেকে সাহায্য করা যায়। এই তিনটি খাতই জাকাতের ব্যয়ের খাতের অন্তর্ভুক্ত।
এখন বলছি, এর বাস্তব পদ্ধতি কী হবে? বাস্তব পদ্ধতি হচ্ছে কয়েদিদের আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে তাদের সাহায্য করা। আর একটি পন্থা হতে পারে কিছু এনজিও এ খাতের জন্য প্রজেক্ট নেবে এবং সর্বাত্মক চেষ্টা করবে তাদের সাহায্য করার জন্য। ব্যক্তিরা যারা সাহায্য করবেন বা ইসলামী এনজিওগুলো যারা এ কাজে হাত দেবেন, তারা এ কাজে জাকাতের অর্থ ব্যয় করতে পারবেন, যেমন আগে উল্লেখ করেছি। এ বিষয়ে সব মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা