০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`


সাধারণ মানুষের নিঃস্ব হওয়ার কারণ

সাধারণ মানুষের নিঃস্ব হওয়ার কারণ - ছবি : সংগৃহীত

এ লেখায় এমন কয়েকটি সমস্যার কথা আলোচনা করব, যার কারণে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত ও নিম্নশ্রেণীর এক বিরাট অংশ নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে একটি সমস্যার ফল কিছু দিন আগে লিখেছি। সেটি হচ্ছে, কিছু রোগের চিকিৎসা ব্যয়। এ দেশে কিছু রোগের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এসব রোগের মধ্যে রয়েছে ক্যান্সার, হার্টের বাইপাস অপারেশন, কিডনির নিয়মিত ডায়ালাইসিস ইত্যাদি। এগুলোর ব্যয় অবশ্যই সরকারকে বহন করতে হবে। এতে বছরে এক হাজার কোটি টাকা খরচ হতে পারে। তা না হলে প্রতি বছর কয়েক লাখ করে নিঃস্ব মানুষ বাড়তে থাকবে। এভাবেই হয়ে আসছে। দ্বিতীয় সমস্যা হচ্ছে, নদীভাঙন। এতে প্রতি বছর এক লাখ লোক গৃহ ও জমি হারায় বাংলাদেশে। এটা চলতে থাকবে।

বাঁধ দিয়ে এ সমস্যার সার্বিক সমাধান হবে না। হলে ভালো কথা। যত দিন তা না হচ্ছে, তত দিন নদীভাঙনের শিকার- এমন লোকদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। আগেও এ সম্পর্কে লিখেছি। এ জন্য রিলিফ বিভাগের বিশেষ ব্যবস্থা, লোকবল ও অর্থ থাকতে হবে। এটা হতে হবে একটি স্থায়ীভাবে চালু রাখা প্রজেক্ট।

নদীভাঙনের শিকার লোকদের প্রথমত, রিলিফকেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে। নদীভাঙনে দেশের ১৫-২০টি এলাকা বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। এসব এলাকায় রিলিফ সেন্টার বা ত্রাণকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যদি নিকটবর্তী এলাকার খাস জমিতে পুনর্বাসন সম্ভব হয়, তাহলে সেটা করতে হবে। যাদের এভাবে পুনর্বাসন করা যাবে না, তাদের জন্য সরকার কোথাও না কোথাও ঘর তৈরি করে দেবে, তাদের চাকরির ব্যবস্থা করবে, অন্তত হকার হিসেবে আয় করার উপযোগী আর্থিক সাহায্য দেবে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও রিলিফ মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে বিস্তারিত ও বাস্তব পরিকল্পনা গ্রহণ করবে। বিষয়টিকে হালকাভাবে দেখলে হবে না। বর্তমানে এসব লোকের একটা বড় অংশই শহরে চলে আসে ছিন্নমূল হিসেবে। ওরা রাস্তাঘাট ও বস্তিতে থাকে। ফলে পথশিশুর সংখ্যা বাড়ে। বস্তির অপরাধীরা এদের ব্যবহার করে। তাদের নারীদের থাকে না নিরাপত্তা। প্রতি বছর এদের জন্য বড়জোর ১০০ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে।

এরপর যে সমস্যা মানুষকে নিঃস্ব করছে, তা হচ্ছে মামলার খরচ। আজকাল রাজনৈতিক মামলা হচ্ছে লাখ লাখ। কোনো কোনো মামলায় হাজার হাজার আসামি; আবার কারো কারো বিরুদ্ধে শ’খানেক মামলা। পত্রিকায় দেখলাম, দৈনিক ‘আমার দেশ’ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে ৭৫টি মামলা। এগুলো থেকে তাকে জামিন নিতে হয়েছে।

আজকাল জামিন সহজে পাওয়া যায় না। আইনজীবীর খরচ অনেক। জামিনের পর কয়েক বছর ধরে আদালতে হাজিরা। তখনো খরচ হয়। অসংখ্য লোক মামলায় সর্বস্বান্ত হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে বের হওয়ার পথ হলো- এত মামলা পুলিশের দায়ের না করা, কেবল যুক্তিযুক্ত ক্ষেত্রে মামলা করা, বেনামি শত শত লোককে আসামি না করা, সরকার বা কোর্ট কর্তৃক সবাইকে লিগ্যাল এইড (আইনি সহায়তা) দেয়া, আইনের বিধিবিধান সহজ করা এবং পুলিশের নির্যাতনের সুযোগ কমিয়ে দেয়া। সুপ্রিম কোর্টের বিষয়টি দেখা দরকার এবং নানা ধরনের গাইডলাইন জারি করা প্রয়োজন। তা না হলে নিঃস্ব লোক আরো বাড়বে।

পরিশেষে, মাদক ও সিগারেট পানের কথা বলব। মাদক সেবন অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব লোক শেষ পর্যন্ত অপরাধী ও নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। অন্য দিকে, সিগারেট ধূমপানও ভয়াবহভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যে দিকে তাকাই, দেখি-লোকেরা সিগারেট খাচ্ছে- ছেলে, বুড়ো, দৃশ্যত ধার্মিক লোক, শ্রমিক ও রিকশাওয়ালারা। অনেকের শরীর দুর্বল, তারা আরো দুর্বল হয়ে যাবে এতে। রিকশাওয়ালাদের সামান্য রোজগারও নষ্ট হয়ে যায় ধূমপানে। ধার্মিক লোকেরা কেন সিগারেট খায়, বুঝতে পারি না। আলেমরা এটাকে সব সময় মাকরুহ বলে এসেছেন; খারাপ কাজ বলে এসেছেন। প্রখ্যাত ইসলামি চিন্তাবিদ ড. ইউসুফ আল কারজাবি বলেছেন, ‘এখনো কি সন্দেহ আছে যে, সিগারেট খাওয়া হারাম।’ অর্থাৎ আগের লোকেরা জানত না, সিগারেট এত বেশি ক্ষতিকর; কিন্তু এখন সবাই জানে। সুতরাং সিগারেট পান হারাম, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এটাই তার অভিমত।

মাদক সেবন ও সিগারেট খাওয়া বন্ধ করার জন্য সর্বাত্মক উদ্যোগ দরকার। সিগারেট, বিড়ি ও মাদক উৎপাদন, আমদানি ও বিক্রি নিষিদ্ধ করা উচিত। এ ব্যাপারে সর্বাত্মক তদারকির জন্য প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের একটি সেল থাকতে পারে।
লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার


আরো সংবাদ



premium cement
তেল আবিবে ইরাকি গ্রুপের হামলা ফিলিস্তিন সঙ্কট সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে মুসলিম উম্মাহ : পররাষ্ট্রমন্ত্রী নোয়াখালীতে সিএনজি-ট্রাক মুখোমুখি সংঘর্ষ, নিহত ৩ কোভিড ভ্যাকসিনে মস্তিষ্কে ক্ষতি, মামলা জয়ে এগিয়ে ভুক্তভোগী যুদ্ধবিরতি প্রত্যাখ্যান করলে হামাসকে বহিষ্কার : যুক্তরাষ্ট্রের হুমকি বুমেরাং হতে পারে গাজায় ইসরাইলি গণহত্যার বিরুদ্ধে রাজধানীতে শিবিরের বিক্ষোভ রাফাহ আক্রমণের ক্ষয়ক্ষতি হবে ‘গ্রহণযোগ্যতার বাইরে’ : এন্টনি ব্লিঙ্কেন ইন্দোনেশিয়ায় ভূমিধস ও বন্যায় ১৫ জনের প্রাণহানি ব্রাজিলে ভয়াবহ বন্যায় প্রাণহানি ৩৯, নিখোঁজ অর্ধশতাধিক পুরোপুরি দুর্ভিক্ষের কবলে উত্তর গাজা : জাতিসঙ্ঘ দেশের বিভিন্ন স্থানে ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হতে পারে

সকল