০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ক্রীড়ামন্ত্রীতে সমাধান খুঁজছে মোহামেডান

গতকাল সংবাদ সম্মেলনে মোহামেডানের কর্মকর্তারা : নয়া দিগন্ত -

নয়টার গাড়ি কয়টায় ছাড়ে। এই প্রবাদের সাথে হুবহ মিল বাংলাদেশ হকির। যেকোনো ফেডারেশনে হয়তো দোষ হাতেগোনা। আর হকিতে অসংখ্য। একটা ঘটনার সাথে খেলোয়াড়-আম্পায়ার-কর্মকর্তা-ক্লাব-সংশ্লিষ্ট কমিটি-হকি ফেডারেশনসহ সবাই জড়িত। সুরাহার যেন কোন পথ খোলা নেই। কে কার বিচার করবে কিংবা সমাধান দিবে। কেউ বিচার না চেয়েও পেয়ে যায়, কেউ দারে দারে ঘুরে ঘুরে যায় বেলা। অতীতে হকি প্রিমিয়ার লিগে মারামারি-ভাঙচুর-গেঞ্জাম নৈমিত্তিক ঘটনা হলেও এবারের প্রিমিয়ার লিগ সব কিছুকে ছাড়িয়ে গেছে। সমস্যা সমাধানে ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপনের কাছে সমাধান খুঁজছে মোহামেডান। তা ছাড়া দাবি করেছেন বাহফে কমিটি ভেঙে অ্যাডহক কমিটি করার। তাদের মতে নির্বাচিত কমিটির চেয়ে অ্যাডহক কমিটি ভালো চালিয়েছে।
ঘটনাটা তিন দিন আগের। এবারের লিগে অঘোষিত ফাইনালে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মোহামেডান মাঠে না ফেরায় আবাহনীকে ৫-০ ব্যবধানে জয়ী করা হয়। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপনের কাছে ওই ম্যাচের আম্পায়ারের শাস্তি, সেই ফলাফল বাতিলসহ হকি ফেডারেশন পুনঃগঠনের দাবি জানিয়েছে সাদা-কালো খ্যাত ক্লাবটি।
গতকাল সংবাদ সম্মেলনে ক্লাবের ডাইরেক্টর ইনচার্জ কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘আমাদের বিপক্ষে সারা লিগজুড়ে অন্যায়-অবিচার হয়েছে। এ জন্য আমরা ফেডারেশনকে নানা সময়ে চিঠি দিয়েছি, সেই চিঠির কোনো প্রতিকার পাইনি। ন্যূনতম সম্মানও তারা দেখায়নি। তাই বাধ্য হয়ে সুবিচারের দাবিতে ক্রীড়ামন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে আমরা যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী, সফল বিসিবি সভাপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। অতীতে হকির ক্রান্তিকালে আপনি (পাপন) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। হকির এমন খারাপ সময়ে, আশা করছি আপনি খতিয়ে দেখবেন।’
মোহামেডান ম্যাচের দিনই ভিডিও রেফারেল দেখে লাল কার্ডের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছিল আম্পায়ারকে। গতকালও একই অবস্থানে ছিলেন তারা। অভিযুক্ত ওমানের আম্পায়ার ইতোমধ্যে দেশ ছেড়েছেন। বাহফে আবাহনীকে জয়ী ঘোষণা করে এখন আবাহনী-মেরিনার্স প্লে অফ নিয়ে ব্যস্ত। তারিখও দেয়া হয়েছে কিন্ত কয়েকটি কারণ দেখিয়ে আবাহনী-মেরিনার্স সময় পেছানোর জন্য বাহফেকে চিঠি দেয়। হয়তো আগামী মাসে তাদের ম্যাচটি হতেও পারে কিংবা সহজ সমীকরণে যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন ঘোষণাও করে দিতে পারে। এ অবস্থায় মন্ত্রীর পক্ষে মোহামেডানের দাবি মানা অসম্ভবের শামিল।
মোহামেডানের সাবেক পরিচালক ও কিংবদন্তী হকি এবং ফুটবলার প্রতাপ শঙ্কর হাজরা বলেন, ‘এই লিগে অনেক ঘটনাই ঘটেছে। একটি লিগে একই বাইলজে তিনটি নিয়ম কিভাবে বাস্তবায়ন করে সে জবাব চাই ফেডারেশনের কাছে। গ্রুপ পর্বে অ্যাজাক্স-বাংলাদেশ স্পোর্টিংয়ের ম্যাচে এক কোয়ার্টার না খেলিয়ে কিভাবে পয়েন্ট ভাগাভাগি করে। আজাদ-বাংলাদেশ স্পোর্টিং ম্যাচে গেঞ্জামে খেলা শেষ না হলে পরের দিন বাকি ১১ মিনিট খেলা হয়েছে। আর আবাহনী-মোহামেডান খেলা শেষের আগেই তাড়াহুড়ো করে ফলাফল ঘোষণা করা হলো। আর মোহামেডান তো রিফিউস টু প্লের পর্যায়ে পড়ে না। তারা ভিডিও রেফারেল চেয়েছিল। আম্পায়ার সেটি দেয়নি। তারা আবাহনী-মোহামেডানের বাকি অংশটুকু পরদিন দিতে পারতো। বাইলজে একই রুলস অন্যদের জন্য এরকম আর মোহামেডানের জন্য ভিন্ন। এটা সবাই দেখেছেন। বাইলজের যাচ্ছেতাই ব্যবহার হয়েছে।’
মোহামেডান ফুটবল ক্রিকেট খেললেও হকিতেই তাদের সেরা সাফল্য। রাগে-ক্ষোভে-অভিমানে ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি হকি ডিসিপ্লিন থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করছে। আম্পায়ারিং ও ফেডারেশন নিরপেক্ষ না হলে সেই লিগে অংশগ্রহণের যৌক্তিকতা নেই বলে মনে করছে ক্লাবটি। প্রতাপ শঙ্কর আরো বলেন, ‘মন্ত্রী যদি বিষয়টি সুষ্ঠ তদন্ত বা সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ না করেন তখন আমাদের পরিচালনা পর্ষদ হকি না খেলার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এ ছাড়া বাহফে কমিটি থেকেও মোহামেডানের স্থায়ী সদস্যরা পদত্যাগ করতে পারেন।’
ম্যাচের দিন মোহামেডান ৩-২ গোলে এগিয়ে ছিল। ম্যাচের বাকি ছিল মাত্র ১৭ মিনিট। সেই মুহূর্তে মোহামেডানের খেলোয়াড়রা কেন আবাহনী খেলোয়াড়দের ফাদে পড়ে বিবাদে জড়াল এবং টেন্ট থেকে পুরো দল গিয়ে কেন মারামারি করল? এমন প্রশ্নের জবাবে মোহামেডানের ম্যানেজার আরিফুল হক প্রিন্স বলেন, ‘আবাহনীর খেলোয়াড় পুস্কর খিসা মিমো আগে আক্রমণ করেছে। সেই আক্রমণের প্রেক্ষিতে আমাদের খেলোয়াড়রা রক্তাক্ত হয়েছে। অথচ আম্পায়ার আমাদের বেশি কার্ড দিয়েছে। আর হকিতে উত্তেজিত মুহূর্তে খেলোয়াড়রা জড়িয়ে পড়ে এটা নতুন কিছু নয়। যে মিমোতে গেঞ্জামের সূত্রপাত তাকে কোনো কার্ডই দেয়া হলো না। চক্রান্ত ইজ ওপেন।’
হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মমিনুল হক সাঈদ ২০১৯ সালের নির্বাচনের মোহামেডানের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মোহামেডান প্যানেল থেকে নির্বাচন করেই তিনি বাহফের সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন। পাঁচ বছরের মধ্যেই সেই মোহামেডান সাঈদকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাল।
সংবাদ সম্মেলনে কাজী ফিরোজ রশীদ, প্রতাপ শঙ্কর হাজরা, প্রিন্স ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পরিচালক জামাল রানা, স্থায়ী সদস্য সারওয়ার হোসেন, শফিকুল ইসলাম লিটু, হাজী মো: হুমায়ন (সহসভাপতি, হকি কমিটি)।


আরো সংবাদ



premium cement