২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সেহেরির ডাকাডাকি বন্ধ না হয়ে সহনীয় হোক

সেহেরির ডাকাডাকি বন্ধ না হয়ে সহনীয় হোক - ছবি : সংগৃহীত

সেহেরির সময় ডাকাডাকি একটি বাঙালী সংস্কৃতি। ইসলামে রয়েছে এর জোরালো সমর্থন। এই ঐতিহ্যকে আশ্রয় দেয়া ইসলামের অনন্য সৌন্দর্য। তাই সেহেরির ডাকাডাকিকে নিছক আহ্বান মনে করা ভুল। এটি ধর্মীয় কল্যাণকামিতাও বটে।

রোজা রাখার উদ্দেশে সেহেরি খাওয়া নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। তিনি নিজে সেহেরি খেতেন। সাহাবায়ে কেরামকেও সেহেরির জন্য ডাকতেন। ইমাম আবু বকর ইবনে আবি শায়বা রহ. তার মুসান্নাফ গ্রন্থে আবু রুহম সামায়ি রহ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি ইরবাদ ইবনে সারিয়া রা.-কে বলতে শুনেছি, রাসূল সা. আমাদেরকে রমজানে সেহেরির জন্য ডাকতেন। তিনি বলতেন, বরকতময় ভোররাত। মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস নম্বর ৮৭২১, আস-সুনানুল কুবরা, হাদিস নম্বর ২৪৫৪, শরহু মুশকিলিল আসার, হাদিস নম্বর ৪৮৪১, সুনানে নাসায়ি, হাদিস নম্বর ২২৬৫, সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নম্বর ২০০০, মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নম্বর ১৬৮১২, মুজামুল কবির হাদিস নম্বর ১৫০৫০, সহিহ ইবনে খুযায়মা, হাদিস নম্বর ১৮৩৫, সবগুলো হাদিসের সনদ সহিহ ও শক্তিশালী।)

রাসূল সা. কেবল নিজেই ডাকতেন না। সাহাবায়ে কেরামও পরস্পর ডাকাডাকি করতেন। বিষয়টি বুখারি ও মুসলিমের বর্ণনায় উঠে এসেছে। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, রাসুল সা. বলেছেন, বিলালের আযান- অথবা বলেছেন- বিলালের ঘোষণা যেন তোমাদের কাউকে সেহেরি খাওয়া থেকে বিরত না রাখে। কেননা সে আযান দেয়- অথবা বলেছেন- সে ঘোষণা দেয়, যেন তোমাদের মধ্যে যে ইবাদতরত, সে ঘরে ফিরে যায় আর ঘুমন্তদের যেন জাগিয়ে তুলতে পারে। সহিহ বুখারি, হাদিস নম্বর ৬২১, সহিহ মুসলিম, হাদিস নম্বর ১০৯৩।

সুতরাং সেহেরির জন্য ডাকাডাকি করা শরিয়তে স্বীকৃতি বিষয়। এজন্য সালাফের যুগেও এর দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। উতবাহ বিন ইসহাক যখন আব্বাসি খলিফা মুনতাসির বিল্লাহর পক্ষ থেকে মিশরের শাসক নিযুক্ত হন, তিনি ফুসতাতের আসকার শহর থেকে আমর ইবনে আস মসজিদ পর্যন্ত পায়ে হেঁটে সেহেরির জন্য মানুষকে ডাকাডাকি করতেন। এছাড়া মক্কায় ‘যামযামি’ এবং বাগদাদে ‘ইবনে নুকাত’ও সেহেরির জন্য ডাকাডাকি করতেন।

যামযামি মসজিদের মিনারে উঠে সেহেরির জন্য ডাকতেন। এ সময় তার ছোট দুই ভাই এলাকায় গিয়ে ডাকাডাকি করতেন। তাদের ডাকার ভাষ্য ছিল, ‘হে ঘুমন্তরা, সেহেরির জন্য উঠুন।’ এ সময় তারা একটি রশিতে দু’টি বড় বাতি ঝুলিয়ে সাথে রাখতেন। যেন যারা কানে শুনে না, আলো দেখে সেহেরির সময় বুঝতে পারে। এভাবে পরবর্তী সময়ে সুরসহ ছন্দ ও গজল দিয়ে ডাকাডাকির প্রচলন শুরু হয়। এরপর সেহেরির জন্য আলাদা ঘোষকদলেরও ব্যবস্থা হয়। তাদের নেতৃত্বে বেশ কিছু লোক ড্রাম ও করতালে হালকা আওয়াজে গজল গাইত। ইব্রাহিম আনানি- আল-আখবার নিউজ ১৫ রমজান ১৪১৪ হি.।

তাই সেহেরির জন্য ডাকাডাকি করতে সমস্যা নেই। তবে যুগের পরিবর্তনে ডাকাডাকির উপায়েও ভিন্নতা এসেছে। এক্ষেত্রে উপায়গুলো যদি শরিয়াতের সাধারণ নীতি ও কাঠামোর মধ্যে থাকে, তবে সমস্যা নেই। সেজন্য সালাফের যুগে বাতি জ্বালিয়ে, ছন্দ ও কবিতা আবৃত্তি করে, গজল গেয়ে, যন্ত্র পেটানোসহ নানা উপায়ে ডাকাডাকির দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়।

এ ডাকাডাকির বিষয়কে কখনো ইবাদতের প্রতিবন্ধক মনে করা হয়নি। একইসাথে এভাবে ডাকাডাকি করে ঘুম থেকে জাগানোকেও ইতিবাচকভাবে দেখা হয়েছে। এক্ষেত্রে হাদিসের ভাষ্য লক্ষ্য করা যায়। রাসুল সা. বলেছেন, বিলালের আযান- অথবা বলেছেন- বিলালের ঘোষণা যেন তোমাদের কাউকে সেহেরি খাওয়া থেকে বিরত না রাখে। কেননা সে আযান দেয়- অথবা বলেছেন- সে ঘোষণা দেয়, যেন তোমাদের মধ্যে যে ইবাদতরত, সে ঘরে ফিরে যায় আর ঘুমন্তদের যেন জাগিয়ে তুলতে পারে। সহিহ বুখারি, হাদিস নম্বর ৬২১, সহিহ মুসলিম, হাদিস নম্বর ১০৯৩।) এখানে ঘুম থেকে জাগানো ও ইবাদতরতকে ঘরে ফেরানোকেই বিলাল রা.-এর ঘোষণার উদ্দেশ বলা হয়েছে।

তবে এ ডাকাডাকি অবশ্যই সহনীয় পর্যায়ে হতে হবে। অসহনীয় পর্যায়ের হলে, যাতে মানুষের অস্বস্তি-বিঘ্নতার উৎপাদন হয় কিংবা রুগ্ন-অসুস্থ ব্যক্তির কষ্ট হয়, তাহলে তা জায়েয নয়। ফাতাওয়ায়ে শামি, খণ্ড : ৪, পৃষ্ঠা : ৪৪৫, আল-ফিকহুল ইসলামী, খণ্ড : ৮, পৃষ্ঠা : ১৮৩, খায়রুল ফাতাওয়া, খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ৭৭০, আহকামুল মসজিদ, পৃষ্ঠা : ৮৫, কাওয়ায়িদুল ফিকহ, পৃষ্ঠা : ১২৫।

আজ সময়ের পালাবদলে সবকিছুতে পরিবর্তন এলেও বদলে যায়নি মানবীয় স্বাভাবিক প্রবণতাগুলো। এখনো মানুষ বিস্মৃতি কিংবা বেখেয়ালিতে ভালো কাজ ছেড়ে দেয়। দেখাদেখি বা আওয়াজ শুনে নেক কাজে মনোযোগী হয়। সমাজে এখনো এমন অনেক মানুষ আছে, যারা পরিবেশের অবদানে ক্রিয়াশীল হয়, ডাকাডাকির মাধ্যমে সতর্ক হয়। আবার উপযুক্ত পরিবেশের অভাবে তারা গাফেল হয়ে পড়ে। তাদের জন্য আওয়াজ ও ডাকাডাকির পথ খোলা দরকার।

আবহমানকাল থেকেই আমাদের সমাজে সেহেরি-ইফতার ইমাম-মুয়াজ্জিনের আওয়াজ শুনে করা হয়। রমজানে ভোররাতে ডাকাডাকি করা কিংবা হামদ-নাত গাওয়া, এটা যুগ যুগ ধরে চলে আসা আমাদের ঐতিহ্য। এখনো এমন অনেক মানুষ আছে, মাইকে ডাকাডাকি না শুনলে যাদের ঘুম ভাঙে না। তখন তাদের রোজাও ছুটে যায়।

মোবাইল ফোনে এলার্ম দিয়ে ঘুম থেকে উঠা কোনো সহজ ব্যাপার নয়। এক্ষেত্রেও মানবিক দুর্বলতাগুলো কাজ করে। তাছাড়া এর মাধ্যমে যাদের নেকির পথে চলার জন্য দেখাদেখি প্রয়োজন, তাদের প্রয়োজনও পুরা হয় না। সেজন্য মোবাইলের এলার্মের প্রসঙ্গ টেনে ডাকাডাকির প্রতি অনুৎসাহিত না করা চাই। মোটকথা, সেহেরির জন্য ডাকাডাকি অবশ্যই বজায় থাকুক। তবে সেটা সহনীয় পর্যায়ে হোক।

লেখক : সিনিয়র মুফতি, মসজিদুল আকবর কমপ্লেক্স মিরপুর ঢাকা।


আরো সংবাদ



premium cement
মধুখালীর পঞ্চপল্লীতে ২ ভাইকে হত্যার প্রতিবাদে সমাবেশ শ্রীলঙ্কাভিত্তিক এয়ারলাইন্স ফিটসএয়ারের ঢাকা-কলম্বো সরাসরি ফ্লাইট চালু রোহিঙ্গা ইস্যুতে একসাথে কাজ করবে ঢাকা-ব্যাংকক : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরাইলি হামলায় আহত শিশুর মুখে ২০০ সেলাই বিষখালীতে মৎস্য বিভাগের অভিযান : জেলে নিখোঁজ, আহত ২ দক্ষিণ এশিয়ার যে শহরগুলোর তাপমাত্রা এখন সর্বোচ্চ গাজীপুরে দাঁড়িয়ে থাকা কাভার্ডভ্যানে অটোরিকশার ধাক্কায় হতাহত ৫ চৌগাছায় সিদ কেটে স্বর্ণের দোকানে চুরি দুর্নীতির মামলায় কৃষিমন্ত্রীকে আটক করল ইউক্রেন মোরেলগঞ্জে কৃষককে পিটিয়ে হত্যা দেবীগঞ্জে হিট স্ট্রোকে প্রাইভেটকার চালকের মৃত্যু

সকল