২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

প্রিন্সিপাল হাবীবুর রাহমান; এক কিংবদন্তী নাম

হাবীবুর রাহমান - ছবি : নয়া দিগন্ত

হাবীবুর রাহমান। ১৯৫৩ সালের ৮ জুলাই সিলেটের গোলাপগঞ্জ থানাধীন ঘনশ্যাম গ্রামের সম্ভ্রান্ত এক আলেম পরিবারে তার জন্ম। প্রাথমিক পড়াশোনা নিজ এলাকার স্কুলে করার পর ফুলবাড়িয়া আলীয়া মাদরাসায় অধ্যয়ন করেন। ১৯৭৩ সনে সিলেট সরকারি আলীয়া মাদরাসা থেকে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে কামিল (মাস্টার্স) ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।

তিনি একাধারে ইসলামি আন্দোলনের অগ্রজ সৈনিক, দূরদর্শী রাজনীতিবিদ, মাদরাসা পরিচালনায় সফল মুহতামিম, হাদিসের দরসে প্রাজ্ঞ মুহাদ্দিস, লেখক, গবেষক, সর্বোপরি দ্বীনের এক দরদী রাহবার ছিলেন।

১৯৭৩ সনে সিলেট শহরস্থ কাজিরবাজার পেয়াজহাটা মসজিদে ইমামতির মাধ্যমে তার কর্মজীবনের সূচনা হয়। সেখানে তিনি একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। ওই প্রতিষ্ঠানই আজকের বিশাল জামেয়া মাদানিয়া কাজিরবাজার মাদ্রাসা।

প্রিন্সিপাল হাবীবুর রাহমান তার প্রতিষ্ঠান থেকে সংস্কারমূলক বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে গ্রহণ করেন যুগান্তকারী কিছু পদক্ষেপ।

মাদরাসার ছাত্রদের জন্য বাংলা চর্চার ব্যপারে তিনি যত্নবান ছিলেন। সে লক্ষ্যে ছাত্র সংসদ গঠন, দেয়ালিকা, সাময়িকী এবং নিয়মিত কিছু সেমিনারের ব্যবস্থা করেন।
পাশাপাশি আলেমদেরকে মিডিয়ার গুরুত্ব বুঝাতে তিনি ছিলেন সচেষ্ট। ওই সময় যখন আলেমরা মিডিয়ার ধারেকাছে যাওয়াও নাজায়েজ মনে করতেন- তখন প্রামাণ্যচিত্রসহ তার কথা পত্রিকায় ছাপা হয়।

যুগোপযোগী সিলেবাস প্রণয়ন, মাদরাসার মধ্যে কারিগরি শিক্ষারব্যবস্থাসহ আর্তমানবতার সাহায্যার্থে আল-মারকাযুল খাইরী নামে এক সেবা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন।
সার্বজনীন শব্দগুলো সবার বোঝার স্বার্থে যুগের ভাষায় উপস্থাপন করতেন। যেমন মাদরাসা পরিচালকদের মুহতামিম খেতাবকে তিনি 'প্রিন্সিপাল' শব্দে অভিহিত করতেন।
এবং তিনি আলেমদের রাজনৈতিক সচেতনতা বাড়াতেও তৎপর ছিলেন।

এছাড়াও এ অঙ্গনের অধিকাংশ কাজে অভিনবত্ব এনেছিলেন তিনি।
এসব কাজ এখন খুব স্বাভাবিক হলেও তখন ছিল অকল্পনীয়, বরং ঘৃণিত। এগুলোকে সরাসরি শরিয়তবিরোধী কাজ বলে আখ্যা দিতেও দ্বিধা করতেন না কেউ।


এভাবেই আপ্রাণ লড়াই করে আপামর জনতার মধ্য মনি হয়ে উঠেন। নিজের প্রতিভা বিকাশ, দ্বীনি শিক্ষার অগ্রগতি ও আদর্শ জাতি গঠনের নেতৃত্ব এবং বিভিন্ন আন্দোলন - সংগ্রামে তার নাম অবিস্মরণীয়।

সময়ের প্রয়োজনে তিনি আন্দোলন গড়ে তুলতেও পিছপা হননি। নারীবাদী নাস্তিক লেখিকা তসলিমা নাসরিন যখন ইসলামের ওপর আঘাত হেনে কথা বলার দুঃসাহস দেখাল তখন তিনি তার বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুললেন। ঘোষণা দিলেন- হয় তওবা করো নাহয় দেশ ছাড়ো। ফলে সে দেশ ছাড়তে বাধ্য হলো। আজান নিয়ে জঘন্য কথা বলার দায়ে কবি শামসুর রহমানকে সিলেট থেকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা, ২০১১ সালের ২৯ ডিসেম্বর টিপাই মুখ বাঁধ বন্ধের দাবিতে তিনি বিশাল জনতার বহর নিয়ে দীর্ঘ ৮২ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছা ইত্যাদি তার জীবনের বড় কয়েকটি আন্দোলনের অন্যতম।
এছাড়াও যখনই কোথাও ইসলাম আক্রান্ত হয়েছে, মানবতা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সাথে সাথেই জান বাজি রেখে হলেও অভাবনীয় আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন।

২০১৮ সালের ১৯ অক্টোবর, দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার। সবে তিনি ইন্ডিয়া থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করে ফিরেছেন। দিনে নিজ মাদরাসায়ও এসেছিলেন।
মধ্যরাতে রুম থেকে বের হয়ে অজু করে আসেন এবং তখনই একটি জাতিকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে ওপারে পরম বন্ধুর ডাকে সাড়া দিলেন এই মহা কীর্তিমানব। আলো-আঁধারির একটি ইতিহাসের পরিসমাপ্তি ঘটলো। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
পর দিন শুক্রবার জুমা'র পর সিলেট সরকারি আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে তাঁর জানাযার নামায অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে উপস্থিত লাখো জনতার ঢল মাঠ, রাস্তা পেরিয়ে জনসমুদ্রের সীমানা আজও অজানা!

বিশাল একটি আন্দোলনের সফল রূপকার হিসেবে তার জীবনের প্রতিটি শাখা-প্রশাখা সমৃদ্ধ ছিলো।
তার প্রতিটি চৈতন্যময় পদক্ষেপ আগাম প্রজন্মকে পথের দিশা দিবে, যুগান্তকারী প্রেরণা জোগাবে।

আসলেই- প্রত্যেক শতাব্দীতে প্রিন্সিপাল হাবীবুর রাহমান একজনই আসেন।


আরো সংবাদ



premium cement
‘ফ্রি ভিসার গল্প’ আর শূন্য হাতে ফেরা লাখো শ্রমিক নোয়াখালীতে প্রবাসীর স্ত্রীর ব্যক্তিগত ছবি দেখিয়ে চাঁদা আদায় দেশের উন্নয়নে পাকিস্তান প্রশংসা করে, অথচ বিরোধী দল দেখে না : কাদের আশুলিয়ায় বাঁশবাগান থেকে নারী পোশাক শ্রমিকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার মিয়ানমারের কর্মকর্তারা ফেরত গেলেন, কিন্তু রোহিঙ্গা সঙ্কট কি আরো জটিল হচ্ছে দিনাজপুরে দুই ট্রাকের সংঘর্ষ, চালক-হেলপার নিহত মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২ সখীপুরে বৃষ্টির জন্য অঝোরে কাঁদলেন মুসল্লিরা দক্ষিণ ভারতে কেন কাজ করেনি বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের নতুন আংশিক কমিটি বাংলাদেশের হাসপাতাল ও চিকিৎসায় বিনিয়োগ সম্ভাবনা অন্বেষণে থাইল্যান্ডের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

সকল