২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রংপুরে ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৩ জনের ১৪ বছরের কারাদণ্ড

রংপুরে ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৩ জনের ১৪ বছরের কারাদণ্ড। - ছবি : নয়া দিগন্ত

রংপুরের বদরগঞ্জের সালিশি বৈঠকের নামে দু’নারীকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করতে করতে বিবস্ত্র করার মামলায় সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যানসহ তিনজনের ১৪ বছর, একজনের তিন বছর এবং চারজনের এক বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছে আদালত।

বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-২-এর বিচারক রোকনুজ্জামান এই রায় ঘোষণা করেন।

রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-২-এর পিপি জাহাঙ্গীর আলম তুহিন জানান, রায়ে অপহরণ করে নির্যাতন করতে করতে সালিশি বৈঠকে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে উপজেলার মধুপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আয়নাল হোসেন, তার সহযোগী মহুবুল ইসলাম, চিকনা এনামুলকে ১৪ বছর কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হয়। এছাড়াও সালিশি বৈঠকে মারধর ও শ্লীলতাহানি করার ঘটনা প্রমাণ হওয়ায় চিকনা এনামুল ও মোটা এনামুলকে তিন বছর করে এবং মারধর প্রমাণ হওয়ায় সাবেক ইউপি মেম্বার ইলিয়াস, সেকান্দার মণ্ডল, রউফ মণ্ডল মজম আলী ও বাবলুকে এক বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। মামলার বাকি ৪৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় তাদের বেকসুর খালাস প্রদান করে আদালত।

মামলার নথি সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের ২৫ জুন উপজেলার মধুপুর ইউনিয়নের রাজারামপুর কাশিপুর লিচু বাগান এলাকায় চরিত্রহীনতার অভিযোগে স্থানীয় তালাকপ্রাপ্তা হাফিজা বেগম হ্যাপি ও সাহিদা বেগমের বিরুদ্ধে সালিশি বৈঠকে তাদের হাত-পা বেঁধে লাঠি দিয়ে মারধর করতে করতে বিবস্ত্র করে নির্যাতন ও ভিডিও ধারণ করা হয়। বিষয়টি ওই সময় গণমাধ্যমে এলে হাইকোর্ট স্ব-প্রণোদিত হয়ে রুল জারি করে। পরে হ্যাপী মামলা করলে ৫৪ আসামির বিরুদ্ধে দু’দফায় তদন্ত করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ১৫ জন স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্য শেষে দীর্ঘ সাড়ে ১১ বছর পর মামলাটির রায় দেয়া হলো।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী তুহিন জানান, এই রায়ে তারা সন্তুষ্ট। খালাসপ্রাপ্তদের বিষয়ে নথিপত্র ঘেটে আপিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

অন্য দিকে আসামি পক্ষের আইনজীবী আব্দুল হক প্রামাণিক বলেছেন, রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন তারা।

তবে রায় পাওয়ার পর নিরাপত্তাহীনতার দাবি করেছেন সংশ্লিষ্ট দু’নারী।

আদালতের কাঠগড়া থেকে বেরিয়ে হাফিজা বেগম হ্যাপি বলেন, ‘রায়ে মাত্র নয়জনের দণ্ড হয়েছে। বাকিদের খালাস দেয়া হয়েছে। তবুও আমি সন্তুষ্ট, তবে অনিরাপদ। কারণ দণ্ডপ্রাপ্ত ও খালাস পাওয়া সবাই ক্ষমতাধর ব্যক্তি। আমি ঠিকভাবে বাড়ি যেতে পারব কিনা জানি না। আমাকে তারা মেরেও ফেলতে পারে। আমি সরকারের কাছে নিরাপত্তা দাবি করছি।’

সাহিদা বেগম বলেন, ‘মামলার পর আদালতের আদেশ থাকলেও শুধু হ্যাপির বাড়িতে পুলিশ পাহারা দিয়েছে। আমি নিরাপত্তাহীন ছিলাম। রায়ের পর আমি আরো নিরাপত্তাহীন হলাম। আমি পুলিশের কাছে আমার নিরাপত্তা চাই। তা না হলে ওরা আমার জীবননাশ করতে পারে।’


আরো সংবাদ



premium cement