২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বিদেশী গণমাধ্যমে ঠাকুরগাঁওয়ের শতবর্ষী আম গাছ


আম গাছ-৪

 

গাছটির বয়স নিয়ে এলাকার মানুষের মধ্যে নানা মত। কেউ বলছেন, এর বয়স দুই শ’, কেউ বলেন আড়াই শ’। আবার অনেকেই , বয়স বাড়িয়ে তিন শ’র ঘরে নিয়ে যেতেও দ্বিধাবোধ করছেন না।

কেনই বা বয়স বাড়াবে না? বিশালাকার নিয়ে দুই বিঘা জমির ওপর ছড়িয়ে আছে যে গাছ, তাকে অন্তত শতবর্ষী না বলে উপায় থাকে না। গাছটির পরিচয় তাই শতবর্ষী আম গাছ।

ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার পশ্চিমে হরিণমারি সীমান্তে আমজানখোর ইউনিয়নে দেখা মিলবে এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় এই আমগাছ। কেউ কেউ একে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আম গাছ বলেও আখ্যা দিয়ে থাকে।

সম্প্রতি চীনসহ বিভিন্ন দেশের সংবাদমাধ্যমে শতবর্ষী এই আম গাছ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা।

 

এই আম গাছকে ২০১০ সালে মন্ত্রিসভায় দেশের জাতীয় বৃক্ষের মর্যাদা দেয়া হয়। বহু বছর বাঁচে আম গাছ, কিছু প্রজাতি তো তিন শ’ বছর বয়সেও ফলবতী হতে পারে বলে জানা যায়।

দুই বিঘার বেশি জায়গাজুড়ে শতবর্ষী আম গাছটি দাড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী হয়ে। গাছটির উচ্চতা আনুমানিক ৮০-৯০ ফুট। মূল গাছের ঘের ৩৫ ফুটের কম নয়। গাছের তিন দিক থেকে ১৯টি মোটা ডালপালা বেরিয়ে অক্টোপাসের মতো মাটি আঁকড়ে ধরেছে। দূর থেকে মনে হবে, অনেকগুলো আম গাছ জড়াজড়ি করে দাঁড়িয়ে আছে। মৌসুমের এ সময় আমের ভারে আরো নুয়ে থাকে গাছটি। পৈতৃক সূত্রে এ গাছের মালিক নূর ইসলাম ও সাইদুর ইসলাম নামের দুই ভাই।

গাছটির বিশালতা দেখার মতো। গাছের নিচে অন্য কোনো গাছ বা আগাছা নেই। একটু দূর থেকে দেখলে মনে হয়, সবুজ রঙের একটি টিলা দাঁড়িয়ে রয়েছে। সব মিলিয়ে এক নয়নাভিরাম দৃশ্য।

গাছটি দেখতে প্রতিদিন কম করে হলেও দেড় শ’ থেকে দুই শ’ মানুষ আসেন দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে। পিকনিক করতেও আসেন অনেকে।

আম গাছ-৩

 

চট্টগ্রাম থেকে আমগাছটি দেখতে এসেছেন জিয়া উদ্দিন হিরু। তিনি জানালেন, ফরিদপুর ও চাপাইনবাবগঞ্জে তিনি দুটি শতাব্দী প্রাচীন আমগাছ দেখেছেন। কিন্তু এ আম গাছটি দেখে তিনি হতভম্ব হয়ে গেছেন। কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার এই আম গাছের সাথে ওই দুটি আমগাছের কোনো মিল নেই। এ আম গাছটি একবারেই ভিন্ন! ডালপালা মাটিতে নুয়ে পড়েছে। আল্লাহর এই অদ্ভুত সৃষ্টি নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করাই কঠিন।

গাছটি কত প্রাচীন? জানতে চাইলে মন্ডুমালা গ্রামের গৃহবধূ চৈতী বেগম বলেন, ওরে বাবা, সে কথা আমি বলতে পারব না। এ গ্রামে আমার বিয়ে হয়েছে ৫০ বছর আগে। তখনো এ অবস্থায় দেখছি। খুব ভালো লাগে আমাদের গ্রামে এমন একটি গাছ আছে, যেটি দেখতে দূরদূরান্ত থেকে লোকজন ছুটে আসে।

কয়েকজন এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই আমগাছের চারা থেকে পাশে কয়েকটি গাছ লাগানো হয়েছিলো। ১৫ বছর পর সেই গাছগুলো একইভাবে ডালপালা মাটির দিকে নুয়ে পড়ছে। তারা চান গাছটি সংরক্ষণ করতে উদ্যোগ নিক সরকার। গাছটি ঘিরে একটি পর্যটনকেন্দ্রে গড়ে তোলার স্বপ্নও দেখেন ওই এলাকার মানুষজন।

আমগাছটি যে শুধু শতবর্ষী তা কিন্তু নয়, এটি সূর্যপুরী জাতের আম গাছ। যার বাড়ি এ জেলায়। ঠাকুরগাঁওয়ে মিষ্টতা, স্বাদ, গন্ধে অতুলনীয় সূর্যপুরী খুবই জনপ্রিয়। দেশের অন্য অঞ্চলে এই আম হয় না বললেই চলে। এ কারণে জেলার ব্র্যান্ডিংও করা হয়েছে সূর্যপুরীকে ঘিরে। ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসকের বাসভবনের নামকরণও করা হয়েছে সূর্যপুরী। ফলনভেদে কোনো বছর দুই শ’ মণ আবার কোনো বছর তিন শ’ মণ আম ধরে এ গাছে।

আম গাছ-১

 

বালিয়াডাঙ্গী সমিরউদ্দিন স্মৃতি কলেজের অধ্যক্ষ বেলাল রব্বানী ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে কাজ করছেন। তিনি জানান, সূর্যপুরীর নামকরণ বা উৎপত্তিস্থল সম্পর্কে একেবারে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। জনশ্রুতি আছে, আনুমানিক তিন শ’ বছর আগে তৎকালীন ভারতবর্ষের উত্তর দিনাজপুর জেলার ইসলামপুরের সূর্যপুর এলাকায় এই আমের বেশ জনপ্রিয়তা ছিল। ধারণা করা হয়, ওখান থেকেই আমের জাতটি এখানে আসে। যেহেতু এই আম অত্যন্ত সুস্বাদু, তাই নাম ছড়াতে বেশি সময় লাগেনি। আশপাশের এলাকায় দ্রুত পরিচিতি পায় এ আম। ঠাকুরগাঁওয়ের গ্রামাঞ্চলের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই সূর্যপুরী আম গাছ পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি।

আমজানখোর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আকালু মোহাম্মদ বলেন, গাছটি আমাদের এলাকার একটি ঐতিহ্য। প্রতিদিনই শত শত মানুষ দূরদূরান্ত থেকে গাছটি দেখতে আসেন। আমরা চাই এ গাছটি সরকার সংরক্ষণ করুক এবং পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তুলুক।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাঃ যোবায়ের হোসেন বলেন, জায়গাটিতে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা চলমান আছে।

জেলা বন কার্যালয়ের সহকারী বন সংরক্ষক মোহাম্মদ সোহেল রানা বলেন, শতবর্ষী এ আম গাছটি সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণে যাতে বন বিভাগ উদ্যোগ নেয়, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে পরামর্শ করবো।


আরো সংবাদ



premium cement
দুই বিভাগে বৃষ্টি হতে পারে ফ্রান্স, ব্রাজিল ও প্যারাগুয়ে সফরে যাচ্ছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ড সফরকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে মাইলফলক বললেন প্রধানমন্ত্রী লালমনিরহাটে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী যুবক নিহত এখনো শেষ হয়নি বিতর্কিত আউটের রেশ, ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ মুশফিকের ‘ফ্রি ভিসার গল্প’ আর শূন্য হাতে ফেরা লাখো শ্রমিক নোয়াখালীতে প্রবাসীর স্ত্রীর ব্যক্তিগত ছবি দেখিয়ে চাঁদা আদায় দেশের উন্নয়নে পাকিস্তান প্রশংসা করে, অথচ বিরোধী দল দেখে না : কাদের আশুলিয়ায় বাঁশবাগান থেকে নারী পোশাক শ্রমিকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার মিয়ানমারের কর্মকর্তারা ফেরত গেলেন, কিন্তু রোহিঙ্গা সঙ্কট কি আরো জটিল হচ্ছে দিনাজপুরে দুই ট্রাকের সংঘর্ষ, চালক-হেলপার নিহত

সকল