রাজশাহীতে ভুয়া তিন সেনা সদস্য গ্রেফতার

রাজশাহীতে অভিযান চালিয়ে ভুয়া তিন সেনা সদস্যকে গ্রেফতার করেছে মহানগর গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। অভিযুক্তরা সেনাবাহিনীতে চাকরি দেয়ার কথা বলে টাকা আত্মসাৎকারী প্রতারণা চক্রের সদস্য।

বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ৮টায় মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।এর আগে, বুধবার রাতে নগরীর কাদিরগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। 

গ্রেফতারকৃতরা হলেন রবিন ইসলাম (২২), আব্দুল হাকিম (২২) ও আব্দুর রহিম (২৫)। এদের মধ্যে রবিন ইসলাম চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর থানার পীড়াশন গ্রামের রবিউল ইসলামের ছেলে, হাকিম একই থানার নিমতলা গ্রামের হেফাজ উদ্দিনের ছেলে ও আব্দুর রহিম চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার ইসলামপুর গ্রামের হারুন-অর-রশিদের ছেলে।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মহানগর ডিবি জানায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোল থানার চন্দনা গ্রামের আব্দুল আজিজের দুই ভাই ও তার শ্যালক বিভিন্ন সময়ে সেনাবাহিনীর চাকরির জন্য লাইনে দাঁড়ায়। কিন্তু চাকরি হয় না। এই সুযোগে অভিযুক্তরা তাদের বাড়িতে গিয়ে জানায় সেনাবাহিনীর বড় অফিসারদের সাথে তাদের পরিচয় আছে। টাকা দিলে চাকরি নিয়ে দিতে পারবে। এ সময় অভিযুক্ত রবিন নিজেকে সেনাবাহিনীর মেজর, আব্দুর রহিম লে: কর্নেল এবং হাকিম ক্লার্ক পরিচয় দেয়। এদিকে রবিনের বাবা-মাও বিভিন্ন ব্যক্তিকে সেনাবাহিনীতে চাকরির প্রলোভন দেয় এবং টাকা প্রদানের নিশ্চয়তা প্রদান করে। ২০২৩ সালে অভিযুক্তদের সাথে আজিজের দুই ভাই ও তার শ্যালকের চাকরির জন্য ২৫ লাখ ৭ হাজার টাকার একটি মৌখিক চুক্তি হয়। এ সময় অভিযুক্ত হাকিম তার স্বাক্ষর করা একটি ফাঁকা চেক প্রদান করে। কয়েক দিন পর অভিযুক্তরা এসে ওই তিনজনের চাকরির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে যায়। পরবর্তীতে গত ২৩ জুলাই নগরীর কাদিরগঞ্জ বর্ণালী মোড়ে অভিযুক্তরা আজিজকে তিন জনের চাকরির ভুয়া নিয়োগপত্র প্রদান করে। তখন আজিজ তাদের ১২ লাখ টাকা প্রদান করেন এবং পরে অবশিষ্ট ১৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা প্রদান করেন। আজিজের এলাকার যারা চাকরি পেয়েছে তারা প্রশিক্ষণে চলে যায়। কিন্তু তার ভাই ও শ্যালকের নাম না আসায় অভিযুক্তদের সাথে যোগাযোগ করে। তখন অভিযুক্তরা তাকে প্রশিক্ষণের তারিখ পরিবর্তন করে পুনরায় নিয়োগপত্র প্রদান করে অতিরিক্ত টাকা দাবি করে এবং বুধবার (১৭ এপ্রিল) রাজশাহীতে আসতে বলে। তাদের এ ধরনের কার্যক্রম সন্দেহজনক মনে হলে তারা এলাকায় খোঁজখবর নেয়। পরে জানতে পারেন, তারা ছাড়াও গ্রামের আরো পাঁচ জনের কাছ থেকে সেনাবাহিনীতে চাকরি দেয়ার কথা বলে প্রায় ৪০ লাখ টাকা প্রতারণা করে আত্মসাৎ করেছে। বিষয়টি আব্দুল আজিজ রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা অফিসে মৌখিকভাবে জানান।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার রাত সাড়ে ৭টায় ডিবি পুলিশের একটি টিম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে কাদিরগঞ্জ বর্ণালীর মোড় থেকে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৯টি ভুয়া নিয়োগপত্র, সেনাবাহিনীতে যোগদানের পূর্বে মেডিক্যালের জন্য প্রত্যয়নপত্রের ফটোকপি, আসামির স্বাক্ষরকৃত ফাঁকা চেক, সেনাবাহিনীর নকল পরিচয়পত্র ও নগদ ২০ হাজা টাকা উদ্ধার করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্তরা ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। ঘটনার সাথে জড়িত অন্যদেও গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ ঘটনায় বোয়ালিয়া থানায় দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আসামিদের বৃহস্পতিবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।