২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
কোভিড-১৯

স্মার্টফোন শিল্পে চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

-

ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে গত ফেব্র“য়ারি মাসে চাকরি শুরু করেছিলেন সাইফুল ইসলাম। গত মার্চ মাসে প্রথমবারে মতো ছুটি নিয়ে গ্রামের বাড়ি যান। দুই দিন ছুটি কাটিয়ে ঢাকায় ফিরবে এমন সময় সরকার দেশে সাধারণ ছুটি দিয়ে লকডাউন ঘোষণা করে। গণপরিবহন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঢাকায় ফিরতে পারেনি সাইফুল। একদিকে কর্মী হিসেবে নতুন, অন্য দিকে ল্যাপটপ না নিয়ে বাড়ি যাওয়া সব মিলিয়ে একটা ধাক্কা খেতে হয়। অবশেষে হাতে থাকা স্মার্টফোন দিয়ে শুরু করলেন অফিসের কাজ। প্রতিদিন মিটিং, সময় মতো কাজের রিপোর্ট দেয়া, সবই চলতে থাকে স্মার্টফোনে।
শুধু সাইফুল নয়, এমন অসংখ্য মানুষ লকডাউনের মধ্যে ঝামেলায় পড়েছে। ওয়ার্ক ফ্রম হোম বা ঘরে বসেই অফিসের কাজ করার এমন প্রক্রিয়া আমরা এর আগে এত বিস্তৃত পরিসরে ব্যবহার করতে দেখিনি। কোভিড-১৯ আমাদের বাসা থেকে কাজ করতে বাধ্য করেছে। আর সেটা সম্ভব হচ্ছে অবশ্যই আমাদের স্মার্টফোন ইন্ডাস্ট্রি, টেলিকম ইন্ডাস্ট্রি, মোবাইল অপারেটর, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায়।
আশার খবর হলো, করোনা সংকট পৃথিবীকে ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনে অন্তত কয়েক বছর এগিয়ে দিয়েছে। দেশের মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ও মোট ব্যান্ডউইথের ব্যবহার এখন সর্বোচ্চ। এপ্রিল মাসে গড়ে দেশে ব্যান্ডউইথ ব্যবহারের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৭৫০ জিবিপিএস (গিগাবিটস পার সেকেন্ড), যা স্বাভাবিকের তুলনায় প্রায় ২৫-৩০ শতাংশ বেশি।
অনেক দিন থেকে ডিজিটাল শিক্ষা, ই-শিক্ষা নিয়ে কাজ চললেও আমাদের শিক্ষকরা কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যে টেকনিক্যালি পিছিয়ে ছিল, তা এখন অনুধাবন করা যাচ্ছে। শুধু কয়েকটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় বা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল অনলাইনে পড়ালেখা চালু করতে পারলেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি স্কুল-কলেজ এখনো পিছিয়ে রয়েছে।এক্ষেত্রে সংসদ টিভিকে লার্নিং প্ল্যাটফর্মে রূপান্তর করার উদ্যোগটা অসাধারণ। টেলিমেডিসিনে আগ্রহ না থাকলেও এখন উপায় না পেয়ে গ্রাহক ছুটছে অ্যাপের দিকে। কল করলেই মিলছে স্বাস্থ্যসেবা। ভিডিওতে ডাক্তার দেখছেন রোগী। অনলাইন প্রেসক্রিপশনে বাসায় মিলছে ওষুধের ‘হোম ডেলিভারি’।
এমন অনেক মোবাইল কেন্দ্রিক সেবা যেগুলো হয়তো আরও পরে চালু হতো, তা ইতোমধ্যে চালু হয়েছে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সেবা পৌঁছে যাচ্ছে শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রামে। সরকারি ডেটোবেইজ এর মাধ্যমে সহজেই স্মার্টফোন অ্যাপের মাধ্যমে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়াও অ্যাপের মাধ্যমে এমন পরিষেবার পরিমাণ আগের চেয়ে অনেক গুণ বেড়েছে বিগত এক মাসে। স্মার্টফোন অ্যাপের মাধ্যমে ব্যাংকিং লেনদেন করছেন লাখ লাখ মানুষ।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার পর থেকে আমরা সামাজিক মাধ্যমে মানুষের আনাগোনাও বাড়ছে। অনেকেই স্মার্টফোনকে কাজে লাগাচ্ছে ঘরে থাকার এই সময়টাতে। ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামের মতো সাইট ছাড়াও এই সময়ে আমরা ইউটিউবে অনেক নতুন ভিডিও চোখে পড়ছে যা স্বাভাবিক সময়ে দেখা মিলে কম। এটা এখন করা সম্ভব হচ্ছে হাতে স্মার্টফোন থাকার কারণে।
দেশে মোবাইল ইন্টারনেট ও মোবাইল সংযোগ বেড়েছে আগের তুলনায় বহুগুণ। গত ফেব্র“য়ারির যে হিসাব প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সেখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি, ইন্টারনেট সংযোগ বাড়ার উর্ধ্বগতি। এক মাসে মানে শুধু ফেব্র“য়ারিতেই সাত লাখ ৩৮ হাজার কার্যকর সংযোগ যোগ হয়েছে ইন্টারনেটের তালিকায়। আর এর মাধ্যমে দেশে এখন ইন্টারনেট সংযোগ দাঁড়িয়েছে ৯ কোটি ৯৯ লাখ ৮৪ হাজার। এই ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৯ কোটি ৪২ লাখ ৩৬ হাজারই মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী।
জিয়াউদ্দিন চৌধুরী
কান্ট্রি জেনারেল ম্যানেজার, শাওমি বাংলাদেশ
কোভিড-১৯ চলাকালীন দেশে স্মার্টফোন শিল্পে কী প্রভাব পড়ছে?
যেকোনো অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গেই প্রযুক্তির ব্যবহার জড়িত। বাংলাদেশ উন্নয়শীল অর্থনীতির দেশ হিসেবে তার ব্যতিক্রম নয়। দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে স্মার্টফোন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। দেশে স্মার্টফোনের চাহিদা রয়েছে এবং সেটা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে কোভিড-১৯ এর কারণে। তবে দেশে মোট বিক্রি হওয়া মোবাইল ফোনের মধ্যে চার ভাগের এক ভাগ স্মার্টফোন। এখন ব্যবহারকারীর ৩০ শতাংশের মতো স্মার্টফোন, আর বাকি ৭০ শতাংশই ফিচার ফোনের দখলে। স্মার্টফোনের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন পরিষেবা যেমন- আর্থিক লেনদেন, শিক্ষা, কৃষি ও স্বাস্থ্যসেবা সহজেই পাচ্ছি।
এই দুর্যোগে মানুষের কাছে সহজে হ্যান্ডসেট পৌঁছানোর জন্য শাওমি কী করছে?
এই পরিস্থিতি দেখিয়ে দিয়েছে, ঘরে বন্দী মানুষের কাছে স্মার্টফোনের প্রয়োজনীয়তা কতটা বেশি। মানুষ এখন স্মার্টফোনের মাধ্যমেই নানা ধরনের পরিষেবা নিচ্ছে। এই লকডাউন আসলে সাপ্লাই চেইন ও ডিভাইস সরবরাহে বড় একটা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। তবে আমরা ধীরে ধীরে বেশ কিছু এলাকায়, বিশেষ করে যেখানে সহজেই মানুষ ডিভাইস কিনতে পারছেন, অর্ডার করতে পারছেন তাদেরকে তা হোম ডেলিভারি দেবার ব্যবস্থা করছি। কিছু এলাকায় যেখানে কোভিড-১৯ খুব বেশি সংক্রমণ ছড়ায়নি সেখানে স্টোর খোলা আছে। এছাড়াও আমাদের পার্টনার স্টোর রয়েছে বাংলালিংকের সঙ্গে, সেখানেও ডিভাইস বিক্রি করা হচ্ছে।
বিদ্যামন পরিস্থিতে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের বিক্রয়োত্তর পরিষেবার চাহিদা বেড়েছে। প্রাত্যাহিক স্মার্টফোনের মাধ্যমে একাধিক কাজ করা ব্যহারকারীদের জন্য এটা একটা কঠিন সময়। সেজন্য আমাদের ব্যবহারকারীদের জন্য বিক্রয়োত্তর সেবা চালু রয়েছে। এই প্রয়োজনের সময় আমরা সম্মুখভাগে থেকে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় কাজ করা সেনাবাহিনী, ডাক্তার-স্বাস্থ্যকর্মীদের জন বিনামূল্যে বিক্রয়োত্তর সেবা দেবার চেষ্টা করে যাচ্ছি।

রেজওয়ানুল হক
প্রধান নির্বাহী, ট্রানশান বাংলাদেশ
কোভিড-১৯ এর প্রভাব কতটা মোবাইল ইন্ডাস্ট্রিতে পড়েছে?
টেকনো ব্র্যান্ডের স্মার্টফোন বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান ট্রানশান বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী রেজওয়ানুল হক জানিয়েছেন, কোভিড-১৯ এর একটা বড় প্রভাব ইতোমধ্যে আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে পড়েছে। গত মার্চ থেকে দেশ লকডাউনে যাবার পর থেকেই ব্যবসা কমতে থাকে। আর এপ্রিল মাস প্রায় পুরোটই একেবারে বন্ধ, এই সমেয় অন্তত ৫০ শতাংশের বেশি বিক্রি কমে গেছে মোবাইল ফোনের। স্বল্প পরিসরে ব্যবসা শুরু হবার পর হয়তো মে মাসে কিছুটা বিক্রি বেড়েছে। কিন্তু সেটাও বলার মতো নয়।
একই সঙ্গে আমাদের ইন্ডাস্ট্রি তো অনেক বড়, আমরা যারা কারখানা স্থাপন করেছি, যারা যন্ত্রাংশ আমদানি করছি, নানা ধরনের আমদানিকারক, ডিলার, রিটেইলার, শপের কর্মচারী সব মিলে বড় একটা সংকট তৈরি হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
এই সময়ে স্মার্টফোনের চাহিদা কতটুকু বেড়েছ?
যদিও আশার খবর হলো এই সময়ে দেশে স্মার্টফোনের চাহিদা অনেক বেড়েছে। মানুষ ঘরে বন্দী থাকার ফলে তাদের প্রয়োজনেই স্মার্টফোনের চাহিদা বেড়েছে। এতোদিন মানুষ হয়তো স্মার্টফোন শুধু তার সোস্যাল মিডিয়ায় অ্যাক্সেসসহ বিনোদনের কিছু ক্ষেত্রে ব্যবহার করতো। কিন্তু এখন স্মার্টফোন আমাদের অত্যাবশ্যকীয় হযে উঠেছে জীবনের প্রয়োজনে। এখন অনেকেই অফিসের ছোটখাটো কাজ স্মার্টফোন দিয়ে সেরে নিচ্ছেন।

জাকারিয়া শহীদ
বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমপিআইএ) সাধারণ সম্পাদক
কোভিড-১৯ দেশের মোবাইল ইন্ডাস্ট্রিতে ক্ষতির পরিমাণ কেমন?
এই সঙ্কটময় সময়ে আমরা ইতোমধ্যে হিসাব করে দেখেছি মোবাইল ইন্ডাস্ট্রিতে গত এক মাসেই মোবাইল ফোন সংযোজন, আমদানি শুরু থেকে থেকে শেষ অর্থাৎ রিটেইল হয়ে গ্রাহকের কাছে পৌঁছানো পর্যন্ত জড়িত সবার মিলে আর্থিক ৯০ থেকে ১০০ কোটি টাকার লোকসান হয়েছে। তার মানে সময়টা যত বড় হবে আমাদের ক্ষতিও তত বাড়বে।
শুধু আর্থিক ক্ষতিই নয়, এর সঙ্গে আরও অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। ‘র ম্যাটেলিয়াল’ আমদানি হয়েছে, সেটা বন্দরে পড়ে আছে, তাতে ক্ষতি। দোকানপাট বন্ধ, কারখানা বন্ধ। বলতে গেলে সবই তো এখন বন্ধ হয়ে আছে। পুরো সাপ্লাই চেইন নষ্ট হয়ে গেছে। তাই ক্ষতি বা লোকসানের বিষয়টি আঁচ করা সহজ না।
আসন্ন বাজেট, আপনাদের প্রত্যাশা কি থাকবে?
আমরা বিএমপিআইএর পক্ষ থেকে সরকারকে অনুরোধ জানাবো বাজাটে আমাদের জন্য বিশেষ নজর দেবার। এ ছাড়াও ভ্যাট-ট্যাক্স যাতে না বাড়ানো হয় এবং ক্ষেত্র বিশেষে কমানোর জন্যও আমরা প্রস্তাব করব। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, যেহেতু একটু ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি আমরা, ভবিষ্যতে যেন দেশের মোবাইল ইন্ডাস্ট্রি মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে এবং সরকারের সঙ্গে থেকে কাজ করতে পারে সে ব্যবস্থা যেন বাজেটে প্রতিফলিত হয়।

আসিফুর রহমান খান
হেড অব সেলস ওয়ালটন মোবাইল
এই সময়ে কি যন্ত্রাংশ আমদানিতে কোনো সমস্যা হচ্ছে?
এখন তো যন্ত্রাংশ আমদানি পুরোটাই বন্ধ রয়েছে। আগামী দিনে চীনের বাজারেও কোভিড-১৯ সংক্রমণের ফলে কিছু যন্ত্রাংশের দাম বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আসন্ন বাজেট নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কী?
আমরা যে অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি তাতে পুরো ২০২০ সালের ক্ষতি কখনোই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব না। এখন এই পরিস্থিতিতে সরকার ভ্যাট-ট্যাক্স নিয়ে ইতিবাচক না হয় তাহলে আমাদের সারভাইভ করা কষ্টকর হয়ে যাবে। আর এজন্যই আমরা ইন্ডাস্ট্রির সবাই মিলে বসে একটা বাজেট প্রস্তাব করার পরিকল্পনা নিয়েছি। কেননা সামনের দিনে গার্মেন্ট এর পরে একটা পটেনশিয়াল খাত হতে যাচ্ছে মোবাইল ইন্ডাস্ট্রি। সরকারের ভিশন বাস্তবায়নে আমরা সব সময় আছি। তাই সরকারের উচিত আমাদের দিকটাও দেখা।


আরো সংবাদ



premium cement
‘মুক্ত সাংবাদিকতা চরম সঙ্কটে’ ‘রাফা হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরাইলি সেনারা’ ৪৬তম বিএসএস প্রিলি পরীক্ষা : শুরুতেই স্বপ্নভঙ্গ ৮১ শিক্ষার্থীর মরুর উষ্ণতায় ক্ষতির মুখে কৃষি ছেলেদের কারণে বিপাকে মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির দুই বিভাগে বৃষ্টি হতে পারে ফ্রান্স, ব্রাজিল ও প্যারাগুয়ে সফরে যাচ্ছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ড সফরকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে মাইলফলক বললেন প্রধানমন্ত্রী লালমনিরহাটে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী যুবক নিহত এখনো শেষ হয়নি বিতর্কিত আউটের রেশ, ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ মুশফিকের ‘ফ্রি ভিসার গল্প’ আর শূন্য হাতে ফেরা লাখো শ্রমিক

সকল