২১ মে ২০২৪, ০৭ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ১২ জিলকদ ১৪৪৫
`


সফলতার ৫০ বছরে স্যামসাং

দক্ষিণ কোরিয়ার টেক জায়ান্ট স্যামসাং তৈরি করেছে ফাইটার জেট -

মূল্যমান ও বিক্রির সংখ্যা বিচারে ২০১৯ সালের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, স্যামসাং বিশ্বের বৃহত্তম মোবাইল ব্র্যান্ড। গত বছরের এক জরিপ অনুযায়ী স্যামসাং বিশ্বের বৃহত্তম ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে ষষ্ঠ। দক্ষিণ কোরিয়ায় ৫০ বছর আগে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হিসেবে পথচলা শুরু হয়েছিল স্যামসাংয়ের। প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজারে নিজেদের অবস্থান পোক্ত করতে প্রতিনিয়ত মনোযোগী হতে হয়েছে নিত্যনতুন উদ্ভাবনের দিকে। লিখেছেন আহমেদ ইফতেখার
১৯৩৮ সালের ১ মার্চ লি বিয়ং চল ‘স্যামসাং ট্রেডিং কোম্পানি’ প্রতিষ্ঠা করেন। দক্ষিণ কোরিয়ার দায়েগু শহরে ৪০ জন কর্মচারী, কয়েকটি ট্রাক নিয়ে গ্যারেজে শুরু হয় স্যামসাং কোম্পানির যাত্রা। ১৯৬৯ সালে মূলত স্যামসাং ইলেকট্রনিকসের পথচলা শুরু হয় ব্যাপক পরিসরে। ১৯৮০ সালে স্যামসাং ইলেকট্রনিকস গবেষণা ও উন্নয়নকাজে ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ করতে শুরু করে। ফলে গড়ে ওঠে স্যামসাং ইলেকট্রনিকস ডিভাইস, স্যামসাং কর্নিং, স্যামসাং ইলেকট্রো-মেকানিক্স, স্যামসাং সেমিকন্ডাক্টর এবং স্যামসাং টেলিকমিউনিকেশনের মতো নানা শাখা। ২০১২ সালের প্রথম দিকে নকিয়াকে ছাড়িয়ে বিশ্বের বৃহত্তম মোবাইল ফোন নির্মাতা হয়ে ওঠে স্যামসাং ইলেকট্রনিকস। বর্তমানে পৃথিবীজুড়ে ৮০টিরও বেশি ব্যবসা পরিচালনা করছে প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে রয়েছেÑ অ্যাপারেল, অটোমোবাইল কেমিক্যাল, কনজ্যুমার ইলেকট্রনিকস, কম্পোনেন্ট মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট সার্ভিস, ডিআরএম, শিপমেন্ট, টেলি কমিউনিকেশন, ইকুইপমেন্ট অ্যান্ড হোম অ্যাপ্লায়েন্স প্রভৃতি। সেবার মধ্যে রয়েছে অ্যাডভারটাইজিং ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস হসপিটালিটি ইনফরমেশন, কমিউনিকেশন অ্যান্ড টেকনোলজি, সার্ভিসেস মেডিক্যাল হেলথ কেয়ার এবং শিপ বিল্ডিং।
স্যামসাংয়ের ডিজিটাল সিটিতে স্যামসাংয়ের অনেকগুলো ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছে। এ ছাড়া স্যামসাংয়ের রয়েছে থিম পার্ক। থিম পার্কটির নাম এভারল্যান্ড। যেখানে অ্যাডভেঞ্চার ম্যাজিক থেকে সবকিছু রয়েছে। প্রতি বছর ৭৩ লাখ দর্শনার্থী থিম পার্কটিতে ভ্রমণে আসেন। হেভি ইন্ডাস্ট্রির আওতায় সবচেয়ে বড় জাহাজ তৈরি করে স্যামসাং। স্যামসাংয়ের জাহাজ নির্মাণের অঞ্চলটি পাঁচ হাজার ২০৪টি ফুটবল মাঠের সমান। এ ছাড়াও স্যামসাংয়ের রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন প্রকৌশল বিভাগ। স্যামসাং টেক শাখা প্রথমবারের মতো তৈরি করেছে ফাইটার জেট, হেলিকপ্টার, ক্রেন ও ট্যাংক।
চীনা স্মার্টফোন নির্মাতা কোম্পানিগুলোর সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে দেশটিতে স্মার্টফোন তৈরির একমাত্র কারখানাটিও বন্ধ করছে স্যামসাং। গবেষণা ফার্ম কাউন্টার পয়েন্টের তথ্যমতে, চীনের স্মার্টফোন নির্মাতা কোম্পানিগুলো যেমন শাওমি, ওয়ানপ্লাস ও হুয়াওয়ের ব্যবসা খুব দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে চীনে সুবিধা করতে পারছিল না স্যামসাং। স্যামসাং জানিয়েছে, চীন থেকে ব্যবসা গোটানোর সিদ্ধান্ত নেয়া মোটেও সহজ ছিল না। ফোনের উৎপাদনে ব্যবহৃত যন্ত্রগুলো এখন বিশ্বের অন্য কোনো দেশে স্থানান্তরিত করা হবে। কোন দেশে কারখানা প্রতিষ্ঠা করা হবে তা নির্ভর করবে বাজারে স্যামসাং ফোনের চাহিদা কতখানি আছে তার ওপর। ধারণা করা হচ্ছে, চাহিদা ও উৎপাদন খরচের কথা বিবেচনা করে তারা ভারত বা ভিয়েতনামে কারখানা স্থানান্তর করবে।
ইতোমধ্যে বাংলাদেশে এক দশক পূর্ণ করেছে দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক এই প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটি। হংকংভিত্তিক বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান কাউন্টার পয়েন্ট রিসার্চের তথ্য অনুযায়ী, বিক্রির দিক থেকে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) দেশের বাজারের ২২ শতাংশ দখল করেছে স্যামসাং।
স্যামসাং হচ্ছে দেশের প্রথম বৈশ্বিক হ্যান্ডসেট কোম্পানিÑ যারা বাংলাদেশে মোবাইল তৈরির কারখানা স্থাপন করেছে। স্যামসাং বাংলাদেশ ফ্ল্যাগশিপ ডিভাইস বাদে অন্যান্য সব সিরিজের হ্যান্ডসেট সংযোজন করছে বাংলাদেশে তাদের নিজস্ব কারখানা থেকে।
বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম স্যামসাংকে দেশের শীর্ষ মোবাইল ব্র্যান্ডের স্বীকৃতি দিয়েছে। মোবাইল হ্যান্ডসেট আমদানিকারকদের সংগঠন বিএমপিআইএ জানিয়েছে, গত কয়েক বছর ধরে আর্থিক মূল্যের হিসাবে স্মার্টফোন বিক্রিতে শীর্ষে রয়েছে স্যামসাং।


আরো সংবাদ



premium cement