দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন নীতিতে আস্থা সৃষ্টি, সুশাসন নিশ্চিত করা এবং কয়েকটি ক্ষেত্রে সংবিধান পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ ও গণভোটে নির্বাচিত মাত্র দুই বছর মেয়াদি একটি সর্বদলীয় সর্বজন স্বীকৃত জাতীয় সরকার। জাতীয় সরকারের সদস্যবৃন্দ, ন্যায়পাল ও বিভিন্ন কমিশনের চেয়ারম্যানরা ২০২৮ সন পর্যন্ত কোনো নির্বাচনে অংশ নেবেন না। তাদের সব আর্থিক তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে।
জাতীয় সরকারের প্রধান করণীয়সমূহ
প্রস্তবিত জাতীয় সরকারের প্রথম তিন মাসে কাজ হবে নতুন করে নির্বাচন কমিশন গঠন, নির্বাচনী আইনের কিছু ধারার সংস্কার, গণভোট এবং ‘না’ ভোটের প্রচলন, প্রশ্নবিন্ধ সংসদ লক্ষ ভোটারের স্বাক্ষরে প্রত্যাহারের ব্যবস্থা, জনস্বার্থ সম্পর্কিত বিভাগে ন্যায়পাল নিয়োগ, প্রকাশ্যে ধূমপান নিষিদ্ধকরণ এবং ১৯৮২ সালের জাতীয় ওষুধ নীতি পুরোপুরি কার্যকর করে, ওষুধ, শৈল্য চিকিৎসা ও রোগ নিরীক্ষার দর স্থির করে দেয়া। এতে বিক্রেতাদের পর্যাপ্ত লাভ দিয়েও ওষুধের সর্বোচ্চ বিক্রয়মূল্য অর্ধেকে নেমে আসবে, অপ্রয়োজনীয় ও প্রতারণামূলক ওষুধ বাতিল হবে। সব ওষুধ কোম্পানিকে একাধিক কাঁচামাল উৎপাদনে প্রণোদনা দেয়া হবে।
মানহানির মামলা করতে হলে ক্ষুব্ধ ব্যক্তিকে ন্যূনতম ১০ হাজার টাকা কোর্ট ফি দিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তির শহরে ফৌজদারি মামলা করতে হবে। একই মামলা বিভিন্ন জেলার একাধিক আদালতে করা যাবে না।
পরবর্তী ছয় মাস
(ক) বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ সব রাজনৈতিক কর্মী ও আলেমদের জামিন নিশ্চিত করে এক বছরের মধ্যে তাদের বিচার শেষ করে রায় কার্যকর করা হবে।
(খ) সুশাসন ও সব অঞ্চলের উন্নয়নে বাংলাদেশকে ১৫/১৭টি প্রদেশ/স্টেটে বিভক্তকরণ, প্রত্যেক প্রদেশে/স্টেটে ৬-৭ জন বিচারপতি সমন্বিত হাইকোর্ট প্রতিষ্ঠা এবং সুপ্রিমকোর্টে একটি সার্বক্ষণিক সাংবিধানিক বেঞ্চ সৃষ্টিসহ সুপ্রিম কোর্টে ৬টি স্থায়ী বেঞ্চ থাকবে- (১) ফৌজদারি, (২) দেওয়ানি, (৩) নির্বাচন ও মৌলিক অধিকার, (৪) কোম্পানি বিরোধ ও আয়কর সংক্রান্ত, (৫) সকল প্রকার দুর্নীতি বিষয়, (৬) যৌন নিপীড়ন ও নারীদের অধিকার।
বিচারাধীন মামলার সংখ্যা অর্ধেকে নেমে আসা অবধি, আদালতের সাপ্তাহিক ছুটি একদিন করা।
(গ) সরকারি চাকরিতে শিক্ষিত বেকাররা ৪০ বছর বয়স অবধি অংশ নিতে পারবেন। তবে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সৈনিক পদে ৩০ বছরের মধ্যে যোগ দিতে হবে। শিল্প ও কৃষিতে স্বল্পশিক্ষিতদের ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকবে। শিক্ষিত নবীন বেকারেরা ৬ মাস বয়োবৃদ্ধ সেবায় প্রশিক্ষণ নিয়ে উন্নত দেশগুলোতে বেশি আয় করতে পারবেন।
(ঘ) চিকিৎসা পেশাজীবীদের স্বল্পতা নিরসনে, সুস্থ থাকলে ৭৫ বছর পর্যন্ত মেট্রোপলিটন শহরের বাইরে কর্মে পুনঃনিয়োগ পাবেন।
(ঙ) জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে সব সরকারি বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের নির্বাচন নিশ্চিত করা হবে।
পরবর্তী ৯ মাসের মধ্যে
(ক) ২ কোটি দরিদ্র পরিবারের জন্য সাপ্তাহিক রেশনিং চালু হবে, মাসিক ১০০ টাকায় তিন বালবের বিদ্যুৎ সুবিধা এবং মাসিক ২০০ টাকার প্রিমিয়ামে ওষুধসহ সব প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা পাবেন।
(খ) দুর্নীতি তথ্যের শে^তপত্র প্রকাশ করা হবে। অভিযুক্ত ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে পারবেন না।
(গ) ভোটার তালিকা সংশোধন, জাতীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন সহজ করা, ৩-৪ প্রদেশে/স্টেটে অফিস থাকলে চলবে, প্রত্যেক শাখায় চাঁদা দেয়া কমপক্ষে ২০০০ সদস্য থাকতে হবে তন্মধ্যে ১/৫ নারী। জাতীয় রাজনৈতিক দলগুলো দলীয় ব্যানারে ইউনিয়ন ও উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।
(ঘ) পেশাজীবী, বয়োজ্যেষ্ঠ অবসরপ্রাপ্ত রাজনীতিবিদ ও সম্মানী ব্যক্তিদের নিয়ে জাতীয় ও প্রাদেশিক সংসদের উচ্চকক্ষ গঠন করা হবে।
(ঙ) ইলেকট্রনিক ভোটার মেশিন (ইভিএম) প্রত্যাহার করে ১৮ মাসের মধ্যে সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন সমাপন। ইভিএমে ভোট কারচুপির সম্ভাবনা সমধিক।
(চ) (১) সুষ্ঠু ও সুলভ স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার জন্য সরকারি ও বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে প্রতি বছর ২০ হাজার ছাত্র ভর্তি করা হবে, সমসংখ্যক ছাত্র দন্ত, ফিজিওথেরাপি, নার্সিং ও অন্যান্য প্যারামেডিক্যাল কোর্সে ভর্তি করা হবে।
(২) প্রত্যেক সরকারি ও বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ ন্যূনতম ১০টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র পরিচালনার দায়িত্ব নেবেন। ছাত্ররা প্রতি সেশনে এক মাস সেখানে অবস্থান করে শিক্ষা নেবেন, শহীদদের কবর জিয়ারাত করবেন, একদিন একটি দরিদ্র পরিবারে অবস্থান করে দরিদ্র্য সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করবেন।
(৩) নবীন চিকিৎসকদের ইন্টার্নশিপের মেয়াদ হবে দুই বছর- এক বছর নিজ নিজ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এবং দ্বিতীয় বছর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রের বিভিন্ন শাখায়।
(৪) বেসরকারি ক্লিনিকসমূহ কেবল বেসরকারি প্রাইভেট চিকিৎসক এবং অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চিকিৎসক দিয়ে পরিচালনা করতে হবে। প্রাইভেট ক্লিনিকে কোনো সরকারি চিকিৎসককে সার্বক্ষণিক বা খণ্ডকালীন নিয়োগ দেয়া চলবে না।
(চ) জেনারেল প্রাকটিসনার্স, রেফারেল চিকিৎসা ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রাইভেট প্রাকটিস পদ্ধতি চালুর উদ্যোগ নেয়া হবে এবং স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো হবে।
(ছ) জাতীয় সরকারের প্রথম বাজেটে বার্ষিক ব্যক্তিগত আয় পাঁচ লাখ টাকা অবধি আয়কর মুক্ত হবে, সব মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি ও সামগ্রী আমদানি শুল্কমুক্ত হবে। ৫% সুদে কৃষিতে ব্যাপক বিনিয়োগ হবে এনজিও-এর মাধ্যমে। গড়ে প্রতি ৫০ হাজার লোকের বাসস্থান ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রের নিরাপত্তা বেষ্টনী, গভীর নলকূপ, ইলেকট্রিক সাবস্টেশন ১০টি বাসস্থান নির্মাণ, শিক্ষার্থীদের ডরমিটরি, ল্যাবরোটরি ও অপারেশন থিয়েটার আধুনিকীকরণে প্রয়োজন হবে ১০ কাটি টাকা। অন্ততপক্ষে ১০০০ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড শুরু হবে, প্রাথমিক অবস্থায় দু’জন সার্বক্ষণিক চিকিৎসক প্রদেশ/স্টেট থেকে নিয়োগ দেয়া হবে। পাঁচজন নবীন চিকিৎসকের নিয়োগ ব্যবস্থা থাকবে আকর্ষণীয় বেতন ও প্রশিক্ষণ সুবিধায় গ্রামে অবস্থান ভাতা, বিশেষজ্ঞ ভাতা, শিক্ষকতা ভাতা, বিনে ভাড়ায় বাসস্থান, স্কুল স্বাস্থ্য কার্যক্রম পরিদর্শন ভাতা প্রভৃতি প্রতি মাসে পাবেন।
(জ) কারাগার, পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর হাসপাতালসমূহ সরাসরি এএমনি (আর্মি মেডিক্যাল কোর) দিয়ে পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হবে, ফলে দুর্নীতি বিলুপ্ত হবে।
(ঝ) প্রত্যাগত প্রবাসীদের জন্য বিমানবন্দরে ভিআইপি সেবার ব্যবস্থা নিশ্চিত হবে, লাশ সরকারি খরচে দেশে আনা হবে। প্রত্যেক প্রবাসী ৫০ লাখ টাকার জীবন বীমা সুবিধা পাবেন।
৪. আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করে পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে। একই সাথে প্রদেশ/স্টেট সংসদের নির্বাচন পরিচালনা করা হবে। কেন্দ্রীয় সরকার প্রদেশ/স্টেট গভর্নর মনোনয়ন দেবেন, তারা নির্বাচিত হতে পারেন প্রাদেশিক সংসদ সদস্য দ্বারা।
রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ ও গণভোটের মাধ্যমে প্রস্তাবিত সর্বদলীয় ও বিশিষ্ট নাগরিকদের নিয়ে গঠিত জাতীয় সরকারে রাষ্ট্রপতি হবেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান অথবা আইন বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেন, জনসংযোগ, স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসনের দায়িত্বে প্রধানমন্ত্রী হবেন নোবেল লরিয়েট অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস, সাথে দুর্নীতি দমনে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) সাখাওয়াত হোসেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও শহীদদের তালিকা প্রণয়নে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, জবাবদিহিমূলক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ড. বদিউল আলম মজুমদার এবং সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব:) ইকবাল করিম ভূইয়া প্রতিরক্ষায়।
আইন, সংসদ ও সংবিধান সংস্কারে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, সাথে মানবাধিকার ও আইন কমিশনে অধ্যাপক আসিফ নজরুল; আবুল হাসান চৌধুরী (কায়সার) পররাষ্ট্র ও বৈদেশিক সম্পর্কে, প্রতিমন্ত্রী বিএনপির শামা ওবায়েদ, অর্থ ও দরিদ্র্য নিরসনে ড. বিনায়ক সেন, অর্থনীতিবিদ, ব্যাংক ও মানি লন্ডারিং নিয়ন্ত্রণে ড. সালেহ উদ্দিন আহমদ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে এস এম আকরাম, সংখ্যালঘু ও আদিবাসীর দায়িত্বে অধ্যাপক সুকোমল বড়–য়া, ট্রিপস (ঞৎরঢ়ং) ও বৈদেশিক/ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্কিত দায়িত্বে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
শিক্ষা ও মানব উন্নয়নে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকবেন অধ্যাপক কাজী কামরুজ্জামান, সাথে ওষুধ প্রশাসনের প্রধানের দায়িত্বে বিএসএমএমইউ অধ্যাপক সাইদুর রহমান খসরু এবং মেডিক্যাল ও প্যারামেডিকেল শিক্ষার ব্যাপক প্রসারে দায়িত্বে গণবিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক আবুল কাশেম চৌধুরী, শিল্প বাণিজ্যের দায়িত্বে শেখ বসিরুদ্দিন আকিজ, তথ্য সম্প্রচার ও মিডিয়ার দায়িত্বে শিল্পপতি-মিডিয়া মালিক এ কে আজাদ; স্থানীয় শাসন ও প্রদেশ/স্টেট সৃষ্টি সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ড. তোফায়েল আহমেদ, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও সমাজবিজ্ঞানী।
নৌপথ, নৌবন্দর, আন্তর্জাতিক নদীর পানির অধিকার সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে প্রকৌশলী ইনামুল হক, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দায়িত্বে প্রকৌশলী সামসুল আলম, নগর উন্নয়ন ও যোগাযোগে স্থপতি মুবাশে^র হোসেন।
প্রবাসী অভিবাসীদের কল্যাণ এবং বৈদেশিক বিশ^বিদ্যালয়ের সাথে সংযোগ স্থাপন ও শিক্ষক-ছাত্র এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম (ঊীপযধহমব চৎড়মৎধস) স্থাপনে প্রবাসী শিক্ষাবিদ অধ্যাপক হাসনাত হোসেন, এমবিই।
ধর্ম ও নৈতিকতায় ইসলামিক শিক্ষাবিদ অধ্যাপক পারভীন হাসান, সংস্কৃতি- যাত্রা ও মেলার প্রসারে গায়িকা শিল্পী নবনীতা চৌধুরী, পরিবেশ ও প্রাণিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা চৌধুরী, শ্রমিক কল্যাণ ও নিরাপদ সড়ক দায়িত্বে বাম সম্মিলিত জোট প্রতিনিধি মনজুরুল আহসান। নারী ও যুব উন্নয়নে বিএনপি প্রতিনিধি ব্যারিস্টার জাইমা রহমান, মানবাধিকার ও সমাজ কল্যাণে আওয়ামী লীগ প্রতিনিধি শেখ রেহানা এবং খাদ্য সরবরাহ ও রেশনিংয়ে মতিয়া চৌধুরী, সাথে কৃষি ও কৃষক সমবায় প্রসারে ড. শওকত আলী, সাবেক সচিব।
লেখক : ট্রাস্টি, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র
বি: দ্র: (এই নিবন্ধে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব)
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা