২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সাংবাদিক ভাইদের একতা

অন্য দৃষ্টি
-

গণতন্ত্র দুর্বল হয়ে যাচ্ছিল। এক দিনের ভোটের অধিকারও মানুষ হারিয়ে ফেলছিল। ২০১৪ সালের আগের কথা। বিরোধী দলগুলো মাঠে আন্দোলন গড়ে তুলছিল। ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে আন্দোলনকে এক কথায় ‘আগুন সন্ত্রাস’ বলে তাচ্ছিল্য করে উড়িয়ে দিলেন সেই সময়ের তথ্যমন্ত্রী। বিরোধী দলের নেত্রীকে সন্ত্রাসীদের দোসর আখ্যা দিয়ে দিলেন তিনি। যুতসইভাবে সেঁটে দেয়া ‘তকমা’কে এক সুরে সরকারি দলের লোকেরা গাইতে লাগলেন। সরকারের এ ‘গান’ যখন কোথাও থেকে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েনি, তখন দেশের মিডিয়ার ভূমিকাটি কেমন ছিল পর্যালোচনার সময় এসেছে। আমরা যদি নিজেদের কর্মকাণ্ড নিজেরা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে না পারি, এগোতে পারব না। বারে বার হোঁচট খাবো।
সংবিধানে রাখা নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানটি বাতিল করে দেয়া হলো। অথচ এ সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে আওয়ামী লীগ নজিরবিহীন আন্দোলন গড়ে তোলে। মিডিয়া এ আন্দোলনের পার্টনার ছিল। এবার তারাই যখন নিজেদের সুবিধার জন্য সংবিধানের এ বিধানটি বাতিল করার ব্যবস্থা করল কোথাও থেকে কার্যকর বিরোধিতা ছিল না। দেশের বুদ্ধিজীবী সুশীলসমাজ নাগরিক সমাজ নীরবতা পালন করেছে। এর প্রতিবাদে বিরোধীরা যখন রাস্তায় আন্দোলনে নামেন, জনগণ সে আন্দোলনে সাড়া দেয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে যতগুলো আন্দোলন হয়েছে, তার মধ্যে ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে সবচেয়ে বেশি মানুষ সম্পৃক্ত হয়েছিল। দেখা গেল পেট্রলবোমায় মানুষ পুড়িয়ে দেয়া হলো। কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়া দায়ী করা হয় বিরোধী দলকে। তথ্যমন্ত্রী যেভাবে প্রপাগান্ডাকে জোরালো করেছেন তার ‘তারিফ’ না করে পারা যায় না।
বাংলাদেশের গণমাধ্যম তথা সাংবাদিক সমাজ কী ভূমিকা পালন করেছিল সেই সময়? ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে এ দেশে সাংবাদিকরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। তাদের অ্যাক্টিভিজমের কারণে এ দেশের জন-আন্দোলনগুলো বেগবান এবং এর প্রতিটি আন্দোলন সফল হয়েছিল। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম দেখা গেল এ দেশের মিডিয়া এমন এক ভূমিকা পালন করে, যা পুরোপুরি আন্দোলনের বিপক্ষে দাঁড়াল। সংবাদমাধ্যমগুলো সরকারের ভাষায়, একই সুরে বেজেছে। সরকারের সাথে তাল মিলিয়ে আন্দোলনকে তারা ‘অগ্নিসন্ত্রাস’ বানিয়ে ছেড়ে দিয়েছে। ফলে অসংখ্য মানুষের প্রাণহানি ও ত্যাগ নস্যাৎ হয়ে গেছে। এর বিপরীতে কী লাভ হয়েছে এ দেশের।
২০১৪ সালের আগে ভুলত্রুটিসহ অন্তত এক দিনের নির্বাচনীব্যবস্থা বাংলাদেশে ছিল। সংসদ নির্বাচনের কথা বাদ দেয়া গেল। কিন্তু স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নির্বাচনে জনগণের কিছুটা হলেও অংশগ্রহণ ছিল। বিরোধী দলমতের থেকে কেউ কেউ নির্বাচিত হতে পারছিলেন। এখন সেই এক দিনের নির্বাচনও আর নেই। ‘নেই’ মানে একেবারেই উধাও হয়ে গেছে। ১৯ সেপ্টেম্বরের খবর, ‘বিনা ভোটে ৪৩ ইউপিতে আওয়ামী লীগের জয়’। প্রথম আলো এই শিরোনামের নিচে ‘সুজন’ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের মন্তব্য জুড়ে দিয়েছে। তিনি মন্তব্য করেছেন, ‘মানুষ জেনে গেছে যে, দিন শেষে জয়ী হবেন সরকারদলীয় প্রার্থীরা। ফলে নির্বাচনে অংশ নেয়াকে পণ্ডশ্রম ও অর্থের অপচয় মনে করে অনেকে।’
এর নিচেই পত্রিকাটি আরেকটি শিরোনাম করেছে, ‘সুবিধা নিয়ে জাপার প্রার্থীরা ভোট থেকে সরে যাচ্ছেন।’ এ খবরটির বিস্তারিত বিবরণ পড়লে বোঝা যাবে বাংলাদেশে ভোটের ব্যবস্থাটা এখন পুরোপুরি ‘ফান’ হয়ে গেছে। কুমিল্লার-৭ আসনটিতে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে একজন বিশিষ্ট চিকিৎসককে। দেশব্যাপী তার সুনাম রয়েছে। এ সময়ের নির্বাচনে সরকারি দলের পাশাপাশি শুধু জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা অংশ নেন। জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের মনোনয়নের শর্ত থাকে, তারা শেষ পর্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকবেন। দেখা যাচ্ছে জাতীয় পার্টির এসব প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর উধাও হয়ে যাচ্ছেন। তাদের সাথে দলের হাইকমান্ডও যোগাযোগ করতে পারছেন না। এ ধরনের একটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে প্রাণ গোপাল দত্তের মর্যাদা কতটা বেড়েছে বিজ্ঞজনরা বলতে পারবেন। জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা জাতীয় সংসদের নির্বাচনকে স্রেফ কিছু আর্থিক সুবিধা নেয়ার হাতিয়ার বানিয়ে ফেলেছেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারে অধীনে পরপর তিনটি সুষ্ঠু নির্বাচন এ দেশের রাজনীতিকে একটি পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল। বহির্বিশ্বে একটি উদার দেশ হিসেবে স্বীকৃতি মিলছিল। সে দেশটির কেন আজ এ অবস্থা? আমরা সংবাদমাধ্যম বা মিডিয়ার ভূমিকার কথা বলছিলাম। কেন সংবাদমাধ্যম প্রথম বৃহত্তর জনগণের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করতে ব্যর্থ হলো? এ সময়টিতে আমেরিকার নেতৃত্বে ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে’র ডামাডোল চলছিল। এর একটা অস্ত্র ছিল ‘জঙ্গিবাদ’। জন-আন্দোলনগুলো যখন দানা বেঁধেছিল এগুলোকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা ছিল সরকারের। তারা ইসলামী দলগুলোর অংশগ্রহণকে ‘জঙ্গিবাদ’ হিসেবে দেখিয়েছে। পরে অবশ্য সে অভিধা বিএনপিসহ সব দলের গায়ে সেঁটে দেয়া হয়েছিল। পুলিশ আন্দোলনের প্রতিটি প্রচেষ্টাকে ‘নাশকতা’ বলে প্রচার করেছে। রাজনৈতিক কর্মসূচি পুলিশের ভাষায় হয়ে গেছে জঙ্গিবাদ। সরকারের এ অ্যাজেন্ডা ছিল নিজেদের ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার জন্য।
সরকার যখন জঙ্গিবাদ, নাশকতা এসব শব্দের চর্চা করেছে, সংবাদমাধ্যমও সরকারের ভাষায় কথা বলেছে। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মিডিয়া যাচাই-বাছাই করে সংবাদ পরিবেশন করেনি। ফলে জঙ্গিবাদ নাশকতার তকমা দিয়ে আন্দোলন দমাতে সরকারের বেগ পেতে হয়নি। আশকারা পেয়ে সরকারের ক্ষমতা প্রয়োগের নীতি দিন দিন বেড়েছে। গণতান্ত্রিক দেশে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার একটি প্রধান অস্ত্র সংবাদমাধ্যম। এটি যখন সরকারের সমর্থক হয়ে যায় বিরোধীদের সেখানে আশ্রয় থাকে না। এতে বাংলাদেশে বিরোধী শক্তি সাময়িকভাবে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এর ফল কিন্তু দেশের সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের জন্যও ভালো হয়নি। অচিরেই তা প্রমাণিত হয়ে গেছে।
ভোটের অধিকার হারিয়েছে জনগণ। এর সাথে দুর্নীতি অনিয়মে ছেয়ে গেল সারা দেশ। এগুলো প্রতিরোধ করবে কে? যারা এসব করছে তারা সরকারি আশ্রয়ে থেকেই তা করছে। বিরোধী দল তাদের পূর্ণাঙ্গ শক্তিসহ মাঠে থাকলে তারা এর প্রতিবাদ করত; সরকার নিজেদের অন্যায় অনাচার শুধরে নিতে বাধ্য হতো। সংবাদমাধ্যমকে পেশাদার অবস্থান থেকে দুর্নীতি, লুটপাটের খবর দিতে হয়। এরপরের কাজটি ছিল বিরোধী দলের। খবর প্রচার হওয়ার পর সেটি নিয়ে তারা প্রতিবাদ বিক্ষোভ করবে । ফলে সরকার চাপে পড়বে। ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে। এখন শক্তিশালী বিরোধী দলের অভাবে তা হচ্ছে না। সরকার প্রতিপক্ষ হিসেবে এখন সংবাদমাধ্যমকেই পাচ্ছে। ‘প্রথম আলো’র সাংবাদিক রোজিনার ‘অপরাধ’টি কী? তিনি শুধু কিছু নথিপত্র সংগ্রহে নিয়েছিলেন যেগুলো দিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করতেন। আর সেগুলো প্রকাশ করা হলে কারো কারো কুকীর্তি ফাঁস হয়ে যেত, যেমন তিনি প্রশাসনের দুষ্কৃৃতকারী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আগে বেশ কিছু প্রতিবেদন করেছিলেন। সচিবালয়ের ভেতরে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তার সাথে অশোভন আচরণ করেছেন। তাকে লাঞ্ছিত করেছেন। পরে পুরনো আইনে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সংবাদ প্রচার করলেই শুধু হবে না। নিজেদের সুরক্ষাও থাকতে হবে। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সেটি হচ্ছে বিরোধী দল। বিরোধী দলকে যখন উচ্ছেদ করা হচ্ছিল মিডিয়া কেন তার সহযোগী হলো, তার উত্তর বহু দিন খুঁজবে এ দেশের মানুষ।
শেষ পর্যন্ত দেখা গেল সরকার সমর্থক মিডিয়া বলতেও কিছু নেই। কার্যত সরকারের প্রতি অনুগত থাকার সীমা পরিসীমা নেই। একটি সংবাদ প্রতিষ্ঠানকে দুর্নীতির খবর প্রচার করতেই হয়। আর সংবাদ প্রচারই ক্ষমতাসীনদের জন্য ভয় ও শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আমরা দেখতে পাচ্ছি, সরকার সমর্থক সাংবাদিকরা প্রথম আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হলেন। এ ধারণা আর টিকে থাকল না যে, সরকার সমর্থক হলে তাকে প্রতিকূলতা স্পর্শ করবে না। প্রকৃতপক্ষে সাংবাদিকতার ধর্মই হলো এটি ক্ষমতার অপব্যবহারকে চ্যালেঞ্জ করবে। আপনি যদি সাধারণ মানের একটি সংবাদ প্রতিষ্ঠান চালান আপনাকে দুর্নীতি অপশাসনের ব্যাপারে কিছু হলেও লিখতে হবে, যা আপনার পৃষ্ঠপোষক সরকার পছন্দ করবে না। সংবাদমাধ্যমের কোনো দলপ্রীতি থাকতে পারে না। বাংলাদেশের সাংবাদিক অগ্রজদের এ বিষয়ে দৃষ্টি আকৃষ্ট হওয়া উচিত।
সাংবাদিকদের চারটি সংগঠনের ১১ জন নেতার ব্যাংক হিসাব তলব করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে সরকারের সাথে পরামর্শ করে প্রতিষ্ঠানটি কার্যক্রমকে আরো বেগবান করার অংশ হিসেবে এ উদ্যোগ নিয়েছে। সরকার সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নিলেন যেখানে নিজেদের দলের সমর্থকÑ এ চিন্তা বাদ দেয়া হয়েছে। অথচ এসব সাংবাদিক নিজেদের (সরকারি) দলের পাতে ঝোল টানতে গিয়ে নিজেদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে কাজ করেছেন।
যেমনÑ আমার দেশের সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে পত্রিকা অফিস থেকে গ্রেফতার করা হয়। দফায় দফায় তাকে রিমান্ডে নেয়া হলো। তিনি বেশ কয়েক বছর জেল খেটেছেন। তাকে পুলিশ নির্দয়ভাবে মারধর করে। সরকারি দলের লোকেরাও তাকে পুলিশের আশ্রয়ে থেকে মেরে আহত করেছে। তার ওপর যেভাবে অত্যাচার করা হয়েছে তার বিপরীতে তিনি সেভাবে আইনি সুরক্ষা পাননি। গণতান্ত্রিক রীতিনীতির সাথে সরকারের এ নিপীড়ন কোনোভাবে মানায় না। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে তার ওপর যখন খড়গ নেমে এসেছিল দেশের সাংবাদিকদের বৃহত্তর অংশ তাকে নিয়ে নিরপেক্ষ সংবাদ প্রকাশের উদারতা দেখাননি। একজন সম্পাদক নয়, দেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে মৌলিক মানবাধিকারের আশ্রয় লাভের জন্যও বৃহত্তর সাংবাদিক সমাজ মুখ ফুটে তার পক্ষে কিছু বলেনি। সাংবাদিক অভিভাবকদের বৃহত্তর অংশ তখন তাকে বিরোধী দল বিএনপির মানুষ হিসেবে শনাক্ত করেছে।
অন্য একজন প্রবীণ সাংবাদিকের ক্ষেত্রে ঘটেছে আরো ন্যক্কারজনক ঘটনা। দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদকে সন্ত্রাসীরা তার অফিসে গিয়ে আক্রমণ করেছে। তার রুমে ঢুকে তাকে টানা-হেঁচড়া করেছে। দীর্ঘক্ষণ ধরে যখন তার ওপর লাঞ্ছনা চালানো হচ্ছিল পুলিশ বাহিনী তখন নীরব অসহায়। এরপর সেই লাঞ্ছনা অপমান ও পত্রিকা অফিসে হামলার বিচারের কথাটাও কোথাও থেকে ওঠানো হয়নি। উল্টো বয়োবৃদ্ধ এই সাংবাদিকের ওপর নেমে আসে দীর্ঘ জেল জীবন। একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রের কাছ থেকে তিনি সুবিচার পাননি। তার সাংবাদিক ভাইয়েরা তাকে শনাক্ত করেছে রাজনৈতিক দল জামায়াতের একজন সদস্য হিসেবে।
সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রথম আহ্বানটি আমরা শুনতে পেলাম প্রথম আলোর সাংবাদিক রোজিনার আটকের সময়। এই সাংবাদিকের জামিনের জন্য পত্রিকাটি বিপুল শক্তি ক্ষয় করেছে। ওই সময় টানা এক সপ্তাহ ধরে এর প্রধান শিরোনাম ছিল ‘রোজিনা’। এ ছাড়া সংবাদবিষয়ক পাতা ও সম্পাদকীয় উপসম্পাদকীয় পাতার প্রায় পুরোটাজুড়ে একই বিষয় ছিল। সমমনা পত্রিকা ডেইলি স্টারও প্রায় একই ধরনের কাভারেজ দিয়ে তাদের সাথে ছিল। একটি জাতীয় পত্রিকার কাজ একটি জাতিকে সেবা করা। তার জন্য প্রত্যেকটি ব্যক্তি গুরুত্বপূর্ণ। নিজের একজন স্টাফকে বাঁচানোর জন্য এত বেশি শক্তি মনোযোগ নিবিষ্ট করা একটি জাতীয় পত্রিকার জন্য নজিরবিহীন। সময়ের কাজ সময়ে না করলে তার চক্রবৃদ্ধি দায় এসে যায়। যে কাজ সুই দিয়ে করা যায় পরে সেটি শাবল দিয়েও করা যায় না। মনে হয়, সাংবাদিক সমাজের এ বোধোদয় হওয়ার সম্ভাবনা কম।
কেবল নিজেরা আক্রান্ত হয়ে তারা ঘটনার দায় উপলব্ধি করতে পারছেন। বিরোধী সাংবাদিকদের প্রতি অচ্ছুতভাব মনে হচ্ছে এখন নেই। আমাদের বৃহত্তর সমাজ মাহমুদুর রহমানকে সাংবাদিক বলে স্বীকার করতে চাননি। পরিস্থিতি এখন এমন পর্যায়ে এসেছে তার অধীনে যারা কাজ করছেন তারাও সাংবাদিক হিসেবে মর্যাদা পাচ্ছেন। তাদের মর্যাদা আগেও ছিল, তবে সরকার সমর্থক সাংবাদিকদের বৃহৎ অংশ তাদের গোনার মধ্যে আনতে চাননি। বিভিন্ন দাবিতে এই সাংবাদিক নেতাদের আন্দোলনের খবর ও ছবি প্রকাশ করার প্রয়োজন বোধ করেনি সুশীল পত্রিকাগুলো । এ ক্ষেত্রে তাদের কৃপণতা ছিল লক্ষণীয়। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক, বিএফইউজে একাংশের সভাপতি ও ডিইউজে একাংশের বর্তমান সভাপতি মাহমুদুর রহমানের সম্পাদনায় দৈনিক আমার দেশে গুরুত্বপূর্ণ পদে সাংবাদিকতা করেছেন। মানুষের মানবিক অধিকারের জন্য আমার দেশ যে লড়াইয়ে ছিল সেটি ভুল প্রমাণ হলো না। তবে সেটি বুঝতে হয়তো আমাদের বেশ কিছু বছর লেগেছে।
ঐক্যের জন্য সাংবাদিকদের মধ্যে একটি স্বচ্ছ আলোচনা দরকার। এর মূল ভিত্তি হতে পারে ‘খবর’। একটি ঘটনা যখন ঘটবে সংবাদমাধ্যমে সেটি আওয়ামী লীগ বিএনপি বা জামায়াতের বিরুদ্ধে উপস্থাপন করবে না। তারা শুধু সেই ঘটনাটিই উপস্থাপন করবেন, সংবাদ প্রকাশের ‘গ্রামার’ অনুযায়ী। কোনো দলের প্রতি অপেশাদার পক্ষপাতিত্ব সবাই বন্ধ করবেন। তারা যেকোনো দলের সমর্থক হতে পারেন, তাতে বাধা নেই। তবে আগে তাদের নিরপেক্ষ খবর মিডিয়ায় প্রকাশ করতে হবে। এই বটমলাইনে গিয়ে তারা যদি একটি সমঝোতা করতে পারেন তা হলে সাংবাদিকদের মধ্যে একটা মধুর মৈত্রী গড়ে উঠতে পারে। হ

jjshim146@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement