২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দৃষ্টিপাত : মারণব্যাধি করোনা

-

হায় যম করোনা, মারো ছাড়া মারো না। সবাইরে ধরো না, আবার যারে ধরো, ছাড়ো না। কিন্তু কথা তো অন্যখানে। কারণ করোনার স্রষ্টা, আমার স্রষ্টা তথা সবার স্রষ্টা মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর আমি জিন ও মানুষকে এই জন্য সৃষ্টি করিয়াছি যেন তাহারা আমারই ইবাদত করে।’ (সূরা জারিয়াত, আয়াত-৫৬)
আল্লাহ পাকের এ হুকুমের বিপরীত ঘটলে বান্দার সতর্কতার জন্য তিনি পরীক্ষার ব্যবস্থা করে থাকেন। ‘আর আমি কোনো জনপদে কোনো নবী এমনভাবে প্রেরণ করি নাই যে, তথাকার অধিবাসীদিগকে সতর্ক করার উদ্দেশ্যে দারিদ্র্য ও পীড়া দ্বারা আক্রান্ত না করেছি যেন তারা বিনম্র হয়।’ (সূরা আরাফ, আয়াত-৯৪)
তা হলে আল্লাহ বিশ্বাসীরা অবশ্যই স্বীকার করবেন, বিশ্বব্যাপী তথা আমাদের ছোট্ট এ বাংলাদেশেও অন্তত ৯৫ শতাংশ মানুষের ওপর অবশ্যই পরীক্ষা চলছে। তবে অনস্বীকার্য যে, পরীক্ষা কখনো শতাব্দীকাল ধরে চলে না। তেমনি এ আপদও সেই পরীক্ষক আল্লাহ পাক তুলে নেবেন। মহামারীর প্রথম ধাক্কা তুলে নেয়ার পর কোথায় আল্লাহর শোকর? সব কৃতিত্ব তাঁর বান্দা-বান্দিরা দর্প ভরে দখল করে ছাড়লেন। এ যেন দুই কিশোরের মল্লযুদ্ধে নিচে পড়া কিশোর উঠে ধুলো ঝাড়ছে আর বলছে, তলোৎ পাইলে হইবে কি, শালার চুলের ঝুটি ছাড়ি দ্যাও নাই, (রংপুরের আঞ্চলিক ভাষা)। মূল বিষয়ের পরীক্ষা মহান পরীক্ষকের নিকট গ্রহণীয় কি বর্জনীয় হলো, তা না জানলেও ৮০ শতাংশ মানুষ পরীক্ষায় অংশই গ্রহণ করছে না নানা রকম ধমকের পরও। এ যেন বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরোর মতো।
ভয়ভীতি নিয়েই সত্য কথা বলতে হচ্ছে, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এমনকি পত্রিকার খবরে আর বাড়ির সামনের বিশ্ব রোডের বাস্তব চিত্রে যানবাহন, হাট-ঘাট, ছেলেদের দল বেঁধে খেলাধুলা। তদুপরি অভিভাবকরা সন্তানের ভবিষ্যৎ চিন্তায় বাধ্য হয়ে কোচিং সেন্টারে পাঠাতে কুণ্ঠাবোধ করছেন না। তাতে কার্যকর বিদ্যার্জন না হলেও যা হওয়ার তাই হচ্ছে। শিক্ষাব্যবস্থার সাড়ে বারোটা বাজা শেষ। এক তরুণের মুখে শুনলাম, কোনো এক বাহিনীতে চাকরির আশায় ছেলে পেলেরা বাছাই পরীক্ষায় উপস্থিত হয়েছিল। সেখানে কর্তৃপক্ষের ঘোষণা তোমরা যারা অটো পাস, তারা এক দিকে দাঁড়াও।’ তাদের কারোই পরীক্ষা নেয়া হয়নি। আমরা প্রত্যন্ত অঞ্চলের নাগরিকরা দেখতে পাচ্ছি, করোনা যেন শুধু রাজধানীতেই হামলে পড়েছে। অথচ সেখানকার নাগরিকরা ৮০ শতাংশই শিক্ষিত সচেতন। বিত্তশালী, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাফেরা, খাওয়া দাওয়া। সহজলভ্য চিকিৎসাসেবা। মাস্ক পরা, কুড়ি মিনিট পর পর সাবান পানিতে হাত ধোয়া; এমনকি ইবাদত বন্দেগির স্থান মসজিদ ঈদগাহে পর্যন্ত ভিড় করতে না দিয়ে মসজিদেই গাদাগাদি করে নামাজ পড়তে বাধ্য করা হলো। চাকরিজীবী মানুষকে বাড়ি ফিরতে কড়াকড়ি আরোপ করা হলো। তাতে খেটেখাওয়া মানুষগুলোর কষ্টার্জিত পয়সা কৃত্রিম বেকায়দা সৃষ্টি করে তাদেরকে নিঃস্ব করা হলো। অবশ্য যে করোনা প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ার ভয়ে সেই বিধিনিষেধ আরোপ করা হলো, আমাদের জানা মতে কেউ ঢাকা হতে গ্রামে করোনা বয়েও আনেনি। অথচ ঈদকে কেন্দ্র করে ঠাসাঠাসি, গাদাগাদি হলো এবং মানুষ মরল ভিড়ের চাপে।
এ দেশের একজন অশিক্ষিত মুসলমানও জানে যে, রমজানের রোজা চাঁদ দেখে ধরা আবার চাঁদ দেখেই ছাড়া। সৌদি আরবে এক দিন আগে চাঁদ দেখা যায় ভৌগোলিক নিয়মে। আর সেটিই যদি অজুহাত হয় তা হলে দয়া করে বলবেন কি সৌদিরা যখন সাহরি খায় ও ইফতার করে, ওই নিয়মে ওই সময়ে মোবাইলে কথা বলে খেতে বসবেন কি? সবচেয়ে লজ্জাকর ও মর্মান্তিক বিষয় হলো একশ্রেণীর মানুষ তৎসঙ্গে দেশের মানুষের জান-মাল, ইজ্জত-আব্রু রক্ষার শপথ নিয়ে সেই জনগণের টাকায় কেনা অস্ত্র কোমরে গুঁজে এই মহামারীর প্রাণকেন্দ্র ঢাকায় কোয়ারেন্টিনে থাকা কোনো ভদ্রমহিলাকে ধর্ষণ করে? আর আমার সে মা, আমার বোন কিংবা আমার খালা মর্মবেদনায় আত্মহত্যা করতে বারবার তাড়িত হয়। তা হলে দেশে আল্লাহর গজব থামবে কেন? সবার আত্মশুদ্ধির জন্য দেশবাসী একটি দিন ধার্য করে একই সময়ে এক-আধ ঘণ্টা পরপর উপাসনালয় বা অবস্থান হতে একযোগে স্বীয় ধর্ম মতে আত্মশুদ্ধির জন্য কর্তৃপক্ষের হুকুম বা নির্দেশ কামনা করি। হ
ইসলামপুর, পায়রাবন্দ, মিঠাপুকুর, রংপুর

 


আরো সংবাদ



premium cement