২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সুস্থ চিন্তাভাবনা

-

আমি ও আমরা একবিংশ শতকের বাসিন্দা। পৃথিবীতে বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ৮০০ কোটি। এর মধ্যে ৩০০ কোটি মানুষ দরিদ্র, অর্থাৎ জীবনের প্রয়োজনীয় অত্যাবশ্যকীয় পণ্যসামগ্রী তাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে যেমনÑ অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা। এ বিষয়টি অত্যন্ত চিন্তার উদ্রেক ঘটায়, কেন আজ তারা এত অসহায়? বর্তমান পৃথিবীকে বলা হয় অনেক উন্নত বিশ্বÑ জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিক্ষা, সংস্কৃতি, চিকিৎসাবিজ্ঞানে প্রভূত উন্নয়ন সাধিত হয়েছে, এমনকি মানুষের গড় আয়ু অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ভবিষ্যতে মানুষ মহাকাশে অন্য গ্যালাক্সিতে বসবাসের চিন্তাও করছে। সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত ঘটনাÑ উত্তর কোরিয়া আমেরিকাকে অনেক হুমকি ধমকি দিয়ে যাচ্ছে তার পারমাণবিক শক্তির ওপর ভর করে, অর্থাৎ ক্ষুদ্র দেশের পারমাণবিক ক্ষমতা বৃহৎ শক্তিকেও চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। মোট কথা, একটা উত্তেজনা সৃষ্টি করাই উদ্দেশ্য। এ মুহূর্তে পৃথিবীতে অস্ত্র নির্মাণের প্রতিযোগিতায় এগোতে চাচ্ছে চীন, ভারত, পাকিস্তান ও জাপান। মনে হচ্ছে, এই সক্ষমতা অর্জনের জন্য আমেরিকা, রাশিয়া, ফ্রান্স, ব্রিটেন ও ইসরাইলের কাছে ধরনা দিচ্ছে এবং রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে বিশেষ একান্ত আলাপের বিষয় হয়ে আসছে : অস্ত্র উৎপাদন, প্রযুক্তি আয়ত্তকরণ এবং উন্নত অস্ত্র ক্রয়। কেন রাষ্ট্রপ্রধানরা এ বিষয়কে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছেন এবং রাষ্ট্রের সম্পদের বড় অংশ এই লক্ষ্যে খরচ করছেন? ভারত ও পাকিস্তানের অর্থনীতির দিকে তাকালে দেখা যায়, রাস্তাঘাট, স্কুল, কলেজ, হাসপাতালসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তারা পিছিয়ে আছে; এমনকি কোটি কোটি লোক দরিদ্রসীমার নিচে বাস করছেন। কিন্তু যা গুরুত্ব পাওয়া উচিত ছিল তা বাদ দিয়ে রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা কেন এই প্রতিযোগিতায় নামলেন? রাজনীতির ভেল্কিবাজি দিয়ে জনগণকে বোকা বানিয়ে ফেলা হয়েছে। কারা এই প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতে বাধ্য করল? এর জন্য সঠিক ও খোলামেলা আলোচনা প্রত্যেক দেশের জাতীয় সংসদে হওয়া প্রয়োজন। কারণ অগণিত মানুষের অত্যাবশ্যকীয় চাহিদা বাদ দিয়ে জনগণের অর্থ অস্ত্র উৎপাদন ও ক্রয়ে কেন ব্যয় করা হবে এটি পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন। ওই অর্থ রাষ্ট্রপ্রধান ও সংসদ সদস্যদের ব্যক্তিগত অর্থ নয়Ñ জনগণের অর্থ, এমনকি কোনো রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিরা যখন শপথ পাঠ করেন তখন জনগণের কল্যাণের জন্যই নিবেদিত থাকবেন বলে শপথ গ্রহণ করে থাকেন। অতএব চেয়ারে বসে রাষ্ট্রের গোপন এজেন্ডা বলে বৃহৎ আকারের অর্থ ব্যয় করবেন অকল্যাণমূলক কাজে, তা একেবারেই সমর্থনযোগ্য নয়। বিজ্ঞাপন মানুষকে পণ্য ক্রয়ে উদ্বুদ্ধ করে, যেমনÑ মানুষের বগলে দুর্গন্ধ হয় এবং এটা প্রাচীনকাল থেকেই হয়ে আসছে। কিন্তু একটি কোম্পানি তা এমনভাবে প্রচার করল যে, ওদের পণ্য ব্যবহার করলে এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে এবং মানুষ তা ক্রয় করছে। তেমনি কেন রাষ্ট্রপ্রধানরা সিদ্ধান্ত নেবেন রাষ্ট্রের অস্ত্র ক্রয়ই প্রধান এজেন্ডা? কে তাকে কথিত এই প্রয়োজনীয়তা অনুভব করাল? তারা কারা? আমরা এর বাইরে এসে কি কি সমাধানে আসতে পারি? এসব বিষয় বর্তমান বিশ্বে আলাপ-আলোচনা হওয়া জরুরি, নাকি গোপনে অস্ত্রের বড় চালান ক্রয় করে জনগণের কষ্টার্জিত অর্থ খরচ করে বাহবা নেয়া হবে এই বলে যে, জনগণের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছেন। ক্রয়-প্রক্রিয়া অনেক ক্ষেত্রে State to State হয়ে থাকে অথবা সুনির্দিষ্ট একটি কোম্পানি থেকে কেনা হয়ে থাকে এবং বেশ গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়। ফলে যদি ক্রয়ে অপচয় কিংবা জেনেশুনে বেশি দামে কিনে নিজের পকেট ভারী করা হয়, কোনো বিষয়ই জনগণ জানতে পারে না। জনসাধারণের অর্থ ব্যয় করা হয় তাদের না জানিয়েই। তা কোনোক্রমেই সমর্থনযোগ্য নয়। অস্ত্রের ব্যবসা একটি বড় ধরনের ভেল্কিবাজি, বহুজাতিক কোম্পানি পণ্য বিক্রির জন্য ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের টার্গেট করে একটি দেশের বাজারে প্রবেশ করে। তেমনি অস্ত্র বিক্রির জন্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের অনেক আগ থেকে টার্গেট করা হয় এবং মননকে সেভাবে তৈরি করা হয়Ñ এটি মূলত একটা মানসিক রোগ যা কর্তাব্যক্তিদের মধ্যে সৃষ্টি করা হয়।
বৈশ্বিক রাজনীতিতে অস্ত্রের পরীক্ষার সংবাদ পরিবেশন করে পৃথিবীকে আতঙ্কিত করা হয় এবং অনেক সময় রাষ্ট্রক্ষমতায় বসানোর জন্য পছন্দের ব্যক্তিকে Finance করা হয়। কী ভয়ঙ্কর খেলা। কারা এই খেলার খলনায়ক? তাদের চিহ্নিত করে পৃথিবীর সব জনপদে হেয় প্রতিপন্ন করা উচিত, মিডিয়ায় সবসময় এসব ব্যক্তির ওপর নজর রাখা উচিত। পৃথিবীর সম্পদহীন ৩০০ কোটি মানুষের পক্ষে সোচ্চার হওয়া উচিত। এমনকি আমেরিকা, সৌদি আরব, ব্রিটেন, ফ্রান্স, ভারত, চীন ও পাকিস্তানের মতো দেশের মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে এর জবাব চাওয়া উচিত, কেন জনগণের অত্যাবশ্যকীয় চাহিদা না মিটিয়ে অস্ত্র কেনা বা উৎপাদনের জন্য রাষ্ট্রর অর্থের বড় অংশ খরচ করা হচ্ছে? এরূপ জবাবদিহিতা থাকলে জনগণের কল্যাণে রাষ্ট্রের অর্থ ব্যয় হবে, দারিদ্র্য মোচন হবে। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা পেলে একটি রাষ্ট্রের চেহারা উন্নত রাষ্ট্রে রূপান্তরিত হবে। ইউরোপের কাতারে কোনো রাষ্ট্র পৌঁছতে ২৫-৩০ বছর সময় লাগবে। এ কাজ যারা করতে দিচ্ছে না তারা বন্ধু হতে পারে না। এ বিষয় নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করার সময় এসেছে। ভারত ও পাকিস্তান স্বাধীনতার পরবর্তী ৭২ বছরে দারিদ্র্য বিমোচন করতে পেরেছে কি? এই ব্যর্থতা কেন? কারা দায়ী? জনগণকে এর জবাব নিতে হবে। এই অস্ত্র প্রতিযোগিতা থেকে বের হয়ে আসার জন্য কী কী Alternatives ছিল বা আছে সে Practice-এ যেতে পারলেন না কেন? যাদের প্ররোচনায় রাষ্ট্রপ্রধানরা যেতে পারেননি তাদেরও বিচার হওয়া উচিত।
প্রতিবেশী দেশের সাথে কী কী বিষয় নিয়ে মতপার্থক্য থাকে, তা নির্ণয় হওয়া খুবই জরুরি। সাধারণত সীমানা নিয়ে সমস্যা বহু রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হয়। এই সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে ফেলাই ভালো। শেষাবধি রাষ্ট্রের লাভের কিংবা ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করে সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে, যেমনÑ কাশ্মির সমস্যা নিয়ে ভারত এ পর্যন্ত যে অর্থ ব্যয় করেছে এবং জীবন হারিয়েছে, তা দিয়ে ভারতের লাভ হয়েছে বলে মনে হয় না। কাশ্মির বিষয়ে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নেহরু ১৯৪৭ সালে নভেম্বর মাসে referendum-এর প্রস্তাব করেছিলেন এবং জাতিসঙ্ঘের হস্তক্ষেপ চেয়েছিলেন, এই সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল। তবে এই সিদ্ধান্তকে সম্মান না করে সামরিক অভিযানের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করা হয়েছিল। তার মাশুল কোন পর্যন্ত দিতে হবে তা তারা জানে না। এসব সিদ্ধান্ত ব্যক্তিপর্যায়ে কোনো Ego-এর বশবর্তী হয়ে নেয়া যায়, তবে তা কোনো রাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত হতে পারে না। কারণ শিক্ষিত বিবেকবান লোক এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। ভাবুন তোÑ ভারত, পাকিস্তান, চীন ও বাংলাদেশ সীমান্ত অসমতা ও বিরোধ মিটিয়ে ফেলে কী পরিমাণ অর্থ ংধাব করতে পারে, গত ৭২ বছরে কত জীবন আমরা হারিয়েছি, হাজার হাজার ঘণ্টা সংসদে ব্যয় হয়েছে, যে কয়টা যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে তার ক্ষতির পরিমাণ কত? ওই অর্থ দিয়ে গণমানুষের জীবন মানের কী পরিমাণ উন্নয়ন ঘটতে পারত? তবে এই ক্ষতির অংশ কর্তাব্যক্তিদের বহন করতে হয়নি, জনগণকে বহন করতে হয়েছে।
পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস ও ঘটনা আমরা সবাই জানি, বলুন তো এরূপ সীমান্তবিরোধ ইউরোপে গত ৭২ বছরে কয়টা ঘটেছে? ইউরোপের রাষ্ট্রগুলো কি তাদের প্রতিবেশীদের সাথে সুন্দর সম্পর্ক রেখে বসবাস করছে না? ব্রিটেন সাম্প্রতিক সময়ে আয়ারল্যান্ডবাসীকে referendum-এর মাধ্যমে আলাদা হওয়ার সুযোগ কি দেয়নি? তাহলে আমরা কেন পারব না? এটা সম্পূর্ণরূপে Mind Set আর দূরদর্শিতার ব্যাপার। যুদ্ধের আর কল্যাণের ইতিহাসের হিসাব সঠিকভাবে যুক্তির ওপর নির্ভর করে নিতে হবে, তাহলে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে জাতিকে কল্যাণের পথে এগিয়ে নেয়া যাবে নতুবা এই গরিবি হাওলত থেকে বের হওয়া যাবে না। এটা বৈশ্বিক চক্রান্তের ফসল, আর তার অপনায়ক রাষ্ট্র পরিচালনাকারীরা। এই অসুস্থ মস্তিষ্কের লোকজনকে বর্জন করতে হবে। তবে ব্যক্তিগত লাভের জন্যও কোনো কোনো রাষ্ট্রনায়ক খপ্পরে পড়েন। রাজীব গান্ধীকে সুইডেনের Baforce কোম্পানির খপ্পরে পড়তে হয়েছিল। যা হোক মূল আরজÑ সুস্থ ও সুন্দর রাষ্ট্র নির্মাণের জন্য নতুন চিন্তাচেতনা নিয়ে আমাদের সবাইকে গভীরভাবে ভাবতে হবে।
সাম্প্রতিক করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব চীনের উহান প্রদেশ থেকে শুরু হয়েছে এবং তার জন্য আমেরিকা চীনের জীবাণু-অস্ত্র নির্মাণের কারখানায় ‘Leakingকে দায়ী করছে। বিশ্বব্যাপী মানুষের জান, মাল ও বিশে^র অর্থনীতিকে হুমকির মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে। অস্ত্র নির্মাণের এই অশুভ প্রতিযোগিতাÑ আমাদের এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। এটি মানবজাতির সুন্দর জীবনযাপন এবং কল্যাণের পরিপন্থী। সবটাই একটি অসুস্থ চিন্তা, মানবতাকে ধ্বংস করার একটি প্রক্রিয়া, যা বন্ধ করার জন্য আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।হ
লেখক : ব্যবসায়ী

 


আরো সংবাদ



premium cement
সখীপুরে বৃষ্টির জন্য অঝোরে কাঁদলেন মুসল্লিরা দক্ষিণ ভারতে কেন কাজ করেনি বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের নতুন আংশিক কমিটি বাংলাদেশের হাসপাতাল ও চিকিৎসায় বিনিয়োগ সম্ভাবনা অন্বেষণে থাইল্যান্ডের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান ট্রাম্পের বিচার নিয়ে বিভক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট চুয়েট শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত, ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত আমদানি ব্যয় কমাতে দক্ষিণাঞ্চলের সূর্যমুখী তেলের আবাদ পাকুন্দিয়ায় গানের আসরে মারামারি, কলেজছাত্র নিহত আবারো হার পাকিস্তানের, শেষ সিরিজ জয়ের স্বপ্ন পাটকেলঘাটায় অগ্নিকাণ্ডে ৩ দোকান পুড়ে ছাই ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা শুরু

সকল