২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

যে ১০ প্রাণির বিচিত্র সব বৈশিষ্ট্য বিস্ময় জাগায়!

যে ১০ প্রাণির বিচিত্র সব বৈশিষ্ট্য বিস্ময় জাগায়! - ছবি : বিবিসি

প্রত্যেকটি প্রাণির কিছু না কিছু বিশেষ দক্ষতা রয়েছে, যেটা তার টিকে থাকার মূল শক্তি। কিন্তু এরমধ্যে কিছু এমন বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা বিস্ময়ের জন্ম দেয়। বিবিসি ফোর এমন দশটি প্রাণির বিস্ময়ের সন্ধান করেছে।

১. পেঙ্গুইন
পেঙ্গুইন পাখি শ্রেণিভুক্ত হলেও এটি উড়তে পারে না। কিন্তু খর্বকায় এই প্রাণি সমুদ্রের ৫৫০ মিটার গভীর পর্যন্ত সাঁতরে যেতে পারে। নিশ্বাস বন্ধ রাখতে পারে টানা ২০ মিনিট।

পেঙ্গুইনের বসবাস যেহেতু বরফ ঢাকা মেরু অঞ্চলে তাই তার শরীর উষ্ণ রাখা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

এমনিতে পেঙ্গুইন মাইনাস ৭০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মতো হিমশীতল তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে।

প্রাথমিকভাবে তাদের লোম শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। এর পালকগুলো খুবই ঘন যেকোনো পাখির চেয়ে তিনগুণ বেশি।

কিন্তু শরীরে বাড়তি চর্বি থাকলে এই ঠান্ডা সহ্য করা আরো সহজ হয়।

তাই মেদ বাড়াতে পেঙ্গুইনকে বেশি বেশি শিকার করতে হয়। যে পেঙ্গুইন পানির যতো গভীরে যেতে পারে ততো বেশি মাছ পায়।

২. ভালুক
ভালুকরা প্রতিবছরের একটি লম্বা সময় শীত-নিদ্রায় থাকে। এসময় তারা কোনো কিছু শিকার করে না, খায় না। তেমন চলাফেরাও করে না।

অথচ বছরের বাকি সময় দিনের ২০ ঘণ্টাই তারা কাটায় শিকার করে। মাত্র চার ঘণ্টা বিশ্রাম করে।

এই শিকার করার বড় কারণ হল শীত-নিদ্রায় ভালুকের বেঁচে থাকতে প্রচুর ক্যালোরি সঞ্চয় থাকা প্রয়োজন।

তাই বাকি সময় ভালুক প্রতিদিন এক লাখ ক্যালোরি পর্যন্ত খেয়ে থাকে। যা এক হাজার ২৮২টি ডিমের ক্যালোরির সমান।

এই খাবার জোগাড় করতে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয় ভালুক। একটি মেরু ভালুকের বিচরণক্ষেত্র তিন লাখ বর্গ কিলোমিটার যার আয়তন পুরো ভারতের চাইতেও বড়।

৩. সিংহ
প্রাণিজগতের সবচেয়ে বড় শিকারি হল বিগ ক্যাটস, যার মধ্যে রয়েছে সিংহ, বাঘ, চিতা, লেপার্ড, জাগুয়ার ও কুগার।

এর মধ্যে সিংহের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল তারা দলবেঁধে শিকার করে এবং নিজেদের চাইতে বড় প্রাণিকে পরাভূত করে। এই শিকারের দক্ষতা সিংহের শক্তি থেকে নয় বরং আসে বুদ্ধি থেকে।

সিংহের মস্তিষ্কে উন্নত ফ্রন্টাল কর্টেক্স রয়েছে। মস্তিষ্কের এই অংশটি কাজে লাগিয়ে সিংহ শিকারের কৌশলগত পরিকল্পনা করে থাকে।

ফ্রন্টাল কর্টেক্স মূলত সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সমস্যা সমাধান এবং সামাজিক আচরণ নিয়ে কাজ করে।

আর এই ফ্রন্টাল কর্টেক্স পুরুষ সিংহের চাইতে নারী সিংহের বেশি বড় থাকে। এ কারণে আফ্রিকা অঞ্চলে সিংহীদের দলবেঁধে শিকার করতে দেখা যায়।

এই কৌশলী বুদ্ধির কারণেই বনের রাজার তকমাটাও পেয়ে থাকে সিংহ।

৪. পিঁপড়া
পিঁপড়াদের উপনিবেশকারী বা কলোনাইজার বলা হয়। কারণ তারা লাখ লাখ সংখ্যায় ঝাঁক বেঁধে কলোনি করে থাকে।

এই পিঁপড়াদের একদল থাকে শ্রমিক। তাদের কাজ কলোনির রানী ও শিশুদের জন্য খাবার সংগ্রহ করা।

পিঁপড়ার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য তাদের শক্তি। এরা নিজেদের ওজনের চাইতে পাঁচ হাজার গুণ বেশি ওজন বহন করতে পারে।

পিঁপড়ার ফুসফুস ও কান নেই। শরীরের দুই পাশের ছিদ্র দিয়ে তার শ্বাস নেয় এবং ভাইব্রেশনের সাহায্যে শব্দ শুনে থাকে।

তাদের পাকস্থলী দুটি। একটি খাবার খাওয়ার জন্য আরেকটি খাবার জমানোর জন্য।

পিঁপড়ার আরেকটি বৈশিষ্ট্য তারা পেশায় কৃষক এবং পশু-পালনকারী। তারা তাদের চেয়ে ছোট পতঙ্গ অ্যাফিডসদের লালন পালন করে থাকে।

এরা নিজেদের ঘরে অ্যাফিডস বা জাবপোকাদের আশ্রয় দেয় যেন তাদের প্রয়োজনে খেতে পারে আবার এই কীটগুলো পাতা থেকে যে হানিডিউ বের করে পিঁপড়া যেন সেগুলোও খেতে পারে।

বিশ্বে মোট পিপড়ার সংখ্যা এক ট্রিলিয়নের বেশি। সহজভাবে বললে বিশ্বের সব মানুষের ওজন এবং সব পিপড়ার ওজন সমান সমান।

৫. শিয়াল
লাল শিয়ালের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল এটি শিকার করতে পৃথিবীর চুম্বকীয় ক্ষেত্র কাজে লাগায়। এজন্য তারা ব্যবহার করে ক্রিপ্টোক্রোম নামক চোখের প্রোটিন।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই প্রোটিনের মাধ্যমে তারা হয়তো পৃথিবীর চুম্বকীয় ক্ষেত্র দেখতে পারে।

শিকার যদি ঘন বরফ বা ঘন ঘাসের মধ্যে লুকিয়ে থাকে তাহলে চুম্বকীয় ক্ষেত্রের সাহায্যে শিকারের সঠিক অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারে শিয়াল।

এই বিশেষ কৌশল ব্যবহার করে লাফিয়ে সে শিকার পাকড়াও করে।

৬. হাতি
পানির উৎস খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে প্রাণি জগতের বিশেষজ্ঞ হল হাতি। কোথাও বৃষ্টি হলে এরা কয়েকশ মাইল দূর থেকে তারা টের পায়।

বৃষ্টির সময় অল্প ফ্রিকোয়েন্সিতে যে শব্দ হয় তারা সেটা শুনতে পায় যেটা কিনা মানুষের বোঝার সক্ষমতা নেই।

অন্য স্তন্যপায়ীদের মতো হাতি কখনো ঘামে না। শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে হাতি ব্যবহার করে তার লোম এবং বিশাল কান দুটোকে।

শরীরের লোম অন্য প্রাণিদের শরীরকে গরম রাখলেও হাতির ক্ষেত্রে কাজ করে উল্টো। এই লোমগুলো শরীরের ভেতরের গরমকে বাইরে বের করে দেয়।

এছাড়া হাতির বড় বড় কান এদের শরীরকে ঠান্ডা রাখে। হাতির কানে বড় বড় রক্তনালী থাকে তাই কান নাড়ালে রক্তসঞ্চালন বাড়ে ও শরীর শীতল হয়।

এছাড়া এই কান অনেকটা ফ্যানের মতোও কাজ করে।

৭. এপ-জাতীয় প্রাণি
এপ-জাতীয় প্রাণি, যেমন শিম্পাঞ্জি বা গরিলাকে প্রাণিজগতে বুদ্ধিমান প্রাণি হিসেবে ধরা হয়। এদের কোনো কোনো প্রজাতির মস্তিষ্কের মাঝামাঝি সেরিবেলাম নামে যে অংশ রয়েছে, সেটি বানরের তুলনায় ৪৫ ভাগ বড় হয়ে থাকে।

অন্য প্রাণিরা সাধারণত খাবার খেতে বা যেকোনো কাজ করতে একইভাবে দুই হাত ব্যবহার করে। কিন্তু এপ মানুষের মতো দুই হাত দিয়ে দু’রকম কাজ করতে পারে।

বানরের সাথে এপের একটি মূল পার্থক্য হলো, এদের লেজ থাকে না।

সম্প্রতি গবেষকরা দেখেছেন শিম্পাঞ্জি এক হাত দিয়ে বাদাম ধরে আরেক হাত দিয়ে কাঠের গুড়ি দিয়ে সেটি ভাঙার চেষ্টা করছে।

বিষয়টিকে যতোটুকু স্বাভাবিক মনে হচ্ছ মূলত ততোটাই জটিল।

এই যে আমরা এক হাতে বোতল ধরে আরেক হাতে ঢাকনা খুলছি। একহাতে পেরেক ধরে সেটি হাতুড়ি দিয়ে বিধে দিচ্ছে।

এ ধরণের কাজ করতে অনেক শক্তিশালী মস্তিষ্কের প্রয়োজন, যেটা এই প্রাণিদের আছে।

৮. কুমির
পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি চোয়ালের জোর আছে যে প্রাণির সেটি হল কুমির। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কুমিরের চোয়াল দুই হাজার কিলোগ্রাম শক্তিতে তার শিকারকে ঘায়েল করে।

আর একবার চোয়াল খুলে বন্ধ করতে তার সময় লাগে মাত্র ৫০ মিলি সেকেন্ড। অর্থাৎ চোখের পলক ফেলার চেয়ে ছয় গুণ দ্রুত।

অথচ কুমিরের পুরো শরীর বিশেষ করে তার চোয়াল ভীষণ সংবেদনশীল। মানুষের আঙ্গুলের আগার চাইতেও ১০ গুণ বেশি।

এই সংবেদনশীল শরীরের সাহায্যে কুমির স্থির পানিতে ২০ মিটার দূরে তার শিকারের অবস্থান টের পায়।

এছাড়া পানির নিচে কুমির তার কান ও নাকের ছিদ্র বন্ধ রাখতে পারে। পানি থেকে রক্ষায় চোখের ওপরে থাকে আলাদা একটি পর্দা। তাছাড়া কুমিরের পাকস্থলী পাথরও হজম করতে পারে।

৯. ডলফিন
পৃথিবীতে যতো ডলফিন আছে তাদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা নাম বা সিগনেচার শব্দ রয়েছে। সেই শব্দ দিয়ে তারা নিজেদের পরিচয় দেয়।

এছাড়া ডলফিনের সবচেয়ে বড় দক্ষতা হল এরা তুখোড় বুদ্ধিমান। সেইসাথে তারা দলবেঁধে সফলভাবে শিকার করে।

ডলফিনের মস্তিষ্কের সেরিবেলাম এবং সেরেব্রাল কর্টেক্স দুটি অংশ বেশ উন্নত। এ কারণে ডলফিন দূর থেকে শিকারের অনুসন্ধান, পরিকল্পনা, সিদ্ধান্ত গ্রহণের মতো বিভিন্ন জটিল কাজ সম্পন্ন করতে পারে।

ডলফিন মাছ ধরে ধরে শিকার করে না। বরং তারা এক ঝাঁক মাছকে ফাঁদে ফেলে। প্রথমে দূর থেকে তারা মাছের ঝাঁকের অবস্থান শনাক্ত করে, তারপর পানিতে লেজের ঝাপটা দিয়ে কাদা তুলে একটি প্রাচীরের মতো তৈরি করে।

এতে মাছের ঝাঁক কাঁদার ঘোলা পানি দেখে বিভ্রান্ত হয়ে আটকা পড়ে আর লাফাতে থাকে। আর ডলফিন একের পর এক মাছ খেতে থাকে।

১০. শিকারি পাখি
শিকারি পাখিদের নখরযুক্ত পা’কে বলা হয় ট্যালন। পাখিরা তাদের শিকারের প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ এই ট্যালনের সাহায্যেই ধরে থাকে।

শিকার ধরার সময় নখরগুলো অনেকটা মাছ ধারা বড়শির মতো কাজ করে।

ট্যালনের নিচে থাকা প্রেশার সেনসিটিভ প্যাড এবং স্পাইক পিচ্ছিল শিকারকেও শক্তভাবে আঁকড়ে রাখতে পারে। এবং একবার ট্যালনে শিকার বিঁধলে সেটি একদম লক হয়ে যায়।

এতো দূর থেকে শিকারি শনাক্ত করতে তারা কাজে লাগায় তীক্ষ্ণ দৃষ্টি শক্তি। শিকারি পাখিরা একই সময়ে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রকে ফোকাসে করতে পারে।

একইসাথে শক্তি যোগায় তাদের গতি। একটি পেরিগ্রিন ফ্যালকন ঘণ্টায় ৩২০ কিলোমিটার গতিতে শিকারকে ঘায়েল করে। এজন্য আগে তারা ওপরে উঠে শিকার শনাক্ত করে।

তারপর ডানা গুটিয়ে জেট প্লেনের মতো শো করে নিচে নেমে শিকার ধরে তারপর ডানা মেলে নিয়ে যায়।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
বার্লিনে ফিলিস্তিনিপন্থী ক্যাম্প ভেঙে দিয়েছে জার্মান পুলিশ সেভ দ্য চিলড্রেনে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ বনশ্রীতে কিশোরী গৃহকর্মীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার সৌদি আরবে আরব ও ইইউ কূটনীতিকদের গাজা নিয়ে আলোচনা ইউক্রেনকে দ্রুত প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র দিতে যাচ্ছে পেন্টাগন ডিএমপির অভিযানে গ্রেফতার ৩৯ মিয়ানমারের জাতীয় গ্রন্থাগারে বাংলাদেশ দূতাবাসের বই অনুদান ক্ষমতায় যেতে বিএনপি বিদেশী প্রভুদের দাসত্ব করছে : কাদের ক্যান্সারে আক্রান্ত শিশু সুলতান মাহমুদকে বাঁচাতে সাহায্যের আবেদন গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি হামলায় নিহত ১৫ মুজিবনগরে ২ চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষ, আহত ১৩

সকল