২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


চোখের সামনে মৃত্যুর মিছিল, ঠেকানোর উপায় নেই

নিউজিল্যান্ডের সৈকতে মৃত্যুর মিছিল - বিবিসি

''এটা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ রাত,'' এভাবেই লিজ কার্লসন বর্ণনা করছিলেন, যখন তিনি দেখতে পান নিউজিল্যান্ডের একটি প্রত্যন্ত সৈকতে ১৪৫টি তিমি আটকে পড়ে মারা যেতে বসেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের এই ভ্রমণ বিষয়ক ব্লগার একজন বন্ধুর সাথে নিউজিল্যান্ডের রাকিউরা অথবা স্টুয়ার্ট দ্বীপে ট্রেকিং করছিলেন।

লম্বা যে সৈকতটি হওয়ার কথা অনেকটা মরুভূমির মতো, সেখানেই তারা দেখতে পেলেন অনেকগুলো জীবনের বেঁচে থাকার কঠিন লড়াই।

''এটা ছিল হতবাক হয়ে যাওয়ার মতো একটি মুহূর্ত,'' তিনি বিবিসিকে বলছেন, ''আমরা সন্ধ্যার দিকে সৈকতে এসে দেখতে পেলাম, অগভীর পানিতে কিছু যেন আটকে আছে।''

''যখন আমরা বুঝতে পারলাম এগুলো তিমি, তখন সবকিছু ফেলে রেখে তাদের কাছে ছুটে গেলাম।''

তিনি এর আগে বুনো অবস্থায় তিমি দেখতে পেয়েছেন। "তবে এরকম কিছুর জন্য কখনো প্রস্তুত ছিলাম না। এটা ছিল ভয়াবহ একটা ব্যাপার।''

এটা একটি ছিল ভয়াবহ ব্যাপার।

এই দু'জন তাৎক্ষণিকভাবে তিমিগুলোকে খানিকটা সহায়তার চেষ্টা করেন। তারা সেগুলোকে ঠেলে গভীর পানিতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।

''কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি বোঝা গেল, এখানে আপনার আসলে করার কিছু নেই।"

তিনি বলছিলেন, "এগুলো বিশাল আকারের প্রাণী। তারা একজন আরেকজনের উদ্দেশ্যে কাঁদছিল, কথা বলছিল - পরস্পরকে ছোঁয়ার চেষ্টা করছিল। কিন্তু তাদের সাহায্য করার কোনো উপায় ছিল না।''

যখন এই তিমিগুলোকে কোনোভাবেই তারা সাহায্য করতে পারছিলেন না, তখন অনেকটা বেপরোয়াভাবে তারা সাহায্যের অন্য কোনো উপায় খুঁজতে শুরু করেন।

নিউজিল্যান্ডের দক্ষিণ উপকূলে স্টুয়ার্ট দ্বীপটি খুবই প্রত্যন্ত একটি দ্বীপ, তার মধ্যে যে সৈকতে তারা হাঁটছিলেন, সেটি আরো প্রত্যন্ত।

এই যুগল গত দুইদিনে এখানে আর কোনো পথচারীকে দেখতে পাননি। কিন্তু তারা জানতেন, প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরত্বে একটি ট্রেকার্স হাট আছে, যেখানে হয়তো কয়েকজন সংরক্ষণ কর্মীকে পাওয়া যেতে পারে।

যদিও মোবাইল ফোনের কোনো নেটওয়ার্ক নেই, তবে তাদের আশা, সেখানে হয়তো একটি রেডিও থাকতে পারে। লিজের বন্ধু, জুলিয়ান রিপোল সাহায্যের জন্য ওই হাটের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন।

'আমার হৃদয় পুরোপুরি ভেঙ্গে গেলো'

সৈকতে মৃত্যুর মুখে থাকা অনেক তিমির সামনে তখন একা লিজ কার্লসন।

''আমি কখনোই তাদের কান্না ভুলবো না, যখন আমি তাদের সাথে, তাদের পাশে পানিতে বসে ছিলাম, তখন তারা যেভাবে আমাকে দেখছিল, যেভাবে বেপরোয়া হয়ে তারা সাঁতার কাটার চেষ্টা করছিল অথচ তাদের ওজন তাদেরকে বালুর আরো গভীরে গেঁথে ফেলছিল,'' ইন্সটাগ্রামে তিনি লিখেছেন।

''আমার হৃদয় পুরোপুরি ভেঙ্গে গিয়েছিল।''

তখন ৩০ বছরের লিজ একটি শিশু তিমি দেখতে পান এবং সেটিকে ঠেলে গভীর পানিতে পাঠানোর চেষ্টা করেন। বড় তিমিগুলো নড়ানো একেবারেই সম্ভব না হলেও, ছোট এই তিমিটাকে তিনি গভীর পানিতে পাঠাতে সক্ষম হন।

''শিশুটিকে গভীর পানিতে পাঠানোর জন্য আমার সর্বশক্তি খাটাতে হলো। কিন্তু এরপরেও সে চলে না গিয়ে সৈকতের কাছাকাছি সাঁতার কাটতে লাগলো,'' তিনি বিবিসিকে বলছেন।

''জুলিয়ান যাওয়ার পর, আমি শুধুমাত্র শিশু তিমিটির সাথে সৈকতে বসে রইলাম।''

''আপনি এই প্রাণীগুলোর ভয়ের ব্যাপারটি অনুভব করতে পারবেন। তারা আপনার দিকে তাকিয়ে আছে, আপনাকে দেখছে, তাদের চোখগুলো অনেকটা মানুষের চোখের মতো।''

পরের কয়েক ঘণ্টায় অপেক্ষা করা ছাড়া তাদের আর কিছু করার ছিল না।

''আমি জানতাম, তাদের মৃত্যু ঠেকানোর হয়তো কোনো উপায় নেই,'' ইন্সটাগ্রামে লিখেছেন লিজ।, ''বালুতে আমার গোড়ালি ডুবিয়ে হতাশায় ডুবে ছিলাম, কাঁদছিলাম, আর আমার পেছনে অসংখ্য তিমি মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল।''

'তাদের চোখে অশ্রু'
কয়েক ঘণ্টা পরে জুলিয়ান একদল রেঞ্জারকে সাথে নিয়ে ফিরে এলো। তারা পুরো পরিস্থিতিটা পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম হলেন, কিন্তু রাত নেমে আসার কারণে তাদের তখন কিছু করার ছিল না।

তখনো বেশিরভাগ তিমি সাগরের ঢেউয়ের মধ্যে ছিল এবং স্রোতও বাড়ছিল। তাই লিজ এবং জুলিয়ান যখন তাদের ক্যাম্প সাইটে ফিরে এলেন, তখন তাদের মধ্যে আশা কাজ করছিল যে, হয়তো কয়েকটি তিমি সাগরে ফিরে যেতে সক্ষম হবে।

কিন্তু পরদিন সকালে তারা এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হলেন, যা আরো ভয়াবহ।

তখন স্রোত কমে গেছে এবং তিমিগুলো শুকনো বালুর ওপর আটকে রয়েছে। কয়েকটি এর মধ্যেই মারা গেছে এবং অন্যগুলো সৈকতে সূর্যের আলোয় কষ্ট পাচ্ছে।

''তাদের চোখে ছিল অশ্রু'' লিজ বলছেন, ''দেখে মনে হচ্ছিল, তারা কাঁদছে এবং তারা দুঃখের শব্দ করছিল।''

এটা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল যে, একটি তিমিকেও হয়তো বাঁচানো যাবে না।

একটি তিমিকে সরাতে কমপক্ষে পাঁচজন ব্যক্তির সহায়তা দরকার হয়। কিন্তু দ্বীপ এবং সৈকতটি এতোটাই প্রত্যন্ত যে, সময়মত কোনো সাহায্য পাওয়ার আশা নেই। পুরো দ্বীপটিতে মাত্র কয়েক শ' ব্যক্তি বসবাস করে।

সুতরাং রেঞ্জারদের এমন সিদ্ধান্ত নিতে হলো, যাকে তারা বলেন 'হৃদয় ভাঙ্গা সিদ্ধান্ত'।

তখন একমাত্র বিকল্প হলো, এই তিমিগুলোকে দীর্ঘমেয়াদি আর কষ্টকর মৃত্যুর পথে ফেলে যাওয়া।

নিউজিল্যান্ডের সংরক্ষণ দফতর বলছে, এর মানে হল তারা যেখানে আছে, সেখানে ফেলে যাওয়া এবং প্রকৃতিতে তার নিয়ম মতো কাজ করতে দেয়া।

সংস্থাটি বলছে, এটা পরিষ্কার নয়, তিমিগুলো কেন এভাবে সৈকতে আটকে পড়েছিল। কোন একটি তিমির সৈকতে আটকে পড়া নিউজিল্যান্ডে নতুন নয়, কিন্তু এভাবে দলবেঁধে সৈকতে আটকে পড়ার ঘটনা বেশ দুর্লভ।

এটা হয়তো বিভ্রান্তি হয়ে অগভীর পানিতে চলে এসেছিল এবং সৈকতে আটকে পড়ে।

পাইলট তিমি সামাজিকতার কারণে বেশ পরিচিত। সুতরাং এমন হতে পারে, যখন একটি তিমি দিক ভুল করে সৈকতে এসে আটকে পড়ে, অন্য তিমিগুলো হয়তো তাদের উদ্ধার করতে এসে নিজেরাও বিপদে পড়েছিল।


আরো সংবাদ



premium cement
বিশিষ্ট মুহাদ্দিস আল্লামা জুলকারনাইনের ইন্তেকাল ওবায়দুল কাদের সম্পর্কে ‘মিথ্যাচার’ : যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিবের বিরুদ্ধে মামলা উপজেলা নির্বাচন : কেন্দ্রে থাকবে সর্বোচ্চ পুলিশ-আনসার ফেসবুকে ভিডিও দিয়ে মাসে লাখ টাকা আয় মুন্নার নোয়াখালীতে পানিতে ডুবে দুই ভাইয়ের মৃত্যু বেনাপোলে সামুদ্রিক মাছের ট্রাকে ৪৭০ কেজি চিংড়ি আটক তাপমাত্রা ছাড়িয়েছে ৪৩ ডিগ্রি, লোডশেডিং রেকর্ড ৩২০০ মেগাওয়াট যথাযথ মর্যাদায় আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস পালন করুন : শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিআরটিএ অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ লঙ্কান প্রিমিয়ার লিগে খেলতে চান তামিম-মুশফিক বরিশালে ২ শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে ছাত্রলীগের মারধর

সকল