২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ফিলিস্তিনে শান্তি প্রতিষ্ঠার সুযোগ

ফিলিস্তিনে শান্তি প্রতিষ্ঠার সুযোগ - ছবি : সংগৃহীত

ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের (পিএ) প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস গত সপ্তাহে ঘোষণা করেছেন, ফিলিস্তিন আইন পরিষদ (পিএলসি) নির্বাচন আগামী ২২ মে এবং প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ৩১ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে। ইয়াসির আরাফাত ২০০৪ সালে মৃত্যুবরণ করার পর মাহমুদ আব্বাসকে পিএলও চেয়ারম্যান হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় এবং আব্বাস ২০০৫ সালে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। কিন্তু আব্বাস ফিলিস্তিনের অবিসংবাদিত নেতা আরাফাত নন এবং তিনি দ্রুত গাজা ভূখণ্ড থেকে হামাসের কাছ থেকে রাজনৈতিক হুমকির মুখোমুখি হলেন। শান্তিপ্রক্রিয়ার ব্যর্থতা এবং ইসরাইলের শান্তিচুক্তি-বিরোধী তৎপরতা জোরদার হওয়ার ফলে ডানপন্থী ইসরাইলি নেতা শ্যারন এবং নেতানিয়াহুর উগ্র ও অপরিণামদর্শী তৎপরতার কারণে ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের উত্থান ঘটে।

মাহমুদ আব্বাসের ফাতাহ পার্টি ২০০৬ সালে অনুষ্ঠিত ফিলিস্তিন আইন পরিষদ তথা পার্লামেন্ট নির্বাচনে ১৩২ আসনের মধ্যে ৪৫টি এবং হামাস ৭৪টি আসন লাভ করে। ১৫ বছর পর এবার হোয়াইট হাউজে নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আসার পর আব্বাস আশা করছেন, নতুন নির্বাচনের মাধ্যমে হয়তো ফিলিস্তিনিদের অবস্থান ও মর্যাদা আরো সুদৃঢ় ও সমুন্নত হবে।

সব মানুষই কপট ব্যক্তিস্বার্থ প্রণোদিত এই ধারণায় বিশ্বাসী বলে আপনি ফিলিস্তিনিদেরকে দোষারোপ করতে পারেন না অথবা এখন নির্বাচনকে ব্যর্থতার অপর একটি অনুশীলন হিসেবে দেখতে পারেন না। ১৯৯৩ সালে রাষ্ট্র হিসেবে ‘ইসরাইলের অস্তিত্ব’ তথা ইসরাইলি রাষ্ট্রের অবস্থানের প্রতি স্বীকৃতি দানের পর শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও ফিলিস্তিনিরা একটি রাষ্ট্র্রের পক্ষ থেকে কেবল বর্বরতা ও নৃশংস নির্যাতনই দেখে এসেছে। ফলে তারাও আরো কট্টর পন্থা এবং অনমনীয় অবস্থান গ্রহণ করেছে। কিন্তু নির্বাচনের মাধ্যমে তারা নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে ফিলিস্তিনিরা যে শান্তির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, সে ব্যাপারে একটি শক্তিশালী বার্তা দিতে পারে। তারা বাইডেনের প্রতি ইসরাইলকে শান্তির জন্যে চাপ প্রয়োগের ব্যাপারেও ক্ষমতা দিতে পারে যেটা করতে ডোনাল্ড ট্রাম্প অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। ট্রাম্প ফিলিস্তিনিদের ঠেলে দিয়েছিলেন তার ইহুদি জামাতা জেরাড কুশনারের দিকে। কুশনার শান্তির ব্যাপারে অস্পষ্ট ও অনিশ্চিত প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন এবং ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের ধারণাকে প্রকৃতপক্ষে নস্যাৎ করেছেন। তিনি ইসরাইলের কাছ থেকে ফিলিস্তিনিদের জন্য সত্যিকারভাবে কোনো সুবিধা আদায় করার চেষ্টাও করেননি।

ফিলিস্তিনিদের সত্যিকারভাবে একমাত্র আশা, সৌদি আরবের কাছ থেকে তারা সমর্থন পাবে। ফিলিস্তিনিরা আশা করে, ইসরাইলের সাথে সৌদি আরবের কোনো চুক্তি হলে তাতে তেলআবিবের ফিলিস্তিনে শান্তি প্রতিষ্ঠার বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে। ফিলিস্তিনিদের পক্ষে সৌদি সমর্থনের কারণে মাহমুদ আব্বাস, ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ এবং শান্তিপ্রক্রিয়া পুনরুজ্জীবনের ব্যাপারে ফিলিস্তিনিরা আশাবাদী।

নির্বাচনকে ফিলিস্তিনিদের সমস্যার চূড়ান্ত একটি জবাব হিসেবে দেখা উচিত হবে না। এর চাইতে বরং পুনরায় দক্ষিণাঞ্চলে এবং ইসরাইলের শান্তিবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে অধিকার আদায়ে কার্যকর সংগ্রাম গড়ে তোলার একটি নতুন দরজা খুলে যাওয়ার সুযোগ হিসেবে দেখা প্রয়োজন। প্রশ্ন হলো, প্রতিদ্বন্দ্বী ফিলিস্তিনি উপদলগুলো ঐক্যবদ্ধ হতে পারবে কি না। নির্বাচনী ম্যান্ডেটের মাধ্যমেই কেবল এ ধরনের একটি পথ খুলে যেতে পারে।

সুতরাং ফিলিস্তিনি ভোটাররা কী করবেন? ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের (পিএ) প্রতিনিধিদের মাধ্যমে শান্তির জন্য আলোচনায় ফিরে যাওয়া অথবা অব্যাহত বিরোধিতা ও প্রতিরোধ সৃষ্টি করা: এ দুটো পথ রয়েছে। ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস ইসরাইলি নির্যাতন ও জবরদখলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রাম চালিয়ে এসেছে। কিন্তু উভয় কৌশলই ব্যর্থ হয়েছে প্রধানত ফিলিস্তিনিদের নিজেদের মধ্যকার বিরোধ ও বিভাজনের কারণে। ইসরাইলের অব্যাহত সহিংসতা ও আগ্রাসনের কারণে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে সম্ভব হয়নি ইসরাইলের সাথে সত্যিকারের শান্তি অর্জনের জন্য আশাবাদী হওয়া। এখন নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট শান্তির উদ্যোগ নিলে হয়তো আলোচনায় ফিরে আসার চিন্তা তারা করতে পারে। বাইডেন আরব ও মুসলিম আমেরিকানদের ব্যাপারে বিশেষভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাই তার পূর্বসূরিরা যেখানে ব্যর্থ হয়েছেন, সেখানে তিনি ইসরাইলকে একটি স্থায়ী শান্তিচুক্তির লক্ষ্যে চাপ দিয়ে হয়তো প্রয়োজনীয় ভূখণ্ড ছেড়ে দিতে বাধ্য করার ব্যাপারে এগিয়ে আসতে পারেন।

সমস্যা হলো, আরব ও মুসলিম আমেরিকানদের জন্য বাইডেন তার শুভেচ্ছার নিদের্শনের বাইরে গিয়ে এবং ট্রাম্পের কথিত ‘মুসলিমদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা’ প্রত্যাহার করার প্রতিশ্রুতি কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পারবেন, তা ভবিষ্যৎই বলে দেবে। কারণ ওবামা তার ঘাড়ে যে বোঝা রেখে গেছেন, বাইডেনকে তা বহন করতে হবে।

ওবামা বহু তৃপ্তিদায়ক ও ভালো ভালো কথা বলে গেলেও ফিলিস্তিনিদের শান্তি, এমনকি আরব বিশ্বের জন্য তাৎর্যপূর্ণ বা উল্লেখযোগ্য কোনো কিছু করতে পারেননি। ফিলিস্তিনিদের জন্য শান্তির পরিবর্তে তার দু’মেয়াদে প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময়টি বরং গাজায় তিনটি ইসরাইলি যুদ্ধের নিদর্শন হয়ে থাকবে।
ফিলিস্তিনিদেরকে নিজেদের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা বাছাই করে নিতে হবে। তারা কি ইসরাইলি বর্ণবাদী শক্তির অধীনে বসবাস করবে এবং সামরিক সহিংসতা দ্বারা নির্যাতিত হতে থাকবে? তারা কি হামাসকে ভোট দেবে, অথবা নাকি সুখের আশায় আব্বাসের দলের প্রার্থীকে ভোট দেবে? শান্তির জন্য কোনো গ্যারান্টি নেই। কিন্তু এটা স্পষ্ট, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সাথে ফিলিস্তিনিদের শান্তির একটি সুযোগ তৈরি হতে পারে। আগে অবশ্য বাইডেন নিজেকে ‘ইহুদিবাদী’ বলেই দাবি করতেন এবং ইসরাইলের প্রতি ছিল তার দৃঢ় সমর্থন। তারা সাধারণত বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী মেনাচেম বেগিনই ১৯৭৯ সালে মিসরের সাথে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের মতো সাহস ও শক্তি দেখাতে পেরেছিলেন। নির্বাচন হলে অন্ততপক্ষে গাজা এবং পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনিরা শান্তির পথ বেছে নিতে পারবে। মাহমুদ আব্বাস পূর্ব জেরুসালেমে বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদেরকেও ভোটাধিকার দেয়ার দাবি জানিয়েছেন।

‘আরব নিউজ’ থেকে ভাষান্তর : মুহাম্মদ খায়রুল বাশার
লেখক : শিকাগো সিটি হল-এর পুরস্কারপ্রাপ্ত
রিপোর্টার ও কলামিস্ট


আরো সংবাদ



premium cement
‘মুক্ত সাংবাদিকতা চরম সঙ্কটে’ ‘রাফা হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরাইলি সেনারা’ ৪৬তম বিএসএস প্রিলি পরীক্ষা : শুরুতেই স্বপ্নভঙ্গ ৮১ শিক্ষার্থীর মরুর উষ্ণতায় ক্ষতির মুখে কৃষি ছেলেদের কারণে বিপাকে মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির দুই বিভাগে বৃষ্টি হতে পারে ফ্রান্স, ব্রাজিল ও প্যারাগুয়ে সফরে যাচ্ছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ড সফরকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে মাইলফলক বললেন প্রধানমন্ত্রী লালমনিরহাটে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী যুবক নিহত এখনো শেষ হয়নি বিতর্কিত আউটের রেশ, ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ মুশফিকের ‘ফ্রি ভিসার গল্প’ আর শূন্য হাতে ফেরা লাখো শ্রমিক

সকল