৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


যুদ্ধবিরতির প্রধান দাবিতে অটল হামাস

নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ৩৩,৮০০ ছুঁই ছুঁই
হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নিজ বাড়িতে ফিরে যাওয়ার জন্য গাজার উত্তর দিকে উপকূলীয় সড়কে সমবেত হয়েছেন। কয়েকজন গাজা শহরের দিকে একটি বন্ধ চেকপয়েন্ট অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছে এমন খবরে তারাও সেখানে ছুটছেন। যদিও ইসরাইল এটি খোলার বিষয়টি অস্বীকার করেছে : ইন্টারনেট -


গাজায় ইসরাইলি যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। শনিবার এক বিবৃতিতে দলটি জানিয়েছে, হামাস তার দাবিতে অটল রয়েছে। গাজায় ইসরাইলি আক্রমণ বন্ধ ও সমগ্র উপত্যকা থেকে ইসরাইলি বাহিনী পুরোপুরি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে তারা। এটি তার জনগণের জাতীয় দাবি বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া গাজার বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের তাদের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেয়ার দাবিও করছে তারা।

গত সোমবার ইসরাইলের পাঠানো প্রস্তাবের প্রতিক্রিয়া মিসর ও কাতারের মধ্যস্থতাকারীদের কাছে হস্তান্তর করেছে হামাস। তারা জানিয়েছে, তারা বন্দী বিনিময়ের মাধ্যমে ইসরাইলি বন্দীদের মুক্তি দিতে প্রস্তুত। তবে তার আগে ইসরাইলকে হামাসের দাবি মেনে নিতে হবে। হামাসের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে ইসরাইলের আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে আগেই ইসরাইলি বাহিনী জানিয়েছিল, হামাসকে ধ্বংস না করা পর্যন্ত যুদ্ধ বন্ধ করবে না তারা।
ইসরাইলি হামলায় হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়ার পরিবারের কয়েক সদস্য নিহত হওয়ার কয়েক দিন পর হামাসের পক্ষ থেকে এমন বিবৃতি দেয়া হলো। পরিবারের সদস্যদের হারানোর পরদিন হানিয়াহ জানিয়েছিল, তার দল এখনো একটা কার্যকর যুদ্ধবিরতি চায়। তবে ইসরাইল অনেক দেরি করে ফেলেছে এবং হামাসের দাবিগুলো বারবার এড়িয়ে গেছে। যুদ্ধ সপ্তম মাসে প্রবেশ করেছে। সেই সাথে গাজায় যুদ্ধবিরতির বিশ্বব্যাপী আহ্বান বেড়েছে। তবে আলোচনায় অগ্রগতি হয়নি।

নিহতের সংখ্যা ৩৩,৮০০ :
গত অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের হামলা এখনো চলছে। ইতিমধ্যে অঞ্চলটিতে নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ৩৩ হাজার ৮০০ ছুঁই ছুঁই করছে। ওই অঞ্চলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে। মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজায় অন্তত ৬৮ জন নিহত এবং ৯৪ জন আহত হয়েছে। এতে ৭ অক্টোবর থেকে নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা বেড়ে পৌঁছেছে অন্তত ৩৩ হাজার ৭৯৭ জনে। পাশাপাশি এ সময়ে আহত হয়েছে ৭৬ হাজার ৪৬৫ জন। মন্ত্রণালয় আরো বলেছে, অনেক মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় আটকা পড়ে আছে। কারণ উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছতে পারছেন না। এদিকে জাতিসঙ্ঘের মতে, গাজার ওপর ইসরাইলি যুদ্ধের কারণে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধের তীব্র সঙ্কটের মধ্যে ভূখণ্ডের ৮৫ শতাংশ বাসিন্দা অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরাইল গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত। জানুয়ারিতে একটি অন্তর্বর্তীকালীন রায়ে তেল আবিবকে গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে এবং গাজার বেসামরিক নাগরিকদের মানবিক সহায়তা প্রদানের নিশ্চয়তা দেয়ার ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। তবে হামলা অব্যাহত রয়েছে এবং মানবিক বিপর্যয়ের জন্য সহায়তা বিতরণ অত্যন্ত অপর্যাপ্ত রয়ে গেছে।

সরকারের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে ৪৫ হাজার ইসরাইলির বিক্ষোভ
এদিকে হিন্দুস্থান টাইমস জানায়, প্রায় ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে গাজায় হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে ইসরাইল। সেই আগ্রাসনের মধ্যেই ইরানের সাথে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি সিরিয়ার রাজধানীতে ইরানি কনস্যুলেটে হামলার জবাবে রোববার গভীর রাতে সরাসরি ইসরাইলের ওপর হামলা করেছে তেহরান। এ দিকে ইসরাইল থেকে গাজা ভূখণ্ডে যাদের হামাস ধরে নিয়ে গিয়েছিল, তাদের সবাইকে এখনো ফেরানো যায়নি। এমন পরিস্থিতিতে নিজেদের সরকার ও প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধেই রাজপথে নামলেন কয়েক হাজার ইসরাইলি।

দ্য টাইমস অব ইসরাইলের রিপোর্ট অনুযায়ী, তেল অবিব, জেরুসালেমসহ ইসরাইলের একাধিক শহরে প্রায় ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ পথে নেমেছেন তাদের সরকারের বিরুদ্ধে। গাজা ভূখণ্ডে এখনো আটকে থাকা ইসরাইলিদের মুক্তি এবং নতুন নির্বাচনের দাবিতে সরব হয়েছেন প্রতিবাদীরা। ইসরাইলের চ্যানেল ১৩-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, তেল আবিবেই ৪৫ হাজার মানুষ প্রতিবাদে রাজপথে নেমেছিলেন। এ দিকে বিক্ষোভকারীদের দাবি, এক লাখ মানুষ সরকারের বিরুদ্ধে সরব হতে তেল আবিবের পথে নেমেছিলেন। দাবি করা হচ্ছে, এখনো ১৩৩ জন ইসরাইলি বন্দী আটকে আছে গাজায়। উল্লেখ্য, প্রতি সপ্তাহেই সরকারবিরোধী এই ধরনের প্রতিবাদ মিছিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে তেল আবিবসহ একাধিক জায়গায়। এই যুদ্ধে গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর হাতে প্রতিদিন শত শত সাধারণ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন।


আরো সংবাদ



premium cement