২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কৃষি আইন সংশোধনে রাজি মোদি সরকার

ভারতের কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রীর ঘোষণা
-

ভারতে চলমান কৃষক আন্দোলনের কারণে বিদ্যমান কৃষি আইনে সংশোধনী আনার ঘোষণা দিয়েছে নরেন্দ্র মোদির সরকার। নতুন তিন কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে কৃষক বিক্ষোভ শততম দিনে পৌঁছানোর পর শনিবার এই ঘোষণা দেন ভারতের কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমার। তিনি বলেন, চলমান কৃষক বিক্ষোভকে সম্মান করে নতুন তিন কৃষি আইনে সংশোধনী আনতে প্রস্তুত মোদি সরকার। একইসাথে কৃষকদের নিয়ে রাজনীতি করার কারণে বিরোধীদের সমালোচনাও করেন তিনি।
পঞ্চম ‘ন্যাশনাল কনভেনশন অব অ্যাগ্রেভিশন’ নামক সম্মেলনে নরেন্দ্র সিং তোমার বলেন, বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে সরকার কৃষকদের সাথে ১১ দফা বৈঠকে বসেছে। বৈঠকে কৃষি আইনে সংশোধনী আনতে তাদের প্রস্তাবও দেয়া হয়েছে। ২০২০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর দেশের কৃষি ব্যবস্থার সংস্কারে ভারতের পার্লামেন্টে তিনটি বিল উত্থাপন করে বিজেপি সরকার। সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে দেশটির প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষরের মাধ্যমে ওই বিল তিনটি আইনে পরিণত হয়। নভেম্বর থেকে এই আইনগুলো বাতিলের দাবিতে দিল্লির সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর কয়েক লাখ কৃষক।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যদিও বলেছেন, দেশের বিস্তৃত ও মান্ধাতার আমলের কৃষি ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো ও আধুনিকায়নই নতুন তিন কৃষি আইনের উদ্দেশ্য, কিন্তু তার এই বক্তব্যে আস্থা রাখতে পারছেন না কৃষকরা। বিলগুলোতে কৃষিপণ্যের মজুদদারির ওপর সীমা তুলে নেয়া, কোম্পানি ও বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে চুক্তিভিত্তিক চাষ এবং উৎপাদিত কৃষিপণ্যের সরকার নির্ধারিত ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (মিনিমাম সাপোর্ট প্রাইস, এমএসপি) তুলে নেয়ার প্রস্তাব করা হয়।
শনিবার ভারতীয় কৃষিমন্ত্রী দাবি করেন, কৃষক ও কৃষি খাতে উন্নয়নের জন্যই এই আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। এই আইনের অধীনে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসল যাকে ইচ্ছা এবং যে দামে ইচ্ছা বিক্রি করতে পারবেন। তিনি বলেন, কেউ কৃষকদের আটকাতে পারবে না। এর ফলে কৃষকরা আগের তুলনায় আরো বেশি সচ্ছল হবেন। এর প্রভাব কৃষিক্ষেত্রে পড়বে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এ ছাড়া একটানা ১০০ দিনেরও বেশি সময় ধরে আন্দোলনে করে কোনো লাভ হচ্ছে না দাবি করে তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রে বিরোধিতার জায়গা আছে। কেউ দ্বিমত পোষণ করতেই পারে। কিন্তু এতে যেন দেশের কোনো ক্ষতি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এই আন্দোলনে কৃষকদের কী লাভ হচ্ছে- সে বিষয়ে কেউ কোনো কথা বলছে না।’
শুরু থেকে ভারতের কৃষক আন্দোলন শান্তিপূর্ণভাবে পরিচালিত হলেও ২৬ জানুয়ারি ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন কৃষকদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি ট্রাক্টর মিছিলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষ হয় আন্দোলনকারীদের। ওই সঙ্ঘাতে এক কৃষক নিহতও হন। তারপর থেকে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারও কঠোর অবস্থানে যায়। কৃষক আন্দোলন সমর্থনের অভিযোগে এ পর্যন্ত বেশ কয়েকজন সাংবাদিক, পরিবেশকর্মী ও মানবাধিকার কর্মীকে আটক করেছে সরকার। ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে দিল্লি ও তার আশপাশের তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার নিচে নেমে গিয়েছিল। প্রচণ্ড ওই ঠাণ্ডার মধ্যেও কৃষকরা সড়কে খোলা আকাশের নিচে দিন-রাত অবস্থান করে তাদের আন্দোলন চালিয়ে গেছেন।


আরো সংবাদ



premium cement