০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`


উন্নয়নে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার আহ্বান জাতিসঙ্ঘের

জাতিসঙ্ঘের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
-

জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বিশ্বব্যাপী শাসনব্যবস্থার উন্নয়নে এক সাথে কাজ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। জাতিসঙ্ঘের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গত সোমবার সংস্থার সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে মহাসচিব বলেন, ‘জাতিসঙ্ঘের স্তম্ভ দেশের সার্বভৌম ক্ষমতা সবার উন্নতি সাধনের চেষ্টায় অভিন্ন মূল্যবোধের ভিত্তি আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার এবং দায়িত্ব ভাগাভাগির মাধ্যমে হাতে হাত রেখে এগিয়ে চলে।’
মহাসচিব বলেন, ‘কেউ বিশ্ব সরকারব্যবস্থা চাই না। তবে আমরা বিশ্ব শাসনব্যবস্থার উন্নয়নে অবশ্যই একত্রে কাজ করব।’ সংস্থার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গুতেরেস বলেন, ‘জাতিসঙ্ঘ হচ্ছে একটি উন্নত বিশ্ব গড়ে তোলার বাতিঘর। এর আদর্শ ভাবনা হচ্ছে বিশ্বে শান্তি, ন্যায়বিচার, সমতা ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা।’ তিনি বলেন, ‘অবর্ণনীয় অনেক ভোগান্তির পর এই দিন এ সংস্থা গড়ে ওঠায় আমরা আজ তা পালন করছি।’ দু’টি বিশ্বযুদ্ধ, লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু এবং ভয়ঙ্কর হত্যাযজ্ঞের প্রেক্ষাপটে বিশ্ব নেতাদের সহযোগিতা ও আইনের শাসন প্রতিপালনের প্রতিশ্রুতির মধ্য দিয়ে এ আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়।’
জাতিসঙ্ঘের বিভিন্ন অর্জনের কথা তুলে ধরে বক্তব্য দেয়ার সময় ইউএন মহাসচিব বলেন, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ করায় এসব অর্জিত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘অনেক আশঙ্কা থাকলেও তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ এড়ানো গেছে। আধুনিক ইতিহাসের বহু বছর কেটে গেলেও আর কখনো আমরা বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশগুলোকে সামরিক লড়াইয়ে লিপ্ত হতে দেখিনি। আর এটি জাতিসঙ্ঘ প্রতিষ্ঠার সবচেয়ে বড় অর্জন। এ অর্জন নিয়ে সদস্য রাষ্ট্রগুলো গর্ব করতে পারে।
মহাসচিব বলেন, জাতিসঙ্ঘের ঐতিহাসিক আরো অর্জনের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন শান্তিচুক্তি ও শান্তিরক্ষা, উপনিবেশ শাসনের অবসান, মানবাধিকার রক্ষা, রোগ নির্মূল, দারিদ্র্য দূরীকরণ, প্রগতিশীল আন্তর্জাতিক আইনের উন্নয়ন, পরিবেশ ও আমাদের এই বিশ্ব রক্ষায় যুগান্তকারী বিভিন্ন চুক্তি।’ তিনি বলেন, অতি সম্প্রতি ২১ শতকের ভিশন নিয়ে সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস এবং প্যারিস অ্যাগ্রিমেন্ট অন ক্লাইমেট চেঞ্জের ওপর সর্বসম্মত চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে।
ভাষণ না দিয়ে সমালোচনার মুখে ট্রাম্প
এ দিকে এএফপি ও রয়টার্স জানায়, জাতিসঙ্ঘের ৭৫তম পূর্তির এই অনুষ্ঠানে ভাষণ না দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বজুড়ে শান্তি বজায় রাখতে জন্ম হয়েছিল জাতিসঙ্ঘের। সংস্থাটির ৭৫ বছর পূর্তিতে সোমবার একত্রিত হয়েছিলেন বিশ্ব নেতৃবৃন্দ। প্রতিষ্ঠালগ্নের মতো নতুন আরেকটি পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হচ্ছে জাতিসঙ্ঘকে। করোনাভাইরাসের মতো মহামারীর ভয়াবহতা ও অর্থনৈতিক বিপর্যস্ততার মধ্যে আয়োজন করা হয়েছিল এ ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের। এদিন প্রথম বক্তা হিসেবে নাম ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। কিন্তু ট্রাম্পের বদলে যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে বক্তব্য দিয়েছেন জাতিসঙ্ঘে দেশটির অ্যাকটিং ডেপুটি রিপ্রেজেনটেটিভ চেরিথ নরম্যান চালেট।
তিনি বলেছেন, ‘জাতিসঙ্ঘ অনেক ক্ষেত্রেই সফল হয়েছে। আবার এই সংস্থা নিয়ে উদ্বেগের কারণও আছে। অনেক দিন ধরে জাতিসঙ্ঘে সংস্কার হচ্ছে না। সেখানে স্বচ্ছতা নেই।’ এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ, চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংসহ অধিকাংশ রাষ্ট্রনেতা ভাষণ দিয়েছেন। কিন্তু ট্রাম্প এই অনুষ্ঠানকে গুরুত্ব দিলেন না। ফলে অনেকেই নাম উল্লেখ না করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবল সমালোচনা করেছে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং বলেন, ‘বিশ্ব পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণ করার অধিকার কোনো দেশের নেই। একতরফা আধিপত্যের সময় আর নেই। সেই সুযোগও কাউকে দেয়া উচিত হবে না।’ জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মারকেল বলেছেন, ‘জাতিসঙ্ঘের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে আরো ঐক্য থাকা দরকার। কেউ যদি মনে করে, এখানে তাদের স্বার্থ দেখা হবে, তা হলে তারা ভুল করছে। আমরা আমাদের ভালো-মন্দ ভাগ করে নেবো। আমরা সবার মিলে একটাই পৃথিবী।’ আর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ মনে করেন, ‘এই সংগঠনের ভিত দুর্বল হচ্ছে। যারা এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা, তারাই একে আঘাত করছে।’ এর মধ্যে দিয়ে নাম না ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও ট্রাম্পেরই সমালোচনা করেছেন বিশ্ব নেতারা।

 


আরো সংবাদ



premium cement