আফগান সরকার ও তালেবানের মধ্যে বন্দিবিনিময় শুরু হচ্ছে
করোনা মহামারীর মধ্যেই প্রক্রিয়া তদারকি করতে তালেবানের ৩ সদস্যের দল কাবুলে- রয়টার্স ও ডন
- ০২ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০
আস্থা বিনির্মাণের অংশ হিসেবে চলতি সপ্তাহে কিছু তালেবান বন্দীকে মুক্তি দিতে যাচ্ছে আফগানিস্তান। প্রায় দুই দশকের যুদ্ধ শেষ করতে যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানের মধ্যে স্বাক্ষরিত শান্তি চুক্তির সাফল্যের জন্য বন্দীদের মুক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গতকাল বুধবার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ কথা জানান।
ইতোমধ্যেই তিন সদস্যের তালেবান দল গত মঙ্গলবার বন্দিবিনিময় প্রক্রিয়া শুরু করতে কাবুল পৌঁছেছেন এবং করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধে দেশব্যাপী লকডাউন কার্যকর থাকা সত্ত্বেও আফগান কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন।
তালেবান দলের আগমনের বিষয়ে আফগান সরকার তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি। গত সোমবার আফগানিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার কার্যালয়ের মুখপাত্র জাভেদ ফয়সাল বলেছেন, আফগান কর্মকর্তারা এবং তালেবান একটি ভিডিও কনফারেন্সের সময় একমত হয়েছেন যে তালেবান বন্দীদের মুক্তি নিয়ে মুখোমুখি আলোচনার জন্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীর একটি বিশেষজ্ঞ দলকে কাবুলে প্রেরণ করা উচিত।
উনিশ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক অভিযানে তালেবানকে দেশের ক্ষমতা থেকে উৎখাত করার পর এই প্রথম তালেবান বিদ্রোহীরা আফগানিস্তানের রাজধানীতে গেল। তালেবান প্রতিনিধিরা দক্ষিণাঞ্চলের কান্দাহার প্রদেশ থেকে আফগানিস্তানের মধ্যাঞ্চলের একটি শহরে যান এবং আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটি একটি বিমানে করে তাদেরকে কাবুলে নিয়ে যায়।
গত ২৯ ফেব্রুয়ারি কাতারে তালেবানের সাথে যুক্তরাষ্ট্র যে চুক্তি সই করে তাতে এই শান্তি প্রতিষ্ঠার রূপরেখা দেয়া আছে। এর লক্ষ্যই হচ্ছে আলোচনার মাধ্যমে বহু বছর ধরে চলে আসা এই আফগান যুদ্ধের অবসান ঘটানো। ওই চুক্তিতে পর্যায়ক্রমে যুক্তরাষ্ট্র এবং মিত্রবাহিনীর সৈন্য প্রত্যাহারের প্রতিশ্রুতি রয়েছে যার বিনিময়ে তালেবান আফগানিস্তানকে সন্ত্রাসবাদীদের অভয়াশ্রয় হিসেবে ব্যবহার করবে না।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও গত মঙ্গলবার এই অগ্রগতিকে সুসংবাদ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি কাবুলে দেশটির সরকারের প্রধান দুই দাবিদার আশরাফ গনি ও আবদুল্লাহ আবদুল্লাহের সাথে এবং কাতারের রাজধানী দোহায় তালেবান প্রতিনিধিদের সাথে সাক্ষাৎ করার এক সপ্তাহ পর বন্দিবিনিময়ের প্রক্রিয়া শুরু হলো। ওই সফরে পম্পেও সব পক্ষকে শান্তি প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তবে গনি ও আবদুল্লাহের মধ্যে সমঝোতা স্থাপনে ব্যর্থ হন।
তালেবান এক মুখপাত্র গতকাল বুধবার বলেছেন, কমপক্ষে ১০০ জন বন্দী তালেবান যোদ্ধাকে শিগগিরই মুক্তি দেয়া হবে। এটি আফগান সরকার এবং বিদ্রোহী গোষ্ঠীর হাতে আটক ছয় হাজার বন্দীদের চূড়ান্ত বিনিময়ের প্রথম পদক্ষেপ।
তালেবান মুখপাত্র জবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেন, প্রথম ধাপে ১০০ বন্দীকে মুক্তি দেয়া হবে, তারপরে উভয়পক্ষই নির্ধারণ করবে যে প্রতিদিন ১০০ জনকে মুক্তি দেয়ার বিষয়টি ঠিকভাবে এগোচ্ছে কি না। যাদের মুক্তি দেয়া হবে তাদের মেডিক্যাল চেকআপের বিষয়টি নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে, কেননা করোনাভাইরাসের মহামারী বিষয়টিকে আরো চ্যালেঞ্জিং করে তুলেছে, বলেন মুজাহিদ। উল্লেখ্য, আলোচনা এবং লকডাউন সত্ত্বেও আফগানিস্তানে সহিংসতা খুব একটা কমেনি।
এর আগে মার্কিন-তালেবান চুক্তি অনুযায়ী পাঁচ হাজার তালেবান বন্দীকে ছেড়ে দেয়ার কথা থাকলেও চুক্তি স্বাক্ষরের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এ বিষয়ে অস্বীকৃতি জানান আশরাফ গনি। তিনি এক হাজার ৫০০ তালেবান বন্দী ছেড়ে দেয়ার প্রস্তাব করেন, তবে তালেবানরা আর যুদ্ধ করবে না এবং মুক্তিপ্রাপ্তরা পরবর্তীকালে সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে না এ ধরনের প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। কিন্তু তালেবান এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে পাঁচ হাজার বন্দীর মুক্তি দাবি করে। এই বিরোধের ফলে কার্যত চুক্তির বাস্তবায়ন বা তালেবান বন্দীদের মুক্তি পিছিয়ে যায়। কাবুল সরকারের যুক্তি ছিল, তালেবান বন্দীদের তালিকা পর্যালোচনা করতে আরো বেশি সময়ের প্রয়োজন, তাই তাদের মুক্তিতে বিলম্ব হচ্ছে। চুক্তি অনুযায়ী ১৪ মাসের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সব বিদেশী সেনাকে সরে যাওয়ার কথা বলা হয়। বিনিময়ে তালেবান এই প্রতিশ্রুতি দেয় যে, তারা মার্কিনবিরোধী সশস্ত্র গ্রুপ আল-কায়েদা কিংবা আইএসকে কোনো আশ্রয়-প্রশ্রয় দেবে না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা