২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

এক মাসে ১৪৪টি স্বাভাবিক প্রসবে রেকর্ড ইসলামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে

- ছবি : নয়া দিগন্ত

জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা নানা সমস্যার মধ্যেও মাতৃ-শিশু সেবায় যমুনা-ব্রহ্মপুত্র পাড়ের অসহায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে যেন আশার আলো দেখিয়েছে। সন্তান প্রসবে সিজার (অপারেশন) যখন এক প্রকার ব্যবসায় পরিণত করেছে বেসরকারি হাসপাতালগুলো। ঠিক ওই সময় হাসপাতালটি এক মাসে ১৪৪টি স্বাভাবিক প্রসব (নরমাল ডেলিভারি) করে ঈর্ষনীয় সাফল্যের রেকর্ড সৃষ্টি করেছে।

সেবা গ্রহীতা উপজেলার গাইবান্ধা ইউনিয়নের নাপিতের চর গ্রামের প্রসূতি মমতা বেগমের বড় ভাই আবির বলেন, ‘ক্লিনিকে সিজার অপারেশন বাদ দিয়ে সরকারি হাসপাতালে এনে নরমাল ডেলিভারি করানোয় আমরা খুশি।’

এছাড়াও সাপধরী থেকে শান্ত তার বোন সাবিনাকে এনেছিলেন ঘোড়ার গাড়ি ও নৌকায় করে। তিনি বলেন, ‘নরমাল ডেলিভারি হওয়াতে আমাদের অনেক টাকা ব্যয় কম হয়েছে। এতে অনেক উপকার হয়েছে।’

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, এই হাসপাতালে ৩৪ জন ডাক্তারের পদ আছে। তার মধ্যে পাঁচজন সার্জারি ডাক্তারের পদ দীর্ঘ দিন ধরে শূন্য রয়েছে। খাতা-কলমে ২৯ জন কর্মরত থাকলেও আরো দু’জন পেনশনে আছেন অন্য হাসপাতালে।

এদিকে, যমুনা-ব্রহ্মপুত্র নদ-নদী বিধৌত নদী ভাঙন ও বন্যাকবলিত ইসলামপুর উপজেলার প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের চিকিৎসার একমাত্র ভরসা এই হাসপাতালটি।

সূত্রে আরো জানা যায়, ২০০২ সালে ৩১ শয্যার হাসপাতালকে ৫০ শয্যায় উন্নতি করা হয়। বাড়ানো হয় ডাক্তার, নার্সসহ বিভিন্ন কর্মচারীর পদ। সম্প্রসারণ করা হয় অবকাঠামোগত উন্নয়ন। ২০১১ সালে দিকে সম্প্রসারিত অবকাঠামোর যাত্রা শুরু হয়। চালু করা হয় অপারেশন থিয়েটার। কিন্তু কনসালটেন্ট এবং অ্যানেস্থিসিয়া ডাক্তার না থাকায় দীর্ঘ সময় ধরে বন্ধ রয়েছে অপারেশন থিয়েটার। এই হাসপাতালে উপজেলার ১২ ইউনিয়ন, পৌরসভা এবং পাশের মেলান্দহ ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার দু’টি ইউনিয়নের রোগীরা চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। প্রতিদিন জরুরি ও বহির্বিভাগে গড়ে দেড় থেকে ২ হাজার রোগী চিকিৎসা নেন এখানে। অপারেশন থিয়েটার বন্ধ থাকায় অপারেশন থিয়েটারের কার্যক্রম দীর্ঘ সময় বন্ধ রয়েছে।

উল্লেখ্য, স্বাভাবিক সন্তান প্রসব নীতি বাস্তবায়নে ব্যাপক সফলতা লাভ করেছে ৫০ শয্যার ইসলামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এক মাসে ১৪৪টি স্বাভাবিক প্রসব (নরমাল ডেলিভারি) করানোয় ময়মনসিংহ বিভাগে অনন্য রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। ২০২৩ সালে এই হাসপাতালে এক হাজার ৩৯৮টি প্রসূতি মায়ের সফল নরমাল ডেলিভারি করানো হয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এ.এ.এম আবু তাহের বলেন, ‘প্রসূতি মা’দের সিজার বিমুখ করতে সরকারের নির্দেশনার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে এ হাসপাতালের ডাক্তার, নার্সসহ সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর আন্তরিকতায় স্বাভাবিক মাতৃ প্রসবের উপর জোর দেয়া হয়।

তিনি আরো বলেন, সকলে আন্তরিক চেষ্টায় ২০২৩ সালে ময়মনসিংহ বিভাগের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পর্যায়ে ইসলামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স দ্বিতীয় হয়েছে। আমি মনে করি, নানা সমস্যার মধ্যেও নরমাল ডেলিভারিতে আমরা সফল হয়েছি। এতে যমুনা-ব্রহ্মপুত্র নদী ভাঙন ও বন্যা কবলিত অঞ্চলের অসহায় দরিদ্র মানুষরা উপকৃত হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement