৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ইরানি বন্দরবাসী জনগোষ্ঠীর প্রাচীন গান ‘জামাল কুদু’র ইতিহাস

ইরানি বন্দরবাসী জনগোষ্ঠীর প্রাচীন গান ‘জামাল কুদু’র ইতিহাস - ছবি : সংগৃহীত

এই মুহূর্তে দাবানলের আকার নিয়েছে ‘অ্যানিম্যাল’ ছবিতে ব্যবহৃত একটি গান ‘জামাল জামালু’। ‘জামাল কুদু’ নামে সার্চ দিলেও মিলছে এই গানের ঠিকানা। নেটাগরিকদের একটা ব়ড় অংশ নেমেছেন এই গানের উৎস সন্ধানে। পাশাপাশি চলেছে গানের কলির অর্থ জানার অভিযান।

‘অ্যানিম্যাল’-এ গানটি ব্যবহৃত হয়েছে ছবির খলনায়ক আব্রার হকের আবির্ভাব দৃশ্যে। আব্রারের চরিত্রে অভিনয় করে রীতিমতো শোরগোল ফেলে দিয়েছেন ববি দেওল।

ছবিতে দেখা গেছে, একটি বিবাহ অনুষ্ঠানে গানটি গাইছেন একদল যুবতী। তাদের পোশাকে মধ্যপ্রাচ্যের ছোঁয়া। গানের সাথে বাঁশিও বাজাচ্ছেন একটি মেয়ে। আর ক্লোজ শটে নারী-কয়্যারের সদস্যদের হাততালি।

এর মধ্যেই প্রবেশ আব্রার-রূপী ববির। মাথায় সুরাপাত্র রেখে শুরু করলেন গানের তালে নাচ। এই দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপলোডের এমন হিড়িক পড়ে যায় যে, ছবির প্রযোজক সংস্থা সিদ্ধান্ত নেয় ছবিতে ববির কিছু ক্লিপিং-সহ গানটিকে আলাদা করে আপলোড করার। কারণ, ছবির টিজার বা ট্রেলারে গানটির কোনো ঝলক দেখা যায়নি। খানিকটা গণদাবি মেনেই গানটিকে আপলোড করেন প্রযোজনা সংস্থার কর্তৃপক্ষ।

এখন প্রশ্ন, এই গান কোথাকার? কারাই বা গেয়েছেন গানটি? ছবির সঙ্গীত পরিচালক হর্ষবর্ধন রামেশ্বর। ছবির অন্যান্য গান ‘অরিজিন্যাল’ সাউন্ডট্র্যাকে থাকলেও, সেই তালিকায় ‘জামাল কুদু’ নেই। কারণ, এই গানটি হর্ষবর্ধনের নিজের কম্পোজিশন নয়। এটির উৎস সম্পূর্ণ ভিনদেশী।

‘জামাল কুদু’ বা ‘জামাল জামালু’ গানটি ইরানের। দক্ষিণ ইরানের পারস্য উপসাগরের তীরবর্তী অঞ্চলে এই গানটি নাকি কয়েক শ’ বছর ধরে গাওয়া হয়। সেখানে এটি ‘বন্দরি গান’ হিসেবে পরিচিত। প্রসঙ্গত, বাংলা ‘বন্দর’ শব্দটি এসেছে পারসিক ভাষা থেকেই। সে দিক থেকে দেখলে, ‘জামাল কুদু’ বন্দরবাসী জনগোষ্ঠীর গান।

‘অ্যানিম্যাল’ ছবিতে ‘জামাল কুদু’কে একটি বিয়ের আসরে শোনা যায়। সত্যিই এটি বিয়ের গান। ছবিতে যারা সমবেত কণ্ঠে গানটি গেয়েছেন, তাদের নাম— সৌনিক, হর্ষিতা, কীর্তনা, ভাগদেবী, মেঘনা নাইডু, সাবিনা, ঐশ্বর্যা দাসারি অভীক্ষা এবং শেহনাজ। ইরানের পরম্পরাগত সুরের সাথে ছবির ভার্সনটিতে যুক্ত হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ের রিদম। সব মিলিয়ে এটি হয়ে উঠেছে এক উৎসবের উদযাপন-সঙ্গীত।

‘অ্যানিম্যাল’-এও গানটি ব্যবহৃত হয়েছে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানের আবহেই। এবং পর্দায় যে নারীদের গানটি গাইতে দেখা গিয়েছিল তাদের পোশাক-আশাক ইরানি ধাঁচের। তাদের মধ্যে এক নারীকে বাঁশি বাজাতেও দেখা গেছে। সেই বাঁশির সুরটিও ইরানি পরম্পরাগত সঙ্গীতের।

ফারসি ভাষায় ‘জামাল’ শব্দটির অর্থ ‘সুন্দর’। গানের বাণীতে সেই সুন্দরেরই বন্দনা করা হয়েছে। গানটিতে ব্যবহৃত হয়েছে তার, সন্তুর, ডাফ ইত্যাদির মতো ঐতিহ্যবাহী ইরানি বাদ্যযন্ত্র। এই গানের হারমনি অংশটি যেন চিরমিলনের কথা ভেবেই রচিত।

উৎস যা-ই হোক, এই মুহূর্তে এই গানের আনুষঙ্গিক নানা খুঁটিনাটি নিয়ে ব্যস্ত নেটাগরিকরা। সবার আগে যা নজরে আসছে, তা ববি দেওলের ‘নতুন উপাধি’। নেটমাধ্যম তাকে ‘লর্ড ববি’ বলে সম্বোধন করছে। অনেকের ধারণা, ‘অ্যানিম্যাল’ ছবিতে তার রাজসিক ‘এন্ট্রি’-ই তার এই ‘উপাধি’র কারণ। কিন্তু, গল্পটা মোটেই সে রকম কিছু নয়।

এক্স (সাবেক টুইটার’)-এ ‘ববিউড’ নামে একটি পেজ রয়েছে। সেখানে ববি দেওলকে নিয়ে বিভিন্ন মাত্রার রসিকতা হয়েই থাকে। সেখানেই হিন্দি ছবির একাংশের দর্শকের বক্তব্য, ববি নাকি অধিকাংশ ছবিতেই এমন সব চরিত্রে অভিনয় করেন, যাদের মাথামুন্ডু বোঝা দায়। আর সে সব নিয়ে ববির নিজের কোনো হেলদোল নেই। তিনি অনায়াস ভঙ্গিমায় সেই সব আজগুবি চরিত্রে অভিনয় চালিয়ে যান। এই ‘কিছুতেই কিছু যায়-আসে না’ মানসিকতার কারণেই তাকে ‘লর্ড’ আখ্যা দেয়া হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পাতায় নিয়মিত প্রকাশ পায় ‘লর্ড ববি মিম সিরিজ’। ‘অ্যানিম্যাল’-এ এক নির্বাক চরিত্রে অভনয় করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন ববি। তবে এবার আর ব্যঙ্গ নয়, ‘লর্ড’ উপাধিটি অভিনেতার নামের আগে বসছে বেশ সম্ভ্রমের সাথেই।

‘লর্ড ববি’র পরেই যিনি শিরোনামে উঠে এসেছেন ‘জামাল কুদু’ সূত্রে, তিনি ওই গানের দৃশ্যায়নে উপস্থিত এক সুন্দরী। হাস্যময়ীর চেহারাই বলে দিচ্ছে, তিনি ভারতীয় নন। খোঁজখবর করে জানা যাচ্ছে, তিনি ইরানেরই কন্যা। নাম- তানাজদাভুদি। পেশায় মডেল এবং নৃত্যশিল্পী তানাজ সামান্য কয়েক মুহূর্তের উপস্থিতিতেই নজর কেড়েছেন। আপাতত তাকে নিয়েও উদ্বেল নেটমাধ্যম।

‘জামাল কুদু’ নিয়ে বলিউডে আলোচনা আবার সম্পূর্ণ অন্য এক কারণে। এর আগে এই গান কোনো বলি-ছবিতে ব্যবহৃত হয়নি। কিন্তু বলিউডের এককালের শিহরন জাগানো অভিনেত্রী মুমতাজের সাথে এই গানের এক নিবিড় যোগের কথা জানালেন অভিনেত্রীর ভাগ্নি শেহনাজ রণধাওয়া। জানা গেছে, যে কয়্যার গ্রুপ এই গানটি ছবির জন্য গেয়েছে, তার অন্যতম সদস্য শেহনাজ।

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে শেহনাজ জানিয়েছেন, মুমতাজের মা নাকি এই গানটি গাইতেন। অবশ্যই তার কণ্ঠে যা শোনা যেত, সেটি ‘জামাল কুদু’র পরম্পরাগত সংষ্করণ। ফলে তার কাছে এই গান মোটেই ‘নতুন’ ঠেকেনি।

উল্লেখ্য, মুমতাজের মা শাদি হবিব আগা ইরানেরই ভূমিকন্যা। শাদির কনিষ্ঠা কন্যা মল্লিকা বিয়ে করেন এককালের খ্যাতনামী কুস্তিগির ও অভিনেতা দারা সিংহের ছোট ভাই রণধাওয়াকে। শেহনাজ তাদেরই মেয়ে।

অন্যদিকে আবার এমন কথাও শোনা যাচ্ছে যে, ‘জামাল কুদু’র যে সংস্করণটি ‘অ্যানিম্যাল’-এ গাওয়া হয়েছে, সেটি নাকি আসল গানটি নয়। ইরানের আধুনিক কবি বিজান সামান্দার (১৯৪১-২০১৯) পরম্পরাগত গানটিকে নতুন রূপ দেন। কবি বিজান নামকরা সঙ্গীতজ্ঞও ছিলেন। বিপ্লব পূর্ববর্তী ইরানের সঙ্গীতজগতে তিনি বেশ সক্রিয় গায়ক ও তার (ইরানি বাদ্যযন্ত্র)-বাদকও ছিলেন। আপাতত ‘অ্যানিম্যাল’-এর কল্যাণে বিজানও উঠে এসেছেন আলোচনায়। সূত্র : আনন্দবাজার


আরো সংবাদ



premium cement
কামাল হত্যা : ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে গ্রেফতার ১২ চুক্তি হোক বা না হোক, রাফায় অভিযান চলবে : নেতানিয়াহু সমুদ্রসীমায় ২০ মে থেকে ৬৫ দিন‌ সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ হচ্ছে ২ নতুন মুখ ও নর্টিসহ দক্ষিণ আফ্রিকার বিশ্বকাপ দল ঘোষণা শত কোটি টাকা আত্মসাৎ : বিমানবন্দর থেকে বিশ্বাস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আটক মঠবাড়িয়ায় ইউপি চেয়ারম্যানসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা গাজা যুদ্ধ : জার্মানির বিরুদ্ধে মামলার রায় দেবে আইসিজে হিট স্ট্রোকে ৮ দিনে ১০ জনের মৃত্যু : স্বাস্থ্য অধিদফতর মানিকগঞ্জে আ’ লীগের ২ চেয়ারম্যান প্রার্থীর পাল্টাপাল্টি মানববন্ধন গুচ্ছের ‘এ’ ইউনিটের ফল প্রকাশ হবিগঞ্জে হারুন হত্যা মামলা : ৭ জনের মৃত্যুদণ্ড, ১০ জনের যাবজ্জীবন

সকল